ঢাকা, শুক্রবার, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

শাশুড়ির মামলায় কারাগারে যুবক, ‘অভিযোগ সাজানো’ দাবি স্ত্রীর

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৪৮ ঘণ্টা, মার্চ ৬, ২০২৪
শাশুড়ির মামলায় কারাগারে যুবক, ‘অভিযোগ সাজানো’ দাবি স্ত্রীর

ঢাকা: শাশুড়ির করা মামলায় কারাভোগ করছেন ইব্রাহিম ওমরের নামের এক ব্যক্তি।  

গত ১৪ জানুয়ারি চট্টগ্রামের কোতোয়ালি থানায় নারী ও শিশু দমন আইনে করা অপহরণ মামলাটি করেন শাশুড়ি।

 

তবে মামলাটি মিথ্যা ও এর সব অভিযোগ অবান্তর বলে দাবি করেছেন কারান্তরীণ ইব্রাহিমের স্ত্রী জান্নাতুল ইসলাম স্নেহা।

বুধবার (৬ মার্চ) বুধবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ এ দাবি করেন তিনি।  

জানা যায়, কারান্তরীণ ব্যক্তি আড়াই বছর আগে সনাতন থেকে ধর্মান্তরিত হয়ে ইসলাম গ্রহণ করে নিজের নাম ইব্রাহিম ওমর রাখেন।

গত বছরের ৫ নভেম্বর নওমুসলিম জান্নাতুল ইসলাম স্নেহাকে বিয়ে করেন তিনি।

আর মেয়ের ইসলাম ধর্ম গ্রহণ ও মুসলিম যুবককে বিয়ে করায় শাশুড়ির দ্বারা মিথ্যা মামলার স্বীকার হয়েছেন ইব্রাহিম ওমর।  

এ দাবি করে জান্নাতুল ইসলাম স্নেহা বলেন, আমার স্বামীর নামে মিথ্যা অপহরণের মামলা দিয়েছেন আমার মা। ধর্মান্তরিত হতে ও ইব্রাহিমকে বিয়ে করতে আমাকে কেউ জোর করেনি। কেউ ভয় দেখায়নি, ধমক দেয়নি কিংবা টাকা পয়সার লোভও দেখায়নি। এখানে অপহরণ করার তো প্রশ্নই ওঠে না।

তিনি বলেন, গত বছরের ২ নভেম্বর স্বেচ্ছায় ও স্বজ্ঞানে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করি। ইসলামের সৌন্দর্যে আকৃষ্ট হয়েই আমি এ সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমি প্রাপ্তবয়স্কা এবং সাবালিকা, আইনত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার পূর্ণ জ্ঞান এবং অধিকার আমার আছে। ইসলামে দীক্ষিত হয়ে আমি ঢাকায় বিজ্ঞ প্রথম শ্রেণির চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সনাতনা থেকে ইসলাম ধর্মে পরিবর্তন সংক্রান্ত হলফনামা সম্পন্ন করি। আমার স্বামীও প্রায় আড়াই বছর আগে সনাতন থেকে ধর্মান্তরিত হয়ে ইসলাম গ্রহণ করেন। গত বছরের ৫ নভেম্বর ইসলাম পালনের সুবিধার্থে এবং মুসলিম পারিবারিক আইন অনুযায়ী বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হই।  

স্নেহা অভিযোগ করেন, আমার মা-বাবা এবং আত্মীয়-স্বজন যখন বিষয়টি জানতে পারেন তখন থেকে তারা আমার সংসার ভাঙার পাঁয়তারা শুরু করেন। আমাকে জোরপূর্বক সনাতন ধর্মে ফিরে যেতে চাপ দেন তারা। শুধু তাই নয়’ আমার স্বামীকে বিভিন্ন ধরনের হুমকি-ধামকি দিয়ে আসছেন আমার বাবা-মা, যা এখনো অব্যাহত রয়েছে।

তিনি বলেন, আমার মা বাদী হয়ে গত ১৪ জানুয়ারি চট্টগ্রামের কোতোয়ালি থানায় নারী ও শিশু দমন আইনে আমাকে অপহরণ করা হয়েছে এই অজুহাতে ইব্রাহিম ওমরের নামে একটি মিথ্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় আমার মা দাবি করেন, আমাকে নাকি ফুসলিয়ে অপহরণ করা হয়েছে, যা সম্পূর্ণ মিথ্যা বক্তব্য, একেবারেই অবান্তর। আমার স্বামী মো. ইব্রাহিম ওমরের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাটি সম্পূর্ণভাবে মিথ্যা এবং সাজানো।  

জান্নাতুল ইসলাম বলেন, আমার নির্দোষ স্বামীর জামিন মঞ্জুর এবং এই মামলাটি মিথ্যা বিবেচনা করে খারিজ করে দেওয়ার জন্য রাষ্ট্র ও আদালতের কাছে জোর আবেদন জানাচ্ছি। বিজ্ঞ আদালতে আমার দেওয়া জবানবন্দিতে পরিষ্কার বলেছি এবং এখনও বলছি, আমি স্বেচ্ছায় ধর্মান্তরিত হয়েছি। স্বেচ্ছায় বিয়ে করেছি। আমি স্বামীর কাছে থাকতে চাই, মা-বাবার কাছে যেতে চাই না।  

তিনি আরও জানান, তার জবানবন্দি বিবেচনা করে তাকে নিজ জিম্মায় ছেড়ে দিয়েছিলেন চট্টগ্রাম আদালত। তখন আদালত প্রাঙ্গণে তার পরিবার-পরিজনসহ কিছু উগ্রবাদীর মদতপুষ্টরা হট্টগোল করে এবং উসকানিমূলক স্লোগান দিতে থাকে। এক পর্যায়ে তাকে অপহরণের চেষ্টা করা হয়। পরে প্রশাসন এবং আইনজীবীর সহায়তায় তিনি নিরাপদ হন।  

জান্নাতুল বলেন, আমি প্রশাসনকে বলতে চাই, এই উগ্রপন্থি সন্ত্রাসী এবং তাদের মদতদাতাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় নিয়ে আসাটা সময়ের দাবি। এরা এই দেশ এবং দেশের জনগণের সাংবিধানিক অধিকার হরণ করছে। এরা ব্যক্তিগত ইস্যুকে উসকানি দিয়ে সাম্প্রদায়িকতার দিকে নিয়ে যাওয়ার পাঁয়তারা করছে।  

এক প্রশ্নের জবাবে জান্নাতুল ইসলাম স্নেহা বলেন, রাষ্ট্রের দায়িত্ব যে কোনো ধর্মান্তরিতকে নিরাপত্তা দেওয়া। কিন্তু আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। তাই সরকারের কাছে আমার স্বামী ইব্রাহিম ও আমাদের জীবনের নিরাপত্তার জোর দাবি জানাচ্ছি।  

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন ইব্রাহিম ওমরের ভাই মুহম্মদ আল আমিন, তার বোনের ছেলে আশিকুর রহমান প্রমুখ৷

বাংলাদেশ সময়: ১৩১০ ঘণ্টা, মার্চ ৬, ২০২৪
ইএসএস/এসএএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।