ঢাকা: ক্যাপাসিটি পেমেন্টকে বিদ্যুতের ভর্তুকি সমন্বয়ে প্রথম অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত বলে জানিয়েছে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)।
বুধবার (১৩ মার্চ) দুপুরে রাজধানীর ধানমন্ডিতে সিপিডি কার্যালয়ে ‘সাম্প্রতিক বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি: ভর্তুকি সমন্বয়ের অন্য বিকল্প আছে কী?’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে প্রতিষ্ঠানটির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম এ কথা জানান।
ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির যে যুক্তি দেখানো হয়েছে, বিদ্যুৎ খাতে সরকারকে যে অব্যাহত ভর্তুকি দিতে হয়, সেই ভর্তুকি সমন্বয়ের অংশ হিসেবেই সরকার এই মূল্যবৃদ্ধি করেছে। সরকার আইএমএফের সঙ্গে যে ঋণ চুক্তি করেছে, সেই চুক্তির একটি শর্ত হলো, জ্বালানি তেলের মূল্য নির্ধারণে স্বয়ংক্রিয় প্রক্রিয়া, আরেকটি বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির ক্ষেত্রে সাবসিডি কমিয়ে আনা। ২০২৬ সালের মধ্যে এই কাজটা করবে বলে সরকারের ঘোষণায় বলা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, মূল্য সমন্বয়ের ফলে বিভিন্ন পর্যায়ের ভোক্তার ওপর, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির সরাসরি অভিঘাত পরিলক্ষিত হয়েছে। আগামী দিনেও এই অভিঘাত পড়বে। আমরা আশ্চর্য হচ্ছি সরকার এটাকে মূল্যবৃদ্ধি বলতে চায় না, সমন্বয় বলতে চায়। আমি জানি না, সমন্বয় আর বৃদ্ধির মধ্যে মৌলিকভাবে কোনো পার্থক্য আছে কি না? এটা সরাসরি ভোক্তার ঘাড়ে পড়ছে, যদিও সরকার বলছে তাদের ঘাড়ে তেমন পড়বে না। কিন্তু আমাদের আমাদের বক্তব্য হলো, ভর্তুকি সমন্বয়ের এই উদ্যোগ সরকারের প্রথম প্রাধিকার হতে পারে না। ভর্তুকি সমন্বয়ের জন্য সরকারের প্রথম প্রাধিকার হওয়া উচিৎ হলো, ক্যাপাসিটি পেমেন্ট বা বর্ধিত বিদ্যুতের যে ক্যাপাসিটি তৈরি হচ্ছে তার জন্য সরকারকে যে পেমেন্ট দিতে হচ্ছে, সেটিকে কীভাবে সমন্বয় করা যায়। যদিও সেদিকে সরকার এখনো কোনো উদ্যোগ নেয়নি।
সিপিডির গবেষণা পরিচালক বলেন, বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি গত এক বছর ধরে অব্যহাতভাবে হচ্ছে। ২০২৩ সালের জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি এবং মার্চে পাঁচ শতাংশ করে করে প্রতিমাসে বাড়ানো হয়েছে। এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে এসে সাড়ে ৮ শতাংশ মূল্যবৃদ্ধি করা হয়েছে। বলা হচ্ছে এই মূল্যবৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে, আরও দুই ধাপে এই বৃদ্ধি করা হবে। এটা আমাদের জন্য বড় রকম দুশ্চিন্তার কারণ। ভোক্তা পর্যায়ে যখন মূল্যবৃদ্ধির নাভিশ্বাস চলছে, সেই সময়ে বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির নেবার সক্ষমতা ভোক্তার আছে বলে মনে হয় না। এটা ভোক্তার ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করবে বলে আমাদের কাছে মনে হয়।
বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি ভর্তুকি সমন্বয়ের বিকল্প প্রস্তাবনার বিষয়ে তিনি বলেন, সরকার যে মূল্য সমন্বয় করেছে, তাতে সরকারের মাত্র দুই হাজার ৬৫০ কোটি টাকা ভর্তুকি সমন্বয় হবে। এরপরও সরকারকে বিদ্যুতখাতে প্রায় ৩৯ হাজার কোটি টাকা বর্ধিত ভর্তুকি দিতে হবে। সরকার যদি পুরোটাই ভোক্তার ওপরে চাপ দিয়ে করার পরিকল্পনা করে থাকে, তাহলে এখনকার সময়ে ১৬.৪০ টাকা আগামী দিনে এটা আরও বেড়ে যাবে। এই চাপ ভোক্তার ওপরে দেওয়ার কথা নয়। যদিও আইএমএফের হিসেবে অনুযায়ী বলা হচ্ছে, এই মূল্য ১২.১১ টাকা, আগামী দুই তিন বছরে এই দাম থাকবে না। এটা বেড়ে হবে ১৬.৪০ টাকা। এই বর্ধিত মূল্যের ত্রুটির দায় যদি ভোক্তার ওপরে চাপানো হয়, তাহলে মূল্যবৃদ্ধি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে সেটি আপনারা বুঝতে পারেন। এই জায়গায় সরকারের পরিষ্কার কোনো রোডম্যাপ আমরা দেখছি না। সমন্বয় যদি পুরোটাই ভোক্তাকেন্দ্রিক হয়, তাহলে আমাদের প্রবল আপত্তি থাকবে।
সিপিডি বলেছে, আমরা মূলত চারটি বিকল্প সরকারের কাছে তুলে ধরতে চাই। আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে চারটি কৌশলের মাধ্যমে সরকার ভর্তুকি সমন্বয় করতে পারে, সরকার তার পরিকল্পনা মত যে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো থেকে ফেজ আউট করতে চায়, কুইক রেন্টালগুলোতে ফেজ আউট ঘোষণা হয়েছে, সময়মত সেগুলো থেকে ফেজ আউট করবে। নতুন যে বিদ্যুৎকেন্দ্র হচ্ছে সেগুলোতে ‘নো ইলেক্ট্রিসিটি নো পে’, পুরনোগুলোর চুক্তি শেষ হওয়ার পরে সেগুলো সব নো ইলেক্ট্রিসিটি নো পে এরমকম ভাড়ায় চুক্তি করবে। বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির খুব কম অংশ ভোক্তার ওপরে দেওয়া যেতে পারে। যে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো ফেজ আউট হবে, সরকার বলছে ৪০ শতাংশ নবায়নযোগ্য বিদ্যুতে যেতে চায়, সে লক্ষ্যে যাওয়ার ক্ষেত্রে ধারাবাহিকভাবে বন্ধ বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোকে নবায়নযোগ্য বিদ্যুতকেন্দ্র দিয়ে রিপ্লেস করতে হবে, যেটা সরকারের পরিকল্পনারই অংশ। এই চারটি বিষয়কে বিবেচনায় নিয়ে যদি সরকার তার পরিকল্পনা ঘোষণা করে, তাহলে ২০২৯ সালের ভেতরে সরকারকে আর ভর্তুকি দিতে হবে না।
বাংলাদেশ সময়:১৫১৫ ঘণ্টা, মার্চ ১৩, ২০২৪
আরকেআর/এমএম