ঢাকা, বুধবার, ২১ কার্তিক ১৪৩১, ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

মাদকসক্তি নিরাময় কেন্দ্রের ধারণা বদলে দিয়েছে ‘ওয়েসিস’ 

প্রশান্ত মিত্র, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৫৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ১, ২০২৪
মাদকসক্তি নিরাময় কেন্দ্রের ধারণা বদলে দিয়েছে ‘ওয়েসিস’ 

ঢাকা: মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রের কথা উঠতেই মারধর-নির্যাতন, কিংবা দীর্ঘ দিন আটকে রেখে অর্থ আদায়ের বিষয়টি সামনে চলে আসে। এছাড়া, পরিচয় জানাজানি হওয়ার ভয়েও মাদকাসক্ত ব্যক্তি ও তার পরিবার সহযে নিরাময় কেন্দ্রের দ্বারস্থ হতে চাননা।

তবে মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রের এই গতানুগতিক ধারণা পাল্টে দিয়েছে পুলিশ কল্যাণ ট্রাস্টের উদ্যোগে পরিচালিত  ‘ওয়েসিস’। প্রতিষ্ঠার মাত্র দুই বছরে অন্তত ২৫০ মাদকাসক্তকে সারিয়ে তুলে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে এনেছে এই মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রটি।

আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসরণ করে পরিচালিত এই প্রতিষ্ঠানটিতে সেবা নিয়ে সুস্থ্য জীবনে ফিরে আসা ব্যক্তি ও তার পরিবার সন্তোস প্রকাশ করছেন। মাদক সেবীদের অপরাধী হিসেবে নয় বরং রোগী হিসেবে চিকিৎসা দিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আনতে দৃঢ় প্রত্যয় ওয়েসিসের।

এদিকে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পুলিশের সামাজিক ও মানবিক দায়বদ্ধতা থেকে নামমাত্র মূল্যে সবচেয়ে উন্নত সেবা দিয়ে যাচ্ছে ওয়েসিস। বর্তমানে এই নিরাময় কেন্দ্রটিতে একসঙ্গে মাত্র ৬০ জনের চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে। বৃহৎ পরিরিসরে একসঙ্গে অন্তত ৫০০ জনকে চিকিৎসা দেওয়ার সক্ষমতা অর্জনের লক্ষ্য রয়েছে তাদের, সেজন্য অবকাঠামোগত বৃহৎ পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।

২০২১ সালের অক্টোবরে পুলিশ কল্যাণ ট্রাস্টের উদ্যোগে রাজধানীর অদূরে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের বসুন্ধরা রিভারভিউ প্রকল্পে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে ওয়েসিস। মনোমুগ্ধকর ও নান্দনিক পরিবেশে উন্নত ব্যবস্থাপনায় বর্তমানে দেশের সবচেয়ে অত্যাধুনিক মাদকাসক্তি নিরাময় ও মনষিক স্বাস্থ্য পরামর্শ কেন্দ্র এটি।

বর্তমানে ওয়েসিসের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার হাবিবুর রহমান। ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি থাকাকালীন হাবিবুর রহমানের পরিকল্পনা ও প্রস্তাবনাতেই প্রতিষ্ঠানটির যাত্রা শুরু হয়।

সম্প্রতি সরেজমিনে ওয়েসিসে গিয়ে দেখা যায়, মাদকসেবীদের স্বাভাবিক জীবনে ফেরাতে প্রয়োজনীয় সকল ধরনের সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা রয়েছে প্রতিষ্ঠানটিতে। রোগীদের স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে নিজস্ব হোটেলে তৈরি খাবার পরিবেশন থেকে শুরু করে রোগীদের শারীরিকভাবে ফিট রাখতে রয়েছে আধুনিক ব্যায়ামাগার। একই ভবনে লাইব্রেরি, নামাজ ও খেলাধুলার স্থান রয়েছে।

এছাড়া সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ, ইন্টারনেট ও যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা। বিশেষ করে পৃথক ফ্লোরে নারী রোগীদের জন্য রয়েছে যাবতীয় ব্যবস্থা।

ওয়েসিসের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, প্রতিষ্ঠানটি যাত্রা শুরুর দুই বছরের মধ্যেই অন্তত ২৫০ জন মাদকাসক্তকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। সুস্থ্য হওয়ার পর ঘরে ফিরে গেলেও প্রত্যেককে দীর্ঘ সময় ধরে 'ফলোআপে' রাখা হয়। এর ফলে ওয়েসিসে চিকিৎসা নেওয়া প্রত্যেকেরই স্বাভাবিক জীবন-যাপন করার বিষয়টিও নিশ্চিত করা হচ্ছে।

ওয়েসিস ভবনের নিচতলায় বহির্বিভাগে রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হয়, রয়েছে নিজস্ব ফার্মেসি। আরেকদিকে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় পরিষ্কার-পরিছন্ন রান্না ঘর। সেখানেই প্রতিবেলায় রোগীদের খাবার রান্না করা হয়।

