বরিশাল: বরিশাল-ভোলা মহাসড়কের টুঙ্গিবাড়িয়া এলাকায় একটি বেইলি ব্রিজ ভেঙে লোহার কুচি ভর্তি ট্রাক খালে পড়েছে। এ ঘটনায় কেউ হতাহত হয়নি।
বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রহমান মুকুল রোববার (৩ মার্চ) এ তথ্য নিশ্চিত করেন। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, গত রাত আড়াইটার দিকে বেইলি ব্রিজটি ভেঙে পড়ে। এ সময় ব্রিজের ওপর থাকা বরিশাল থেকে ভোলামুখী একটি ট্রাক খালে উল্টে পড়ে যায়। এতে ট্রাকের ভেতরে থাকা চালক ও হেলপার আহত হন। তবে কারও অবস্থা গুরুতর নয়।
তিনি বলেন, ঘটনার পর সকালে সড়ক ও জনপথ বিভাগের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে আসেন। তারা ব্রিজটি মেরামতের পাশাপাশি বিকল্পভাবে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা সচল করার চেষ্টা চালাচ্ছেন। আর সেটি না হওয়া পর্যন্ত বরিশাল-ভোলা রুটে যান চলাচল বন্ধ থাকবে। রাত আড়াইটা থেকে এ পর্যন্ত সড়কের দুই পাশে যানবাহনগুলো স্থির অবস্থায় রয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, যান চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সড়কের উভয় প্রান্তে প্রায় এক কিলোমিটারজুড়ে সৃষ্টি হয়েছে যানজট। ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। ব্রিজটি ভেঙে যাওয়ার কারণে পণ্য ও যাত্রীবাহী বাস চলাচল বন্ধ হয়েছে। মানুষকে পায়ে হেঁটে বিকল্প পথে খালটি পার হয়ে গন্তব্যে যেতে হচ্ছে।
দুর্ঘটনাকবলিত ট্রাকচালক মো. জাকির জানান, বেনাপোল থেকে বরিশাল-ভোলা হয়ে চট্টগ্রাম যাওয়ার কথা ছিল ট্রাকটির। কিন্তু শনিবার মধ্যরাত সোয়া ২টার দিকে বরিশাল ভোলা মহাসড়কের টুঙ্গিবাড়িয়ার স্লুইস গেট এলাকার বেইলি ব্রিজটি ভেঙে পড়ে। আর ওইসময় রড তৈরির কাঁচামালের লোহার কুঁচি ভর্তি ট্রাকটি নিয়ে ওই ব্রিজটি পারাপার হচ্ছিলেন তারা। ব্রিজটি ভেঙে পড়ায় ট্রাকটি উল্টে খালে পড়ে যায়। স্থানীয় তাদের উদ্ধার করায় তারা অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচেছেন।
জাকির অভিযোগ করেন, বেইলি ব্রিজ ঝুঁকিপূর্ণ কিংবা কতটুকু পণ্য নিয়ে পার হওয়া যায় সে ধরনের কোনো সতর্কতা বার্তা নেই। এমনকি ঠিকাদার ও সড়ক বিভাগের কেউ ছিলেন না। তারা যদি নিষেধ করতো তাহলে ব্রিজ পার হওয়ার সময় সতর্কতা অবলম্বন করা হতো। কিন্তু নিজেদের দোষ ঢাকতে এখন উল্টো আমাদের বিরুদ্ধে মামলা করার হুমকি দিচ্ছেন।
টুঙ্গিবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য অমর দেবনাথ জানান, বরিশাল-ভোলা-চট্টগাম মহাসড়কের সদর উপজেলার টুঙ্গিবাড়িয়া ইউপির মেমানিয়া খালের ওপর বক্স কালভার্ট নির্মাণ করা হচ্ছে। এ সড়ক দিয়ে যানবাহন চলাচলের জন্য পাশে একটি বেইলি ব্রিজ নির্মাণ করে দেওয়া হয়। এটি ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। কোনো পণ্যবাহী যান পার হওয়ার সময় এটির মাঝখানে দেবে যেত। বিষয়টি সড়ক ও জনপথ বিভাগকে এক সপ্তাহ আগে জানিয়ে মেরামতের কথা বলা হয়। তারা কথা শোনেনি।
টুঙ্গিবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নাদিরা রহমান বলেন, এ পথ দিয়ে অল্প সময়ে সড়ক পথে ভোলা, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রামে যাতায়াত করা যায়। দুর্ঘটনার পর থেকে বরিশাল-ভোলা মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, যেনতেনভাবে মাত্র এক মাস আগে ব্রিজটি তৈরি করে রেখেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। গত বেশকিছু দিন ধরে একাধিকবার বলা হলেও ব্রিজ মেরামতে উদ্যোগ নেওয়া হয়নি বলে ক্ষোভ রয়েছে তাদের। একই কথা জানিয়েছেন এ রুটে চলাচলকারী ট্রাক, বাস ও ট্যাংক লরির চালক হেলপাররা। তাদের দাবি সেতুটি দিয়ে কি পরিমাণ ওজনের যানবাহন চলাচল করতে পারবে তারও নির্দেশনা দেওয়া ছিল না।
ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে সড়ক ও জনপথ বিভাগ বরিশালের নির্বাহী প্রকৌশলী মাসুদ মাহমুদ সুমন দাবি করেছেন, ২০ টন ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন বেইলি ব্রিজটিতে অতিরিক্ত পণ্য ওঠাতেই দুর্ঘটনাটি ঘটেছে। দ্রুত সমাধানের চেষ্টা চলছে বলে দাবি তাদের।
এদিকে সড়কটিতে যানবাহন চলাচলের ব্যবস্থা দ্রুত করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন সড়ক ও জনপথ বিভাগ বরিশাল অঞ্চলের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী এ কে এম আজাদ রহমান।
এদিকে ঘটনার পর সড়ক ও জনপথ বিভাগের কর্মকর্তারা পরিদর্শনের গিয়ে ঘটনাস্থলে জনগণের রোষানলে পড়েন। দায়সারা ভাবে বেইলি ব্রিজ করা ও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ার পর মেরামত না করার কারণে দুর্ঘটনা ঘটায় সড়ক বিভাগকে দায়ী করেন বিক্ষুব্ধরা। তাদের প্রতিবাদের পরপরই ব্রিজ মেরামতের উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু সময় বেশি লাগায় অস্থায়ী বিকল্প কিছু করার কথা বলছেন সংশ্লিষ্টরা।
ব্রিজটি সংস্কারের কাজে নিয়োজিতরা বলছেন, অন্তত দুদিন সময় লাগবে ব্রিজটি ঠিক করতে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬১৪ ঘণ্টা, মার্চ ৩, ২০২৪
এমএস/এমজে