ঢাকা: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ত্রুটিপূর্ণ বলেনি দাবি করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, তারা বর্তমান সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক অব্যাহত রাখবে, দুই দেশের স্বার্থই আছে এখানে।
রোববার (৪ ফেব্রুয়ারি) সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এসব কথা বলেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী।
তিনি বলেন, নির্বাচনের পর যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার দুই ধরনের কথা বলেছেন। একটি অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন হয়নি। এটাও বলেছেন, বাংলাদেশের প্রতি অন্যান্য অনেক ক্ষেত্রে সম্পর্ক রাখা আমাদের দায়িত্ব। সেখান থেকে সম্পর্ক রাখি এবং সম্পর্ক রাখার অঙ্গীকার আছে এবং সেটা করে যাব। নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হওয়া নিয়ে তারা আগেও বলেছে। তবে তারা বলেনি, নির্বাচন ত্রুটিপূর্ণ হয়েছে। যে মন্তব্য করলে খারাপ কিছুর আশঙ্কা থাকে।
ওবায়দুল কাদের বলেন, নির্বাচনে কোনো সহিংসতা হয়নি, শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়েছে। এর চেয়ে অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন কী হবে আমরা তা জানি না। বিএনপি নির্বাচনে এলো না, তার মানে কি নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠু হলো না? আমরা গায়ে পড়ে সম্পর্ক খারাপ করব না। সম্পর্কটা থাকুক। এখানে আমেরিকারও স্বার্থ আছে, আমাদেরও আছে।
এর আগে সকালে বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। চীনা রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে আলোচনার বিষয়বস্তু নিয়ে জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বলেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে চীন ভূমিকা নিতে পারে। ১১/১২ লাখের মতো রোহিঙ্গা আছে। এটা বাংলাদেশের জন্য অতিরিক্ত বোঝা। এমনিতেই বিশ্ব সংকট চলছে। রোহিঙ্গাদের জন্য আসা সাহায্যও আগের থেকে অনেক কমে গেছে। এত লোককে খাওয়ানো বাংলাদেশের পক্ষে অনেক বড় বোঝা। মিয়ানমার যেন তাদের নাগরিকদের ফেরত নেয়, সে বিষয়ে চীন ভূমিকা রাখতে পারে।
জবাবে চীনা রাষ্ট্রদূত ইতিবাচক উত্তর দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, তারা চেষ্টা করবেন এবং সহযোগিতা জোরদার করবেন। নির্বাচনে চীন সাপোর্ট করেছে। প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানিয়েছে। পালাক্রমে অন্যান্য মন্ত্রীদের সঙ্গে দেখা করেছেন, যোগ করেন সড়ক পরিবহন মন্ত্রী।
মিয়ানমার সীমান্তে উত্তেজনা নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, বর্তমানে মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ অচলাবস্থা, আরাকান আর্মির সঙ্গে সংঘাত; যার রেশ আমাদের সীমান্তে এসে গেছে। গোলাগুলির আওয়াজ শোনা যায়। জনমনে আতঙ্ক তো ছড়ায়। যুদ্ধটা তাদের অভ্যন্তরীণ। কিন্তু সীমান্তে গোলাগুলির আওয়াজ আমাদের এখানে যখন চলে আসে, স্বাভাবিক কারণে ভয়ভীতিও আসতে পারে। এজন্যে চীনের হস্তক্ষেপ চেয়েছি। ভূ-রাজনৈতিক কৌশলের কারণে এখানে ভারত ও চীনের একটা শক্তি বলয় আছে। ভারত ও চীনের কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট (স্বার্থের দ্বন্দ্ব) আছে। এটা তাদের বিষয়। আমরা আমাদের স্বার্থ নিয়ে আছি, আমরা যেন তাদের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে ক্ষতিগ্রস্ত না হই। মিয়ানমার সীমান্তে আরাকান আর্মির সংঘাতে আমাদের কিছু কিছু ক্ষতি তো হচ্ছে। আকাশসীমা লঙ্ঘন হয়েছে। মিয়ানমারের সঙ্গে চীনের চমৎকার সম্পর্ক। এক্ষেত্রে তারা কিছু করতে পারে কি না বলেছি।
সড়ক পরিবহন মন্ত্রী আরও বলেন, চীনা রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে চীনের অর্থায়নে চলমান মেগা প্রজেক্টগুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বিআরটি প্রকল্প নিয়েও কথা হয়েছে।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর গত ৮ জানুয়ারি বিবৃতি দেয় যুক্তরাষ্ট্র। বিবৃতিতে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার বলেন, যুক্তরাষ্ট্র গণতন্ত্র, শান্তিপূর্ণ সমাবেশের স্বাধীনতা এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতার জন্য বাংলাদেশের জনগণের আকাঙ্ক্ষাকে সমর্থন করে। যুক্তরাষ্ট্র লক্ষ্য করেছে যে, ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে জয় পেয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র ‘বিরোধী দলের হাজার হাজার রাজনৈতিক কর্মীর গ্রেপ্তার এবং নির্বাচনের দিনের অনিয়মের প্রতিবেদন’ নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে বিবৃতিতে বলেছে, অন্যান্য পর্যবেক্ষকদের মতো যুক্তরাষ্ট্রেরও এই মতামত যে, এই নির্বাচন অবাধ বা সুষ্ঠু ছিল না এবং আমরা দুঃখিত যে সব দল নির্বাচনে অংশ নেয়নি।
আরও পড়ুন:
নির্বাচন প্রসঙ্গে যা বলেছে যুক্তরাষ্ট্র
বাংলাদেশ সময়: ১৪৩০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৪, ২০২৪
এসকে/এমজেএফ