ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

বাতাসে বিষাদ, এক আগুনে কত স্বপ্নের মৃত্যু!

মাহমুদুল হাসান বাপ্পি, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৩৮ ঘণ্টা, মার্চ ১, ২০২৪
বাতাসে বিষাদ, এক আগুনে কত স্বপ্নের মৃত্যু! আগুনে নিহতদের স্বজনদের আহাজারি। ছবি: শাকিল আহমেদ

ঢাকা: মোবারক হোসেনের কদিন পরই চলে যাওয়ার কথা ইতালিতে। বহুদিন ধরেই তার ঠিকানা ভিনদেশ।

এক মেয়ে এসএসসি দিচ্ছে, তার সঙ্গে আরও দুই সন্তান ও স্ত্রীরও স্বপ্নের গন্তব্য ইতালি। দেশ ছাড়ার আগে পরিবারের সবাইকে নিয়ে রেস্তোরাঁয় খেতে গিয়েছিলেন মোবারক। এখন তাদের সবার ঠিকানা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার একই কবরস্থানে।  

বেইলি রোডে প্রেমের কবিতা কিংবা গিটারের টুংটাং শব্দ শোনা যায় প্রায়ই। বলা হয় বেঁচে থাকার কারণও। এখন বেইলি রোডে বিষাদের করুণ সুর, স্বজন হারানোদের আর্তনাদে বাতাস ভারী। এখন বেইলি রোডে শূন্যতার শোকসভা। বহুবারের মতো আরও একবার, আগুন অঙ্গার করেছে বহু স্বপ্ন।  

বুয়েটে পড়া লামিসা আক্তারই যেমন। তার বাবা পুলিশের ডিআইজি মো. নাসিরুল ইসলাম। বছর ছয়েক আগে যখন স্ত্রী হারান, তখনও তার স্বপ্নের পুরোটাজুড়ে দুই মেয়ে। তারা এখন বড় হয়েছেন, বুয়েটে পড়ছেন; অবসরের পর বাবার দেখভাল করতে পারবেন ওই স্বপ্নই হয়তো দেখছিলেন নাসিরুল। তার এক সহকর্মীর আর্তনাদে সম্ভবত মিশে থাকে দীর্ঘশ্বাস, ‘জীবন এত ছোট কেন, এ ভুবনে?’

বেইলি রোডের রেস্তোরাঁয় যখন আগুন লাগে, কিছুক্ষণ পরই ভেঙে পড়ে সামনের কাচ। আতঙ্ক, অনিশ্চয়তা আর মৃত্যুর শঙ্কা ঘিরে ধরে সবাইকে। জীবন বাঁচানোর ওই কঠিন মুহূর্তে সবাইকে নিরাপদে নিয়ে আসেন রেস্টুরেন্টের ক্যাশিয়ার ও এক ওয়েটার।  

অথচ অনিশ্চয়তার জীবনটা বাঁচাতে পারেননি তারা নিজেরাই। ওই ঘটনা বলে আরও এক স্বপ্নের মৃত্যুর কথা শোনাচ্ছিলেন তাদের সহকর্মী আলতাফ, কোনোরকমে রান্নাঘরে গিয়ে পরে জানালা ভেঙে লাফিয়ে বেঁচেছেন যিনি। স্বপ্ন শেষ হয়ে গেছে দুই মা-মেয়ের। তারা হলেন ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রভাতী শাখার শিক্ষক লুৎফুন নাহার করিম ও তার মেয়ে জান্নাতিন তাজরী।

আরেক মায়ের গল্পটা আরও করুণ। নাজিয়ার আট বছরের ছেলে আয়াত ও ছয় বছরের আয়ান সন্ধ্যা থেকেই কান্না শুরু করে। কিছুতেই তাদের থামাতে পারছিলেন না নাজিয়া। ব্যবসায়ী স্বামী আশিককে ফোন করার পর রেস্তোরাঁয় খেতে যেতে বলেছিলেন তিনি। পরের ঘটনা ও পরিণতি অনুমান করতে কষ্ট হওয়ার কথা নয় খুব একটা।  

তাদের পরিণতি তো তাও জানা গেছে। নাজমুল ইসলামের বাবা নজরুল ইসলাম তার ছেলে কোথায় আছেন, আদৌ বেঁচে আছেন কি না; জানেন না তাও। চার বন্ধু নিয়ে রেস্টুরেন্টে খেতে আসা নাজমুলের দুই বন্ধু লাফিয়ে বেঁচে যান। আগুনে দগ্ধ আরেক বন্ধু চিকিৎসাধীন। নাজমুল কোথায়? ওই উত্তরই খুঁজে বেড়াচ্ছেন তার বাবা।  

চড়ুইহাট্টা, তাজরীন গার্মেন্টস, বরিশালের লঞ্চ...আঁধারে আগুনে আলোকিত হয় চারপাশ। পুরে অঙ্গার হয় বহু শরীর। একই সঙ্গে শেষ হয় অনেক স্বপ্ন, জমা হয় অনেক প্রশ্নও।  

মোবারকের ফ্লাইটের যাত্রী কি খুঁজে ফিরবেন কেন তার পাশের সিটটা খালি? নাজমুলের বাবা, ছেলের বন্ধ ফোনে কি কখনো কল ঢোকার অপার্থিব শান্তিটুকু পাবেন কোনো অলৌকিকতায়? অথবা লামিসার বাবা, তিনি কি সারাটা জীবনই ‘জীবন কোন ছোট, এ ভুবনে’ এই উত্তর খুঁজতে খুঁজতেই হারিয়ে যাবেন কোথাও? প্রশ্ন আছে, উত্তর আরও এক আগুন অবধি কিংবা কখনোই মিলবে না!

বাংলাদেশ সময়: ১২৫২ ঘণ্টা, মার্চ ১, ২০২৪
এমএইচবি/আরএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।