ঢাকা, বুধবার, ২৪ আশ্বিন ১৪৩১, ০৯ অক্টোবর ২০২৪, ০৫ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

‘শাহী ফিরনি’ চার আনা থেকে ৩৫ টাকার এক গৌরবময় যাত্রা

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৩৪ ঘণ্টা, মার্চ ২২, ২০২৪
‘শাহী ফিরনি’ চার আনা থেকে ৩৫ টাকার এক গৌরবময় যাত্রা

রাজশাহী: রহমানিয়ার ‘শাহী ফিরনি’ রাজশাহীবাসীর কাছে আজও এক অভিন্ন স্বাদের প্রতীক। মাহে রমজানে এর কদর বেড়ে যায় বহুগুণ।

সুদীর্ঘ ছয় যুগের পথ চলা।

৭২ বছর ধরে স্বাদ ও গুণে নিজের পরিচয় ধরে রেখেছে ‘দিল্লির শাহী ফিরনি’। এককভাবেই রাজত্ব করছে রাজশাহীর ভোজন রসিকদের মনেপ্রাণে। শুরুতে এর দাম ছিল চার আনা। এখনও আছে সেই শাহী ফিরনি। তবে এখন দাম ৩৫ টাকা।

বন্ধুপ্রতীম দিল্লির ঐতিহ্য বহন করে চলেছে এ প্রাচীন শহর রাজশাহীতে। অমৃত স্বাদের বার্তা দিয়ে এ শাহী ফিরনি যাত্রা এখন শত বছরের পথে। প্রতিবছর পবিত্র রমজান মাস এলেই রাজশাহীর মানুষের কাছে ইফতারের সময় ইফতারের বাহারি পদের সঙ্গে দিল্লির এ শাহী ফিরনি যেন একদিন হলেও চাই।

যুগে যুগে ইফতারের তালিকায় এসেছে ছোলা, পেঁয়াজু, আলুর চপ, ডিমের চপ, বেগুনি ও জিলাপিসহ নানা অভিজাত মুখরোচক খাবার। এছাড়া প্রতি রমজানেই যুক্ত হচ্ছে বাহারি সব ইফতার আইটেম। যার সঙ্গে মানুষও পরিচিত হচ্ছে। তবে অধুনা সব ইফতার সামগ্রীর সঙ্গে সেই ফিরনি আজও টিকে রয়েছে সদর্পে। রাজশাহীর ঐতিহ্যবাহী হোটেল রহমানিয়া ও তাদের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান রহমানিয়া ও রহমানিয়া প্লাস দিল্লির শাহী ফিরনির একমাত্র বিক্রেতা।

এক নামেই যার পরিচিতি। তাই প্রতিবছর রমজান মাস এলে রহমানিয়ার শাহী ফিরনি ছাড়া এখানকার অনেক মানুষের ইফতারে যেন পরিপূর্ণতা আসে না আজও।

রাজশাহী রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সভাপতি ও ঐতিহ্যবাহী রহমানিয়া হোটেলের স্বত্বাধিকারী রিয়াজ আহমেদ খাঁন বলেন, আজ থেকে ৭২ বছর আগে (১৯৫২ সালে) তার দাদা আনিসুর রহমান খাঁন ভারতের দিল্লি শহর থেকে সুস্বাদু এ শাহী ফিরনি রাজশাহীতে নিয়ে আসেন।

এর রন্ধনশৈলী ও উপকরণ নিয়ে রাজশাহীতে শাহী ফিরনির প্রচলন শুরু করেন। তার সুবাদে রাজশাহীতে বসেই মানুষ দিল্লির স্বাদ গ্রহণের সুযোগ পান। সেই থেকে রাজশাহীতে এখন পর্যন্ত শাহী ফিরনির কদর এক রত্তিও কমেনি। শুরু থেকেই প্রতিটি বাটিতে ১০০ গ্রাম করে ফিরনি দেওয়া হয়। এত বছর পরও তারা আসল শাহি ফিরনির মান অটুট রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। যুগের পর যুগ ধরে স্বাদের ঐতিহ্য বহন করে আসছে দিল্লির এ শাহী ফিরনি। এভাবেই পার করছে ছয় যুগ। প্রজন্মের পর প্রজন্ম স্বাদ গ্রহণ করে চলেছে রহমানিয়ার এ শাহী ফিরনির।

রিয়াজ আহমেদ খাঁন বলেন, দুধ, পোলাওয়ের চালের গুড়াসহ বিভিন্ন উপাদান দিয়ে এ শাহী ফিরনি তৈরি করার পর মাটির একটি ছোট পাত্রে করে তা রাতে জমিয়ে রাখা হয়। পরদিন সকালে তা বিক্রি করা হয়। তবে আগে প্রতিদিন পাওয়া গেলেও বর্তমানে কেবল রমজান মাস ও বিয়ে বা অন্য অনুষ্ঠানের বিশেষ অর্ডার ছাড়া শাহী ফিরনি তৈরি হয় না। আর তার দাদা আনিসুর রহমান খাঁনই এ 'রহমানিয়া' হোটেল প্রতিষ্ঠা করেন।

শুরুতে এক বাটি শাহী ফিরনির দাম ছিল চার আনা। দাদার মৃত্যুর পর তার বাবা আবদুল বারি খান এ হোটেল ব্যবসার হাল ধরেন। বাবার মৃত্যুর পর থেকে তিনি (রিয়াজ আহমেদ খাঁন) এ ব্যবসা দেখাশোনা করছেন।

এদিকে স্বাদ ও গুণে অতুলনীয় এ শাহী ফিরনির জন্য রোজাদারদের মধ্যে এখন প্রচুর চাহিদা। তাই এ বছর প্রথম রমজান থেকেই তালিকার শীর্ষে রয়েছে এ আইটেম। নামডাক থাকায় ভারতের রাজধানীতেও এ ফিরনির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।   

জানতে চাইলে হোটেলের সেলসম্যান মো. কালু বলেন, রমজান মাসে শাহী ফিরনি তাদের সেরা আকর্ষণ। তবে এছাড়া রমজানজুড়ে রহমানিয়া হোটেলে ইফতারের বিশাল আয়োজন রয়েছে। রহমানিয়ার ইফতারের প্রতি প্যাকেটে থাকছে- বুট, খেজুর, পেঁয়াজু, বেগুনি, আলুর চপ, জিলাপি, সমুচা, কলা, শসা, মুড়ি, কাঁচা বুট ও নিমকপাড়া। যার মূল্য ৫০ থেকে ৬০ টাকা। এছাড়া খাসির তেহারি হাফপ্লেট ৮০ টাকা, চিকেন বিরিয়ানি হাফপ্লেট ১০০ টাকা, কাচ্চি ১২০ টাকা, শিক কাবাব ৫০ টাকা, কাঠি কাবাব ৩০ টাকা, চিকেন কাবাব ৫০ টাকা, চিকেন টিক্কা ৫০ টাকা, চিকেন সাসলিক ৫০ টাকা, ক্রিসপি চিকেন ৮০ টাকা, গ্রিল চিকেন ৮০-৩২০ টাকা, শামি কাবাব ৫০ টাকা, সমুচা খাসির (কিমা) ১৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৩২ ঘণ্টা, মার্চ ২২, ২০২৪
এসএস/আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।