ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

ভিকারুননিসায় ভর্তি বাতিল: ‘ট্রমাটাইজড’ হয়ে পড়েছে সেই ১৬৯ শিক্ষার্থী

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫০২ ঘণ্টা, মার্চ ১৬, ২০২৪
ভিকারুননিসায় ভর্তি বাতিল: ‘ট্রমাটাইজড’ হয়ে পড়েছে সেই ১৬৯ শিক্ষার্থী

ঢাকা: ভিকারুননিসা নূন স্কুল থেকে ভর্তি বাতিল হওয়ার পর ১৬৯ শিশু শিক্ষার্থী মানসিকভাবে ভেঙে পড়ছে। তিন মাস স্কুলে যাতায়াতের পর হঠাৎ সেটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তারা  ‘ট্রমাটাইজড’ হয়ে পড়েছে।

তাদের মানসিক বিকাশের দিকে বিবেচনা করে ভর্তি বাতিলের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে ভিকারুননিসা ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছে দাবি জানিয়েছেন অভিভাবকরা।

শনিবার (১৬ মার্চ) বেলা ১১টার দিকে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) নসরুল হামিদ মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানিয়েছেন অভিভাবকরা।

তারা বলেন, তিন মাস ক্লাস করে শিক্ষার্থীরা তাদের মনের ভেতর স্কুলকে ধারণ করে নিয়েছে। কিন্তু এরপরই ভর্তি বাতিল করা হয়। এখন এই ১৬৯ জন শিশু শিক্ষার্থী বছরের মাঝামাঝি সময়ে এসে কোথায় ভর্তি হবে? তাদের ভবিষ্যৎ কোথায়? কোন অপরাধে মনে ধারণ করা বিদ্যালয় ছেড়ে যেতে হবে? এই কারণে অভিভাবক এবং কোমলমতি শিক্ষার্থীদের সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন হতে হচ্ছে। নানারকম বিব্রতকর পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে।

এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে সরকারের সর্বোচ্চ মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন ভুক্তভোগী অভিভাবকরা।

সংবাদ সম্মেলনে অভিভাবক কায়সার হোসাইন বলেন, বয়সসীমার যে কথা এখন বলা হচ্ছে সেটা ভর্তির সময় কেন বলা হয়নি। আমরা সব প্রক্রিয়া অনুসরণ করে অনলাইন আবেদন করে ভর্তি করিয়েছি। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তরের লটারির ফলাফলেও তাদের নাম ছিল। সেই তালিকা থেকেই ভিকারুননিসা স্কুল বাচ্চাদের ভর্তি করা হয়েছে। তিন মাস পর কেন ভর্তি বাতিল করা হলো?

তিনি আরও বলেন, এই বাচ্চারা ভিকারুননিসা ছাড়া রাজধানীর মতিঝিল আইডিয়াল, উইলস লিটল ফ্লাওয়ার ও সাউথ পয়েন্ট স্কুলসহ বিভিন্ন স্কুলের ভর্তির সুযোগ পেয়েছিল। তখন এই বয়সের বিষয়টি বলা হলে বাচ্চাদের অন্য স্কুলে ভর্তি করাতাম।

অভিভাবক রওশন আরা আফরোজ বলেন, তিন মাস পর হঠাৎ করে ভর্তি বাতিল করায় এই বাচ্চাদের কোথায় ভর্তি করাবো? এর মধ্যে রোজার মাস শুরু হয়েছে। ঈদের পর অর্ধবার্ষিক পরীক্ষা। বাচ্চাদের ভর্তি বাতিল হওয়ার পর স্কুলে যেতে পারছে না। তারা এক ধরনের ট্রমাটাইজড (মানসিক যন্ত্রণা) হয়ে গেছে। অনেক বাচ্চারা অসুস্থ হয়ে হাসপাতাল ভর্তি হয়েছে। বন্ধুদের সঙ্গে স্কুলে যেতে না পেরে অনেক পড়াশুনা করতে চাচ্ছে না। এ ধরনের পরিস্থিতিতে বাধ্য হয়ে আমরা আপনাদের (সাংবাদিকদের) সামনে এসেছি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো জন্য।  

অভিভাবক মমতাজুর রায়হান বলেন, সব জায়গা বলা হচ্ছে এই বাচ্চাদের নাকি প্রভাব দিয়ে অবৈধভাবে, টাকার বিনিময়ে ভর্তি হয়েছে। যা সম্পূর্ণ মিথ্যা। কারণ, প্রথম শ্রেণিতে কেন্দ্রীয় লটারির মাধ্যমে ভর্তির যোগ্যদের তালিকা করা হয়। সেই তালিকা স্কুল কর্তৃপক্ষকে পাঠায় মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর।   তাই ভর্তিতে কোনো অনিয়ম করার সুযোগ নেই এটা সবাই জানে। তারপরও আমাদের ওপর অভিযোগ আনা হচ্ছে যা খুবই দুঃখজনক।

সংবাদ সম্মেলন উপস্থিত ছিল ভর্তি বাতিলের শিকার বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী। কান্না বিজড়িত কণ্ঠে তারা প্রশ্ন করে- আমি কি আর আমার স্কুলে যেতে পারবো না? বিনা দোষে আমার স্কুল গেট আমার জন্য বন্ধ কেন? আমরা এখানেই পড়বো, আমরা তো ছোট শিশু, নির্দোষ।

সংবাদ সম্মেলনে সৌমিত্র দে তপু, রওশন আরা আফরোজ, রাহাত আহমেদসহ অর্ধশতাধিক অভিভাবক উপস্থিত ছিল।

গত ৪ মার্চ ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রথম শ্রেণির ১৬৯ ছাত্রীর ভর্তি বাতিল করে স্কুল কর্তৃপক্ষ। প্রত্যেক শিক্ষার্থীর অভিভাবককে পৃথক পৃথক চিঠি দিয়ে ভর্তি বাতিলের এ সিদ্ধান্ত জানানো হয়। একইসঙ্গে ভর্তি বাতিলের বিষয়টি চিঠি দিয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদকে অবহিত করেন প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ কেকা রায় চৌধুরী।

চলতি বছর ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রথম শ্রেণিতে বিধিবহির্ভূতভাবে ১৬৯ জন শিক্ষার্থীকে ভর্তি করা হয়। যাদের জন্ম সাল ছিল ২০১৫ ও ২০১৬ সাল। তবে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) প্রজ্ঞাপন দিয়ে জানায়, ২০১৭ সালে জন্মসনদ রয়েছে এমন শিক্ষার্থীরাই প্রথম শ্রেণিতে ভর্তির আবেদন করতে পারবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৫০১ ঘণ্টা, মার্চ ১৬, ২০২৪
এসজেএ/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।