ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৯ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

অবশেষে ভারতীয় বন বিভাগের সহায়তায় নিজ দেশে ফিরল দুই হাতি

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১২৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০২৪
অবশেষে ভারতীয় বন বিভাগের সহায়তায় নিজ দেশে ফিরল দুই হাতি

পঞ্চগড়: গত তিন দিন ধরে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার বেশ কয়েকটি সীমান্ত এলাকায় আতঙ্ক ছড়ায় ভারতীয় বন্য হাতির। এতে করে নির্ঘুম রাত কাটিয়েছে সীমান্তে বসবাসকারী সাধারণ মানুষ।

অবশেষ অবসান ঘটলো সেই হাতি আতঙ্কের।

তিন দিনের মাথায় উভয় দেশের প্রশাসন, বন বিভাগ, পুলিশ, সীমান্তরক্ষী বাহিনীর যৌথ প্রচেষ্ঠায় ভারতীয় হাতির সাহায্যে হাতি দুটিকে ঘুমের ইনজেকশনে ট্র্যাংকুলাইজ করে ভারতীয় লরিতে উঠিয়ে নিয়ে যেতে সমর্থ হয়েছে ভারতীয় বন বিভাগ।

শুক্রবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার তিরনইহাট ইউনিয়নের উত্তর কাশিমগঞ্জ ও ভারতের ফাঁসিদেওয়া সীমান্ত দিয়ে হাতি দুটিকে ভারতে নেওয়া হয়।  

এর আগে মঙ্গলবার (২০ ফেব্রুয়ারি) ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশের লোকালয়ে চলে আসে বন্য হাতি দুটি। এর পর থেকে সীমান্ত এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

জানা গেছে, হাতি দুটি ভারত থেকে এসে তেঁতুলিয়া হয়ে সীমান্তের নোম্যানস ল্যান্ডের আশেপাশে ঘোরাফেরা করছিল।  

তেঁতুলিয়া উপজেলা প্রশাসন জানান, গত তিন দিনের মধ্যে প্রথম দিন একজনের প্রাণহানি ও ফসলের কিছু ক্ষয়ক্ষতি হলেও দুদিনে কোনো ক্ষয়-ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি। সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে গত তিন দিনে নির্ঘুম রাত যাপন করতে হয়েছে সবাইকে। এদিকে বৃহস্পতিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) দিনভর তেঁতুলিয়া সদর ইউনিয়নের তেলিপাড়া গ্রামের সীমান্তে ২০০ গজ দূরে ভারতের হাফতিয়াগছ বিএসএফ ক্যাম্প সংলগ্ন ভারতীয় ফরেস্টের জিরো সীমানায় অবস্থান করে হাতি দুটি। এতে রাতভর স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করতে দেখা যায়। তবে ভোর রাতে আবারও সীমান্ত এলাকার মহানন্দা নদীর পাশ দিয়ে উত্তর কাশিমগঞ্জ ও ফাঁসিদেওয়া সীমান্ত পৌঁছায় হাতি দুটি।  

এদিকে হাতি কাণ্ডের পরিস্থিতি নিয়ে তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফজলে রাব্বি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেছেন, ‘তেঁতুলিয়ায় হাতি অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি অবশেষে। ভারতীয় বন বিভাগ ট্র্যাংকুলাইজ করে হাতি দুটোকে লরিতে উঠিয়ে নিয়ে যেতে সমর্থ হয়েছে। উভয় দেশের প্রশাসন, বন বিভাগ, পুলিশ, সীমান্তরক্ষী বাহিনীর যৌথ প্রচেষ্ঠায় ক্ষয়ক্ষতি যতটুকু সম্ভব সর্বনিম্ন পর্যায়ে ছিল। হাতি দুটো পূর্ব (ভারত) থেকে এসে তেঁতুলিয়া হয়ে গত তিন দিন ধরে সীমান্তে ‘নোম্যানস ল্যান্ডে’র আশেপাশে ঘোরাফেরা করেছে। এ সময়টা আমরা হাতির পেছনে নির্ঘুম ছুটেছি।

মায়ের সঙ্গে বাচ্চার খুনশুটি পৃথিবীর সব থেকে সুন্দরতম দৃশ্য। আমি সংবাদ পেয়ে প্রথমবার গত মঙ্গলবার সকালে গিয়েছিলাম, তখন দেখি হাতি দুটো ভুট্টা খেতে আয়েশি ভঙ্গিতে নিজেদের মতো ছিল। চারপাশে উৎসুক জনতার ভিড়। অন্য কারো দিকে বিন্দুমাত্র ভ্রূক্ষেপ নেই হাতি দুটোর। বন বিভাগের হাতি এক্সপার্ট টিম আমাকে জানালো, ‘স্যার, ওরা মা-সন্তান’।  

আজ যখন ক্রেনে করে অজ্ঞান হাতি দুটিকে লরিতে তোলা হচ্ছিল, কেমন যেন বিষাদে মন খারাপ হয়ে যাচ্ছিল আমার। ঠিক এমনই মন খারাপ হয়েছিল আমার, যখন আহত নুরুজ্জামান (২৩) মারা গেল প্রায় চোখের সামনেই।  

এ বিষয়ে কথা হয় তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফজলে রাব্বির সাথে। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, হাতি দুটি নিজ দেশে ঘোরাফেরা করতে করতে সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশ চলে আসে। গত তিন দিনে বিভিন্ন এলাকা ঘুরেছে এই দুই হাতি, একই সঙ্গে আতঙ্ক ছড়িয়েছিল এলাকাগুলোতে। আমরা সার্বক্ষণিক মানুষকে সচেতন ও নিরাপদ দূরত্ব থাকার আহ্বান জানিয়েছে। অবশেষে ভারতীয় বনবিভাগ হাতি দুটিকে ট্র্যাংকুলাইজ করে লরিতে উঠিয়ে নিয়ে যেতে সমর্থ হয়েছে। আর আমাদের সীমান্ত এলাকায় হাতির আতঙ্ক নেই। তবে কিছু ফসলের ক্ষয়ক্ষতি ও একজনের প্রাণহানি হয়েছে।

আরও পড়ুন: সীমান্তে হাতি আতঙ্কে মশাল নিয়ে রাত পাহারায় গ্রামবাসী!

বাংলাদেশ সময়: ২০৪৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০২৪
এসএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।