কুমিল্লা: কুমিল্লায় জামালপুরগামী বিজয় এক্সপ্রেস ট্রেনের নয়টি বগি লাইনচ্যুতের ঘটনায় চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা এবং ঢাকা থেকে চট্টগ্রামসহ ওই রুটের সব ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে। প্রতিবেদনটি লেখা পর্যন্ত পার্শ্ববর্তী স্টেশনগুলোতে চট্টগ্রামগামী ছয়টি ট্রেন আটকা পড়েছে।
রোববার (১৭ মার্চ) দুপুর পৌনে দুইটার দিকে নাঙ্গলকোটের হাসানপুর রেলস্টেশন সংলগ্ন চিওড়ার তেজের বাজার এলাকায় ট্রেনটি লাইনচ্যুত হয়।
এ ঘটনায় রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের পরিবহন কর্মকর্তা আনিসুর রহমানকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে দ্রুততর সময়ে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
রেলওয়ে কুমিল্লার ঊর্ধ্বতন উপসহকারী প্রকৌশলী (পথ) লিয়াকত আলী মজুমদার জানান, এদিন নির্ধারিত সময়ের অনেক পরে ময়মনসিংহ অভিমুখী বিজয় এক্সপ্রেস চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসে। চৌদ্দগ্রামের গুণবতী স্টেশন পার হয়ে নাঙ্গলকোটের হাসানপুর স্টেশনে প্রবেশের সময় তেজের বাজার আউটারে ট্রেনটির নয়টি বগি লাইনচ্যুত হয়। হঠাৎ গরমের কারণে এমন হয়েছে বলে আমরা প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছি।
স্থানীয় বাসিন্দা শাহিন মিয়া বলেন, ট্রেন আসার সময় হর্ন শুনতে পাই। এরপর বিকট শব্দ! গিয়ে দেখি মানুষ চিৎকার চেঁচামেচি করছে। একজনের পা চাকায় আটকে যায়। অনেক নারী-পুরুষকে ট্রেন থেকে বের করেছি।
ট্রেনের বগি লাইনচ্যুতির ঘটনায় স্লিপারসহ লাইনের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, একটি বগি ছিটকে গিয়ে রেলপথ সংলগ্ন চিওড়া গ্রামের হতদরিদ্র বৃদ্ধ চাঁন মিয়ার ঘরের ওপর গিয়ে পড়ে। ঘরটি তছনছ হয়ে যায়। এসময় চাঁন মিয়া গুরুতর আহত হন। চাঁন মিয়াকে পরিবারের লোকজন উদ্ধার করে নাঙ্গলকোট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে।
এ ব্যাপারে সরকারের কাছে ঘর নির্মাণে সহযোগিতা কামনা করেন আহত চাঁন মিয়ার স্ত্রী মনোয়ারা বেগম।
আহত ট্রেনযাত্রী কিশোরগঞ্জের মিরাজ হোসেন বলেন, তেজের বাজার ব্রিজের ওপর ওঠার পর ট্রেন বিকট শব্দ করে বগিগুলো ছিটকে পড়ে যায়। এসময় অনেকেই আহত হয়েছেন। আমিও আহত হয়েছি।
নাঙ্গলকোট উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ও দুর্ঘটনাস্থলের কাছাকাছি গ্রাম বদরপুরের বাসিন্দা আবু ইউসুফ ভূঁইয়া বলেন, দুর্ঘটনার কারণে রেললাইন ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমরা ঘটনাস্থলে সারাদিন ছিলাম। দুর্ঘটনার বিষয়ে অনেকে অনেক তথ্য দিচ্ছেন। তবে সঠিক ঘটনা তদন্তের পর বেরিয়ে আসবে।
লাকসাম রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুরাদ উল্লাহ বাহার বলেন, এ ঘটনায় অনেকে সামান্য আহত হয়েছেন। তবে আহতের নির্দিষ্ট সংখ্যা জানা যায়নি। নাঙ্গলকোটের নির্বাহী কর্মকর্তা, থানার ওসি এবং উপজেলা চেয়ারম্যানসহ আমরা পুরো ট্রেন সার্চ করেছি। কাউকে নিহত পাইনি।
নাঙ্গলকোট উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা ইসমাইল হোসেন বলেন, এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি হবে। তারা মূল সত্য উদঘাটন করবেন। আমাদের প্রাথমিক ধারণা, তিনটি কারণে এ দুর্ঘটনা সংঘটিত হতে পারে। রেললাইনের ব্রিজে ত্রুটি, হঠাৎ গরম পড়া বা ট্রেনে কোনো সমস্যার কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
তিনি জানান, আহতদের মধ্যে বর্তমানে চারজন হাসপাতালে ভর্তি আছেন। এদের একজন পায়ে ও অন্যান্যরা পুরো শরীরের বিভিন্নস্থানে আঘাত পেয়েছেন।
হাসানপুর রেলওয়ের স্টেশন মাস্টার মাহমুদুল হাসান সোহাগ বলেন, লাকসামের রিলিফ ট্রেন ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে। দুর্ঘটনার ঘটনায় তদন্ত কমিটি হয়েছে। এটা ঊর্ধ্বতন পর্যায় থেকে তদন্ত করা হবে।
এ বিষয়ে বক্তব্য নিতে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক জাহাঙ্গীর হোসেনের মোবাইলফোনে একাধিকবার চেষ্টা করে পাওয়া যায়নি।
প্রসঙ্গত, গত বছরের ১৬ এপ্রিল রমজান মাসে ইফতারের পূর্বমুহূর্তে একই স্টেশন হাসানপুরে সোনার বাংলা এক্সপ্রেস ট্রেন দাঁড়িয়ে থাকা একটি মালবাহী ট্রেনকে পেছন থেকে ধাক্কা দেয়। সে সময়েও ওই স্টেশনের লুপলাইনগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
আরও পড়ুন >> কুমিল্লায় দুর্ঘটনা, ৪ ট্রেনের যাত্রা বাতিল
বাংলাদেশ সময়: ২২৫৫ ঘণ্টা, মার্চ ১৭, ২০২৪
এসএএইচ