ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

ছাত্রলীগ নেতার ধর্ষণকাণ্ডে চতুর্থ দিনেও উত্তাল জাবি 

জাবি করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১০৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৭, ২০২৪
ছাত্রলীগ নেতার ধর্ষণকাণ্ডে চতুর্থ দিনেও উত্তাল জাবি 

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) গৃহবধূকে দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় শাস্তি দাবিতে চতুর্থ দিনে বিক্ষোভ, সমাবেশ ও মানববন্ধনে উত্তাল ছিল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস।  

বুধবার (৭ ফেব্রুয়ারি) সকাল সাড়ে ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার সংলগ্ন সড়কে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েট সিনেট সদস্যরা মানববন্ধন করেন।

পরে দুপুর ১২টায় একই স্থানে শিক্ষক সমিতির ব্যানারে মানববন্ধন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শতাধিক শিক্ষক।

পরে দুপুর ২টায় মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের আবাসিক হল থেকে বের করে গণরুম বিলুপ্ত করে বৈধ শিক্ষার্থীদের আবাসনসহ চার দফা দাবিতে ‘নিপীড়নবিরোধী মঞ্চ’ ব্যানারে বিক্ষোভ করেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। পরে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্রশাসনিক ভবনের সামনে সমাবেশ করেন।  

এরপর বিকেল ৩টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর, মীর মশাররফ হোসেন হল প্রাধ্যক্ষ, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের প্রাধ্যক্ষ ও হল প্রশাসনের বিরুদ্ধে অপরাধীদের পালাতে সাহায্য করার অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত কমিটি গঠন করাসহ ৪ দফা দাবিতে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। বিক্ষোভ শেষে নতুন প্রশাসনিক ভবনের সামনে সমাবেশ করেন তারা।


বিক্ষোভ-সমাবেশ ও মানববন্ধনে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো হলো- ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্ত ও পালাতে সহযোগিতাকারীদের দ্রুত বিচার নিশ্চিত করা, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর, মীর মশাররফ হোসেন হল প্রাধ্যক্ষ, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের প্রাধ্যক্ষ ও হল প্রশাসনের বিরুদ্ধে অপরাধীদের পালাতে সাহায্য করার অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত কমিটি গঠন করা, সব আবাসিক হল থেকে অছাত্রদের বের করা এবং ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা শাখার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া, যৌন নিপীড়নবিরোধী সেল কার্যকর করা, যৌন নিপীড়নে অভিযুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক হেলথ আ্যন্ড ইনফরমেটিক্স বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাহমুদুর রহমান জনির বিচার নিষ্পত্তিসহ সব অপরাধের বিচার দ্রুত নিষ্পত্তি করা।

এদিকে রেজিস্টার্ড গ্রাজুয়েটদের মানববন্ধনে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. শরীফ এনামুল কবির বলেন, ‘আজকে আমরা এখানে হাজির হয়েছি গণরুম ও ধর্ষণের তীব্র নিন্দা জানাতে। ধর্ষণে অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার বা বহিষ্কার নয়, অবিলম্বে ফাঁসিতে ঝোলানো হোক। অছাত্রদের অবিলম্বে হল থেকে বিতাড়িত করা হোক। বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৩টি হলে ১৬ হাজার আসন রয়েছে। ১৬ হাজার আসন থাকা স্বত্বেও কেন শিক্ষার্থীরা আসন পায় না? কেন তাদের গণরুমে থাকতে হয়? উপচার্যকে আমরা বলতে চাই, আপনি ৪ তারিখে সিন্ডিকেট সভায় সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ৫ কর্মদিবসের মধ্যে অছাত্রদের হল থেকে বিতাড়িত করবেন। ৫ কর্মদিবস মানেই ৫ কর্মদিবস। এর মধ্যেই আমরা গণরুম মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় চাই।  

শিক্ষকদের মানববন্ধনে ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক পারভীন জলি বলেন, ‘আমরা ধর্ষক মোস্তাফিজুর রহমানের বিচার যেমন চাই, তেমনই এই বিশ্ববিদ্যালয়ে যেন এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনা আর না ঘটে তার একটি প্রস্তুতি আমরা দেখতে চাই। রাষ্ট্রীয় আইনে ধর্ষক মোস্তাফিজুরের সর্বোচ্চ শাস্তি চাই। পাশাপাশি মোস্তাফিজুরকে পালাতে যারা সাহায্য করেছিল তাদের ছাত্রত্ব বাতিল করা চাই। যদি ধর্ষককে পালিয়ে যেতে হলের প্রাধ্যক্ষ ও প্রক্টর সহায়তা করে থাকে তবে তদন্ত সাপেক্ষে তাদের বিচারও আমরা চাই। আমাদের উদ্দেশ্য যেন না হয় একটি মানববন্ধন করা। উদ্দেশ্য হতে হবে ধর্ষকদের বিচার কার্যকর না হওয়া পর্যন্ত জাগ্রত থাকা।

উল্লেখ্য, গত শনিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে ৯টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলে স্বামীকে আটকে রেখে এক গৃহবধূকে হল-সংলগ্ন জঙ্গলে নিয়ে দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় অভিযুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মোস্তাফিজুর রহমানসহ অভিযুক্তকে পালানোর সহায়তার অভিযোগে চারজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।  

বাংলাদেশ সময়: ২১০৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৭, ২০২৪
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।