ঢাকা: তামাক ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার নিষিদ্ধ করার লক্ষ্যে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালী করার দাবি জানিয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাসহ নারী সংসদ সদস্য ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সংরক্ষিত আসনের নারী কাউন্সিলররা।
বুধবার (২৭ মার্চ) সকালে ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার দপ্তরে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা নারী মৈত্রী আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় অনুষ্ঠিত হয় ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের।
প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মীর খাইরুল আলমের সভাপতিত্বে এ সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংসদ সদস্য জারা জাবিন মাহবুব। প্রধান আলোচক হিসেবে আলোচনা করেন সিটিএফকে-বাংলাদেশের প্রোগ্রামস ম্যানেজার আবদুস সালাম মিয়াহ। এ ছাড়া সভায় স্থানীয় বিভিন্ন জনপ্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
স্বাগত বক্তব্যে নারী মৈত্রীর নির্বাহী পরিচালক শাহীন আকতার ডলি বলেন, তামাক নারীস্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকর। তামাক নিয়ন্ত্রণের নানান দিকগুলোর পাশাপাশি নারী ও শিশুদের নিয়ে ভাবাও একান্ত জরুরি। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ধূমপানের কারণে নারী ও শিশুরা অত্যন্ত ঝুঁকির মুখে রয়েছে। তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালী করার লক্ষ্যে সচেতনতা, পাশাপাশি নারীর স্বাস্থ্য সুরক্ষা এবং জনস্বাস্থ্য রক্ষায় নারীর কণ্ঠস্বরকে বলিষ্ঠ করার জন্য আমাদের সবাইকে এক হতে হবে।
প্রধান আলোচকের বক্তব্যে আবদুস সালাম মিয়াহ বলেন, টোব্যাকো অ্যাটলাস ২০১৮-এর তথ্যমতে তামাক ব্যবহারজনিত রোগে প্রতিবছর বাংলাদেশে এক লাখ ৬১ হাজার মানুষ অকালে মৃত্যুবরণ করেন। তার মানে প্রতিদিন ৪৪২ জন মানুষ প্রাণ হারান এই ভয়ঙ্কর তামাকের আগ্রাসনে। তামাকের এই সর্বগ্রাসী আগ্রাসনকে তাই আমরা তামাক মহামারি হিসেবেই গণ্য করছি।
তিনি আরও বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় প্রণীত তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের সংশোধিত খসড়াতে ধূমপানের নির্ধারিত এলাকা বিলুপ্ত, বিক্রয়স্থলে তামাকজাত দ্রব্য প্রদর্শন নিষিদ্ধ, খুচরা বিড়ি-সিগারেট বিক্রি বন্ধ, ই-সিগারেট নিষিদ্ধ, তামাক কোম্পানির সিএসআর কার্যক্রম বন্ধ ও সিগারেটের প্যাকেটে সতর্কবার্তার পরিসর ৫০ থেকে ৯০ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে, যা আইনটিকে আরও শক্তিশালী করবে। ফলে তামাকের কারণে একদিকে যেমন মৃত্যুহার কমবে অপরদিকে জনস্বাস্থ্যের উন্নয়নও ঘটবে।
সংসদ সদস্য জারা জাবিন মাহবুব বলেন, তামাকের প্রতি আসক্তি যুবসমাজকে ফেলে দিচ্ছে এক অন্ধকার জগতে। অল্প বয়সেই শিশু-কিশোররা ধূমপানে আসক্ত হয়ে পরছে। ভয়ঙ্কর শারীরিক অসুস্থতার মুখোমুখি হওয়ার পাশাপাশি মানসিকভাবেও বিপর্যস্ত হয়ে পরছে তারা। বর্তমানের যুগে মূলত সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে তামাক কোম্পানিগুলো সচেতনভাবেই কিশোরদের টার্গেট করে থাকে। ধূমপান নিয়ে তামাক কোম্পানিগুলোর এই কূটকৌশল বন্ধ করতে না পারলে বড় ধরনের সামাজিক বিপর্যয় ঘটার সম্ভাবনা প্রবল। আর এ বিপর্যয় থেকে দেশকে বাঁচাতে হলে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালী করার মাধ্যমে তামাক নিষিদ্ধ করা অত্যন্ত জরুরি।
সভাপতির বক্তব্যে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মীর খাইরুল আলম বলেন, তরুণ সমাজকে রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব। পাশাপাশি আমাদের অসচেতনতার কারণে আমাদের পরিবার, আমাদের সন্তানেরা যাতে হুমকির মুখে না পরে, সেজন্য আমাদের নিজ থেকে শক্ত অবস্থান নিতে হবে।
সভায় তামাকের ক্ষতিকর দিক ও তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালী করার পক্ষে তথ্যচিত্র উপস্থাপন করেন নারী মৈত্রীর টোব্যাকো কন্ট্রোল প্রজেক্টের প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর নাছরিন আকতার। আগত অতিথিদের প্রতি ধন্যবাদ জানান নারী মৈত্রীর প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর খালিদ বিন ইউসুফ।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৩০ ঘণ্টা, মার্চ ২৮, ২০২৪
এইচএমএস/আরএইচ