নাটোর: ভারত মহাসাগরে বাংলাদেশি পণ্যবাহী একটি জাহাজ আটক করেছে সোমালিয়ান জলদস্যুরা। জাহাজটিতে ২৩ জন নাবিক ও ক্রু রয়েছেন।
তবে জলদস্যুদের হাতে আটকের পর জয় মাহমুদ তার মায়ের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন। তিনি বলেন, ‘মা আমার ফোনে এমবি থাকবে না, আমার সঙ্গে হয়তবা এক দুই মাস কথা নাও হতে পারে। ঈদে শপিংসহ যা কেনা লাগে তোমরা কিনে নিও’। এ ঘটনা শোনার পর থেকেই দুশ্চিন্তায় রয়েছেন পরিবার ও আত্মীয় স্বজনরা।
বুধবার (১৩ মার্চ) জানা গেছে, জলদস্যুদের কবলেপড়া বাংলাদেশি জাহাজটি সোমালিয়া উপকূলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
এর আগে মঙ্গলবার (১২ মার্চ) দুপুরে ভারত মহাসাগর থেকে বাংলাদেশি মালিকানাধীন এমভি আব্দুল্লাহ জাহাজটিসহ ২৩ বাংলাদেশি নাবিক ও ক্রুকে আটক করেন সোমালিয়ার জলদস্যুরা।
জলদস্যুদের হাতে জিম্মি হওয়া জয় মাহমুদ নাটোর জেলার বাগাতিপাড়ার সালাইনগর এলাকার জিয়াউর রহমানের ছেলে। তিনি ওই জাহাজের অর্ডিনারি সি-ম্যান সাধারণ নাবিক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।
জয় মাহমুদের মা আরিফা বেগম বাংলানিউজকে জানান, তার ছেলের সঙ্গে ফোনে শেষ কথা হয়েছে। জয় ফোনে বলেন, মা আমার ফোনে এমবি থাকবে না, হয়তবা এক দুই মাস কথা নাও হতে পারে। ঈদে শপিংসহ যা কেনা লাগে তোমরা কিনে নিও।
জয় মাহমুদের চাচাতো ভাই মো. মারুফ আলী বাংলানিউজকে জানান, মঙ্গলবার দুপুর দেড়টার দিকে তার ভাই ফোন দিয়ে বলে তাদের জাহাজ জলদস্যুরা আক্রমণ করেছে। আমার সঙ্গে আর কথা নাও হতে পারে। ফোন নিয়ে নিতে পারে বলে তার ফোনটি কেটে দেন। পরে তাকে মেসেস করে পরিস্থিতি জানার চেষ্টা করলে সন্ধ্যা ৬টা ৪০ মিনিটে সেখান থেকে প্রতি উত্তরে মেসেজে জয় জানান ‘তার কাছ থেকে ফোন নিয়ে নিয়েছে, আর কথা হবে না’।
বাবা জিয়উর রহমান জানান, মঙ্গলবার দুপুরের দিকে বাড়িতে এসে জানতে পারেন তার ছেলেসহ ২৩ জন নাবিক জলদস্যুদের হাতে আটক হয়েছে। জলদস্যুদের অনেকের হাতে অস্ত্র রয়েছে বলে জানা গেছে। ছেলে জীবিত অবস্থায় ফিরে পাবো কিনা তা নিয়ে চিন্তায় আছেন। সরকারের কাছে আমার ছেলেসহ নাবিকদের দ্রুত উদ্ধার করে দেশে ফেরত আনার দাবি জানাচ্ছি।
এদিকে জলদস্যুদের হাতে আটক জয় মাহমুদের গ্রামের বাড়ি বাগাতিপাড়ার সালাইনগর এলাকায় এ খবর ছড়িয়ে পড়লে আত্মীয়-স্বজনসহ স্থানীয়রা ভিড় করছেন তাদের বাড়িতে। ছেলে জলদস্যুদের হাতে জিম্মি হওয়ার খবর পাওয়ার পর থেকে মা-বাবাসহ স্বজনরা কান্না আর আহাজারি করছেন।
বাগাতিপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোহায়মেনা শারমিন বাংলানিউজকে জানান, বিষয়টি জানার পর স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের মাধ্যমে পরিবারকে খবর দেওয়া হয়। পাশাপাশি উপজেলা প্রশাসন থেকে তার পরিবারকে সান্ত্বনা দেওয়াসহ সরকারি পর্যায়ে সহযোগিতা প্রদানের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসন সজাগ রয়েছেন।
প্রসঙ্গত: বাংলাদেশি মালিকানাধীন সমুদ্রগামী এমভি আব্দুল্লাহ জাহাজটি কয়লা নিয়ে মোজাম্বিক থেকে দুবাই যাচ্ছিলো। পথিমধ্যে এডেন উপসাগরে জাহাজটিতে হামলা চালিয়ে নিয়ন্ত্রণ নেয় জলদস্যুরা। বাংলাদেশের স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (১২ মার্চ) দুপুর ১টা থেকে ২টার মধ্যে এ জাহাজটি আক্রান্ত হয়। তাদের অনেকের হাতে অস্ত্র রয়েছে। সোমালিয়া থেকে প্রায় ৪৫০ নটিক্যাল মাইল দূরে সমুদ্রে প্রায় ১০০ দস্যু জাহাজটি তাদের নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। তবে নাবিকেরা নিরাপদে রয়েছেন। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় বিষয়টি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৫০১ ঘণ্টা, মার্চ ১৩, ২০২৪
এসএম