ময়মনসিংহ: ময়মনসিংহ নগরীর জয়নুল আবেদীন পার্ক সংলগ্ন ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে হাত-পা বেঁধে ফেলে রাখা যুবক খুনের রহস্য উদ্ঘাটন করেছে জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। এ ঘটনায় সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ফারুক হোসেন বাংলানিউজকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, গত ৯ ফেব্রুয়ারি সকালে পার্ক সংলগ্ন ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় এক অজ্ঞাত যুবকের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পরে ঘটনার তদন্তে জানা যায় নিহত যুবকের নাম হাসেম মিয়া (২৯)। তিনি সদর উপজেলার দাপুনিয়া গ্রামের মৃত জহুর উদ্দিনের ছেলে। পেশায় সে যাত্রীবাহী মিশুক রিকশাচালক। এ ঘটনায় ওইদিনই নিহতের ভাই বাদী হয়ে কোতোয়ালি মডেল থানায় অজ্ঞাতদের আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। পরে চাঞ্চল্যকর এই মামলাটি তদন্তে নেমে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় এবং নগরীর সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করে এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তার আসামিরা হলেন- তারাকান্দার বাসিন্দা আলমগীর (২০), রাকিবুল হাসান তপু (৩০), রাকিব হাসান ওরফে রাকিবুল ইসলাম (২১), টাঙ্গাইল কালিহাতী উপজেলার রামপুর গ্রামের আরাফাত হোসেন বাবু (২৭)। তারা সরাসরি এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। পরে তাদের দেওয়া তথ্যমতে ছিনতাই করা মিশুক রিকশা ক্রয়-বিক্রয়ে জড়িত আরও তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারা হলেন- মো. ফরহাদ (৩১), সুমন শেখ (৩৫) এবং আলম (৪০)।
ওসি মো. ফারুক হোসেন আরও জানান, গত ৮ ফেব্রুয়ারি রাত ৯টার দিকে নগরীর স্মৃতিসৌধের মাঠে বসে একটি অটোরিকশা ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা করে আসামি আলমগীর, রাকিবুল হাসান তপু, রাকিবুল, আরাফাত হোসেন বাবু ও পলাতক অপর একজন। পরে পরিকল্পনামতে রাত ১২টার সময় তারা পাটগুদাম ব্রিজ মোড় থেকে নিহত হাসেম মিয়ার মিশুক রিকশা ভাড়া করে সার্কিট হাউজ মাঠে নিয়ে যায়। সেখানে তারা দাঁড়িয়ে কথা বলার একপর্যায়ে মিশুক চালক হাসেম মিয়াকে এলোপাথাড়ি মারপিট করে বেড়িবাঁধের নিচে নদীর তীরে নিয়ে যায়। এ সময় কোমরে বেল্ট দিয়ে আসামি রবিন নিহতের পা এবং গায়ের গেঞ্জি দিয়ে আরাফাত হোসেন বাবু নিহতের হাত বেঁধে ফেলেন। এ সময় নিহত হাসেম মিয়ার ডাকচিৎকারের চেষ্টা করলে আসামি আরাফাত হোসেন বাবু হাসেমের গায়ে পরিহিত চাদর দিয়ে তার মুখ বেঁধে সবাই মিলে তাকে মাটিতে ফেলে চেপে ধরে রাখে। এরপর আসামি রবিন চালক হাসেম মিয়ার বুকে ও পেটে একাধিক ছুরিকাঘাত করে মিশুক রিকশাটি নিয়ে চলে যায়। পরে ওইদিন রাতেই তারা পাটগুদাম ব্রিজ মোড়ে গিয়ে আসামি আলমের কাছে ৩৪ হাজার টাকায় মিশুক রিকশাটি বিক্রি করে খুনিরা টাকা ভাগাভাগি করে নিয়ে যায়।
এদিকে গ্রেপ্তার হওয়া আসামি আলমগীরের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা, রাকিবুল হাসান তপুর বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা, রাকিব হাসান ওরফে রাকিবুল ইসলামের বিরুদ্ধে একটি চুরি এবং আরাফাত হোসেন বাবুর বিরুদ্ধে একটি হত্যা ও একটি চুরি মামলা রয়েছে।
এদের মধ্যে আসামি রাকিবুল ইসলাম তপু নগরীর ময়মনসিংহ মেডিকেলের সামনে খুন হওয়া শরিফ হত্যা মামলার এজাহারনামীয় আসামি। তিনি ওই মামলায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়ে ১৯ মাস কারাভোগ করে বিগত দুই মাস আগে জামিনে কারামুক্ত হয় বলেও জানান ডিবি পুলিশের এ কর্মকর্তা।
বাংলাদেশ সময়: ২০৪৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০২৪
এসএম