ঢাকা, শুক্রবার, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

রাজবাড়ীতে নোংরা পরিবেশে তৈরি হচ্ছে সেমাই

কাজী আব্দুল কুদ্দুস, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪১৬ ঘণ্টা, মার্চ ২৯, ২০২৪
রাজবাড়ীতে নোংরা পরিবেশে তৈরি হচ্ছে সেমাই

রাজবাড়ী: পবিত্র ঈদ উল-ফিতরকে সামনে রেখে রাজবাড়ী বিসিক শিল্প নগরীর সেমাই কারখানাগুলোতে অস্বাস্থ্যকর ও নোংরা পরিবেশে তৈরি হচ্ছে সেমাই। এখানকার তিনটি কারখানায় দৈনিক অন্তত ৫০ মণ সেমাই উৎপাদন করা হয়।

এসব সেমাই খোলা ও প্যাকেটজাত হয়ে জেলার চাহিদা মিটিয়ে চলে যাচ্ছে আশেপাশের কয়েকটি জেলায়।  

এলাকাবাসী জানায়, নোংরা পরিবেশে সেমাই তৈরি হলেও প্রশাসনের নজরদারির ঘাটতি রয়েছে। তবে, এ ব্যাপারে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শাওন ফুড ইন্ডাস্ট্রিজ (শাওনের চাঁদ সেমাই) ও দ্বীন ফুড প্রোডাক্ট (ডায়মন্ড সেমাই), কাজী ফুড প্রডাক্ট (কাজী সেমাই) এ তিনটি প্রতিষ্ঠান দৈনিক অন্তত ৫০ মণ সেমাই উৎপাদন করে।

সরেজমিনে কাজী ফুড প্রোডাক্টে গিয়ে দেখা যায়, কারখানার ভেতর থেকে তালা দিয়ে চলছে সেমাই তৈরির কাজ। বাইরে থেকে ভেতরে লোকজনের উপস্থিতি বোঝা গেলেও দীর্ঘক্ষণ ডাকাডাকির পরও কেউ সাড়া দিতে চান না। একপর্যায়ে বুঝিয়ে শুনিয়ে সংবাদ প্রচারের আশ্বাস দিলে ভেতরে ঢোকার অনুমতি মেলে। ভেতরে গিয়ে দেখা যায়, তৈরি করা সেমাই শুকানো হচ্ছে খোলা আকাশের নিচে। সঙ্গে মিশছে ধুলাবালি। ঘরের নোংরা মেঝেতেই রাখা হয়েছে সেমাই।

কারখানার শ্রমিকেরা জানান, সেমাই ঢেকে রাখার জন্য তারা মালিক ও ম্যানেজারকে পলিথিন কিনে দেওয়ার জন্য বলেছেন। কিন্তু তাদের পলিথিন এনে দেওয়া হয়নি। ফলে সেমাইয়ে মাছি বসছে।

শাওন ফুড ইন্ডাস্ট্রিজে গিয়ে দেখা যায়, নোংরা আর স্যাঁতসেঁতে পরিবেশে ক্ষতিকর রং মিশিয়ে তৈরি করা হচ্ছে সেমাই। শ্রমিকদের গায়ে নেই স্বাস্থ্যসম্মত পোশাক, খোলা হাতেই মাখানো হচ্ছে ময়দা।

দ্বীন ফুড প্রোডাক্টে গিয়ে দেখা যায়, অস্বাস্থ্যকর ও নোংরা পরিবেশে সেমাই তৈরির পর তা ঘরের মেঝেতে ঢেলে চকচকে প্যাকেটজাত করা হচ্ছে। সাংবাদিকদের দেখে তাড়াহুড়া করে গায়ে অ্যাপ্রোন পরেন শ্রমিকেরা। এ সময় তারা জানান, গরমের কারণে অ্যাপ্রোন খুলে রেখেছিলেন তারা।

এ ব্যাপারে স্বাস্থ্যকর পরিবেশের ব্যাপারে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি এই সব ফুড প্রোডাক্টের স্বত্বাধিকারীরা। উল্টো শ্রমিকদের দোষারোপ করে তারা বলেন, শ্রমিকদের আমরা অ্যাপ্রোন ও হ্যান্ডগ্লাভস দিয়েছি। স্বাস্থ্যসম্মতভাবে সেমাই তৈরি করতে বলেছি। কিন্তু কিছু কিছু সময় তারা নির্দেশনা মানছে না।

রাজবাড়ী সদর উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ আব্দুর রহমান বলেন, নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি করা এসব সেমাই খেয়ে মানুষের ডায়রিয়ার পাশাপাশি ক্যান্সারের মতো জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।

রাজবাড়ী জেলা নিরাপদ খাদ্য কর্মকর্তা মো. আসিফুর রহমান বলেন, বিসিক শিল্প নগরীর সেমাই কারখানাগুলো পরিদর্শন করে মানসম্মত সেমাই উৎপাদনের জন্য মালিক-শ্রমিকদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নির্দেশনা না মানলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৪১৬ ঘণ্টা, মার্চ ২৯, ২০২৪
এসএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।