সিরাজগঞ্জ: পবিত্র ওমরাহ পালন করতে সৌদি আরবে গিয়ে নিখোঁজ হওয়া সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলার শ্যামগোপ গ্রামের বৃদ্ধ আব্দুল আজিজ খানের (৭০) সন্ধান ৯ মাসেও পায়নি তার পরিবার।
এদিকে বাবার সন্ধান না পেয়ে এজেন্সি কোম্পানি শিমন ওভারসীজ এক্সপ্রেসের বিরুদ্ধে আব্দুল আজিজ খানের মেজ ছেলে আবুল হাসেম খান ধর্ম মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ দিয়েছেন।
রায়গঞ্জ উপজেলার শ্যামগোপ গ্রামের আব্দুল আজিজ খাঁন একজন কৃষক। তিনি চার ছেলে ও এক মেয়ের জনক। ছেলেরা বিভিন্ন পেশায় প্রতিষ্ঠিত।
আব্দুল আজিজ খানের মেজ ছেলে আবুল হাসেম খান বলেন, যখন ওমরাহে যাওয়ার কথাবার্তা চলছিল তখন বাবাকে নিষেধ করে বলেছিলাম এই মুহূর্তে হজে যেও না। আমরা তোমাকে সঙ্গে করে নিয়ে যাব। কিন্তু তিনি সেটা না শুনে মোয়াল্লেম ইয়াকুবের সঙ্গে পরিচয়ের সূত্রধরে তার মাধ্যমে পাসপোর্ট ভিসা সম্পন্ন করেছে। আদৌ সেগুলো সঠিক কিনা জানি না।
গত বছর রমজান মাসের প্রথম দিনে আমার বড় ভাই আবু রায়হান খান বাবাকে ইয়াকুবের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন এবং তাকে দেখেশুনে রাখতে বলেছেন। এরপর ইয়াকুব তাকে ঢাকায় নিয়ে যায়। আমি এয়ারপোর্টে দেখা করার জন্য ফোন দেই।
ইয়াকুব ফোন ধরে বলেন, এখন আসা যাবে না। বাবাকে ফোন দিতে বলি। বলে উনি ঘুমিয়ে আছেন। পরদিনও বাবার সঙ্গে এয়ারপোর্টে গিয়ে কথা বলতে চাই। সেদিনও নানা অজুহাতে বাবার সঙ্গে কথা বলিয়ে দেননি। এরপর সৌদি পৌঁছার পরও আমাদের ফোন করে জানানো হয়নি।
৪-৫ দিন পর সৌদিতে অবস্থানরত আমাদের গ্রামের হবিবর খানের কাছে বলা হয় বাবা চুল কাটার ঘর থেকে হারিয়ে গেছে। খবর শুনে ইয়াকুবের হোয়াটস অ্যাপ নম্বরে ফোন দিয়ে প্রশ্ন করেছি বাবা কীভাবে হারিয়ে গেল। তিনি জবাব না দিয়ে ফোন কেটে দিয়েছেন। ১৫ দিনের মাথায় দেশে এসে বাবার বেডিংপত্র দিয়ে চলে যান। এরপর ৬ মাস আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেননি। ৬ মাসের মাথায় এসে বলেন ওনার খোঁজ পাইনি।
আবু হাসেম খান আরও বলেন, অক্টোবরের শেষদিকে সৌদি অ্যাম্বাসি থেকে আমাকে ফোন দিয়ে বলে বাবা মারা গেছেন। তার মরদেহ পাহাড়ের উপর থেকে শুটকি হয়ে গেছে। মরদেহ সেখানে দাফনের জন্য তারা একটা স্বাক্ষর দিতে বলে। আমি বললাম মরদেহের ছবি বা ফুটেজ দেন। কিন্তু ছবি বা ফুটেজ তারা দেননি। এ কারণে বারবার ফোন দিলেও আমি সেখানে স্বাক্ষর দিতে যাইনি।
সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার দমদমা গ্রামের আসলাম উদ্দিন নামে এক অ্যাম্বাসি কর্মকর্তা গ্রামে আসলে ডিসেম্বরের ২৪ তারিখে তার বাসায় যাই। তখন তিনি বলেন, এটা আপনার বাবার মরদেহ। তখন চাচার অনুরোধে স্বাক্ষর দেই। পরে নাকি দাফন হয়েছে। আসলাম উদ্দিন স্যারের কথায় ধর্ম মন্ত্রণালয় অভিযোগ দিয়েছিলাম। অভিযোগের ভিত্তিতে ধর্ম মন্ত্রণালয় ২৫ জানুয়ারি পরবর্তীতে ৩০ জানুয়ারি তারিখ দেয়। পরে বলে ইয়াকুব আসেনি। আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি তারিখ।
এদিকে অভিযোগের প্রেক্ষিতে শিমন ওভারসিজ এক্সপ্রেসেকে নোটিশ করেছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। নোটিশে এজেন্সির প্রতিনিধি ইয়াকুবের অবহেলায় আব্দুল আজিজ হারিয়ে গেছেনে বলে উল্লেখ করা হয়। এজেন্সি তাকে খোঁজার কোনো পদক্ষেপ নেননি।
আব্দুল আজিজের সেজ ছেলে আবু হাসান খান বলেন, বাবাকে আমরা বলেছিলাম এখন যাওয়ার দরকার নেই। মোয়াল্লেম ইয়াকুব বললো টাকা দাও, আমি সঙ্গে করে নিয়ে যাবো। আবার সঙ্গে করে নিয়ে আসবো। কিন্তু তিনি হজ থেকে এসে প্রথমে বলেন হারিয়ে গেছে। আমরা ৪-৫ জন থানায় গেলাম, ওসি সাহেব জিডি নিল না। আমরা তদন্ত অফিসারের কাছে গেলাম। তদন্ত অফিসার মোয়াল্লেম ইয়াকুব আলীকে হাজির করলে তিনি ১৫ দিনের সময় নেন। ১৫ দিন পরে এসে বললেন মারা গেছে। আমরা বললাম আমাদের ছবি দেখান, তবেই আমরা নিশ্চিত হবো। কিন্তু ছবিও দেয়নি কোনো তথ্যও দেয়নি।
এ বিষয়ে মোয়াল্লেম ইয়াকুব আলীর হোয়াটস অ্যাপে ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। শিমন ওভারসিজের কর্মকর্তা হারেজ আলীর সঙ্গে যোগাযোগে জন্য ফোন দিলে তিনিও রিসিভ করেননি।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৫০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২, ২০২৪
জেএইচ