ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

‘ওর কিছু হলে আমরা কেউ বাঁচবো না’

স্বপন চন্দ্র দাস, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৩৩ ঘণ্টা, মার্চ ১৩, ২০২৪
‘ওর কিছু হলে আমরা কেউ বাঁচবো না’

সিরাজগঞ্জ: নাজমুল হক ওরফে হানিফ (২৩) সোমালিয়ায় জলদস্যুদের হাতে জিম্মি রয়েছেন, এমন খবরে তার মা নার্গিস বেগমের মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়েছে। এ খবর শুনে বাবা আবু সামা অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।

বার বার মূর্ছা যাচ্ছেন মা। যে যাচ্ছে তার কাছেই কেঁদে কেঁদে সন্তানকে ফিরে পাওয়ার আকুতি জানাচ্ছেন।  

বুধবার (১৩ মার্চ) সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ উপজেলার ভদ্রঘাট ইউনিয়নের নূরনগর গ্রামে নাজমুলের বাড়িতে গেলে নার্গিস বেগমকে বিলাপ করতে দেখা যায়।  

কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলছিলেন, ছেলে আমাকে ফোন দিয়ে বলেছে আম্মা আমাদের সোমালিয়া জলদস্যুরা আটক করেছে। আমার জন্য তোমরা দোয়া কইরো, কোনো চিন্তা করো না। আর কথা নাও হতে পারে। এটাই হতে পারে শেষ কথা। বলেই ফোন কেটে দেয়। আর কথা হয়নি। ওর কিছু হলে আমরা কেউ বাঁচবো না। বাবা-মা দুজনেই ওর সঙ্গে চলে যাবো।  

তিনি আরও বলেন, আমাদের এক ছেলে এক মেয়ে। মেয়ের বিয়ে দিয়েছি। ছেলেই এখন ভরসা। ওর বাবা হার্টের রোগী, কোনো কাজ করতে পারে না। নাজমুলই আমাদের পরিবারের আয়ের একমাত্র অবলম্বন। তাই সরকারের কাছে দাবি আমার ছেলেকে ফিরিয়ে দেন।  

প্রতিবেশীরা জানান, আবু সামা ও নার্গিস বেগম দম্পতির একমাত্র অবলম্বন ছেলে নাজমুল। সে বাদুল্যাপুর মাল্টিপারপাস সায়েন্স অ্যান্ড টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট ২০১৭ সালে এসএসসি ও ২০১৯ সালে এইচএসসি পাস করে। এরপর সিরাজগঞ্জ ইসলামীয়া সরকারি কলেজে অনার্সে পড়া অবস্থায় ২০২২ সালে জাহাজের ডেক ডিপার্টমেন্টের নাবিকের চাকরি নেয়। চাকরি নেওয়ার পর থেকেই হৃদরোগী বাবার মাথার ওপর থেকে পরিবারের বোঝাটা নামিয়ে নিজের কাঁধে নেয় নাজমুল।  

মঙ্গলবার (১২ মার্চ) অন্যান্য নাবিকদের সঙ্গে আফ্রিকার দেশ মোজাম্বিক থেকে কয়লা নিয়ে ভারত মহাসাগর হয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতে যাওয়ার পথে সোমালিয়ার জলদস্যুদের কাছে আটক হয় নাজমুলদের জাহাজ। খবর শুনেই এই পরিবারের সবাই অজ্ঞান হয়ে পড়েছিল। অনেক সেবা করার পর তারা সুস্থ হয়। তার বাবা এখনো সুস্থ হয় নাই। তিনি হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। গ্রামে ১০টা ছেলে থাকলেও তাদের চেয়ে আলাদা এই ছেলেটা। তিন বছর ধরে চাকরি নিয়েছে। প্রথম টিপ দিয়ে আসার পরে দ্বিতীয় টিপে গিয়েছিল। সরকারের কাছে দাবি ছেলেটাকে যেন বাবা-মার কাছে সুস্থ অবস্থায় ফিরিয়ে দেয়।

নাজমুলের বন্ধু তারেক বলেন, আমরা গতকাল সন্ধ্যার পর জানতে পেরেছি। জেনে ওর মোবাইলে ম্যাসেজ দিয়েছি। ও ম্যাসেজ পাঠিয়েছে আমাদের আটকে রেখেছে। বাবা-মাকে বলো না। তারা কান্নাকাটি করবে। এটাই লাস্ট কথা হতে পারে। সরকারের কাছে দাবি নাজমুল যেন ফিরে আসে। ও খুব ভালো মানুষ।  

নাজমুলের ফুফাতো ভাই আল মাহমুদ এসআর শিপ নামে জাহাজের নাবিক। তিনি ছুটিতে বাড়িতে রয়েছেন। তিনি বলেন, মঙ্গলবার ১টার দিকে সোমালিয়া থেকে আরব-আমিরাতের দিকে যাবে এমভি আব্দুল্লাহ শিপটি। তখনই শিপটাকে জলদস্যুরা আটক করেছে। ওরা একটি মোবাইল দিয়ে ভিডিও ধারণ করে। আমাদের সবার সঙ্গে যোগাযোগের জন্য একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ আছে। ভিডিওটি সেই গ্রুপে দেয়। ভিডিও দেখার পরই শিওর হই ওই শিপে আমার মামাতো ভাই নাজমুল আছে। যেহেতু এটি অফিসিয়াল ব্যাপার তাই বিষয়টি আমি বাড়িতে জানাইনি। সন্ধ্যার দিকে অফিস থেকেই বাড়িতে জানায় যে নাজমুল জলদস্যুদের হাতে আটক রয়েছে। ওর সঙ্গে রাত ১১টা ২০ মিনিট পর্যন্ত যোগাযোগ করেছি। নাজমুল বলেছে তাদের সোমালিয়া দ্বীপে নিয়ে যাবে। আড়াই দিন সময় লাগবে। সকাল ৯টার দিকে এসআর শিপে আমি কথা বলি। স্যারের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। স্যার বলেছেন ও ভালো আছে।  

সিরাজগঞ্জ পুলিশ সুপার মো. আরিফুর রহমান মণ্ডল বলেন, বিভিন্ন গণমাধ্যমে নাজমুলের বিষয়টি জানতে পেরেছি। তার পরিবার-স্বজনকে আশ্বস্ত করতে স্থানীয় পুলিশ কর্মকর্তাদের বলা হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ২০২৭ ঘণ্টা, মার্চ ১৩, ২০২৪
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।