এখানে মাদকাসক্ত ব্যক্তিদের আবাসিক ব্যবস্থায় চিকিৎসা সেবা প্রদানের পাশাপাশি ভবনটিতে রয়েছে সর্বাধুনিক প্যাথলজি ল্যাব। আবাসিকে পৃথক শীততাপ নিয়ন্ত্রিত ফ্লোর, জেনারেল বেডের ওয়ার্ড, ফায়ার ফাইটিং ব্যবস্থা, বিশেষ কেবিন ও ইনডোর গেমসের ব্যবস্থা রয়েছে। শুধু খেলাধুলাই নয়, রয়েছে নামাজের জন্য আলাদা কক্ষ ও পড়ালেখার জন্য লাইব্রেরির সুব্যবস্থাও।

এছাড়াও রয়েছে নার্সিং স্টেশন। ছাদে গড়ে তোলা হয়েছে সুসজ্জিত বাগান। প্রাকৃতিক পরিবেশে বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত রোগীদের জন্য ইয়োগা ও মেডিটেশন করার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে বাগানে।

ছাদবাগানের পাশেই রয়েছে ব্যায়ামাগার। অর্থাৎ মাদকাসক্তদের পরিপূর্ণ সেবা দিতে সরকারের সবগুলো বিধিমালা মেনেই গড়ে তোলা হয়েছে ওয়েসিস। যেখানে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা ছাড়াও বিশেষজ্ঞ সাইকোলজিস্ট, সাইকোথেরাপিস্ট, ফিজিওথেরাপিস্ট, ইয়োগা এক্সপার্ট এবং অভিজ্ঞ অ্যাডিকশন কাউন্সেলরদের মাধ্যমে সেবা পাচ্ছেন সেবা প্রত্যাশীরা।

যা বলছেন ওয়েসিসে সেবা নিয়ে সুস্থ্যরা ও তাদের পরিবার

ভালোবেসে ঘর বাধেন ফারজানা-শামীম (ছদ্মনাম) দম্পতি। ব্যবসায়ী স্বামীর সঙ্গে ভালোই চলছিল সংসার জীবন দুই সন্তানের জননী ফারজানার। একসময় টের পান স্বামী ফেনসিডিলে আসক্ত। একপর্যায়ে মাদকাসক্ত স্বামীর আচরণে অতিষ্ঠ হয়ে এই সংকট থেকে বের হওয়ার উপায় খুঁজতে থাকেন।

কোথায় মাদকাসক্ত স্বামীকে চিকিৎসা দেওয়া যায় খুঁজতে থাকেন। এরমধ্যে আত্মীয় স্বজনরা কিংবা স্বামীর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে জানাজানি হলেও চলবেনা। মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে মারধরের ভয়ে সেখানেও স্বামীকে দেওয়ার সাহস হচ্ছিলো না। প্রায় তিনবছর ধরে খোঁজখবর নিয়ে একপর্যায়ে সন্ধান পান ওয়েসিসের।

ওয়েসিসে যোগাযোগের পর সেখানকার দায়িত্বরতরা পরিচয় গোপন রাখা এবং কোনধরনের নির্যাতন করা হয়না আশ্বাস দেওয়া হয়। একপর্যায়ে স্বামীকে ওয়েসিসে ভর্তি করান ফারজানা। সেখানে চারমাসের চিকিৎসা শেষে বর্তমানে শামীম পূর্ণ সুস্থ্য জীবনযাপন করছেন।

সুস্থ্য থাকলেও ওয়েসিসের নিয়ম অনুযায়ী দ্বিতীয়বারের মতো স্বামীকে নিয়ে ফলোআপে এসেছেন ফারজানা। কথাপ্রসঙ্গে স্বামীকে আগের মতো স্বাভাবিক জীবন-যাপনে অভ্যস্ত দেখে উচ্ছাস প্রকাশ করলেন এই নারী।

তিনি বাংলানিউজকে জানান, শামীমকে ওয়েসিসে রেখে চিকিৎসা দেওয়ার বিষয়টি তিনি ছাড়া তার পরিবারের কেউ জানেনা। নিজের বাড়ির দারোয়ানও জানেনা। অন্যকোথাও দিলে হয়তো জানাজানি হয়ে যেতো এমন আশঙ্কার কথা জানান।

তিনি বলেন, যখন জানতে পারি আমার স্বামী মাদকাসক্ত, তখন শুধু ভেবেছি তাকে এই পথ থেকে ফেরাতে হবে। কিন্তু কিভাবে করবো, এ নিয়ে অনলাইনে অনেক ঘাটাঘাটি করেছি। অনেক জায়গায় কথা বলেছি। কিন্তু মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রগুলোতে প্রায় মারধর করার কথা শুনি, এজন্য সাহস পাচ্ছিলামনা। ২০২০-২৩ সাল পর্যন্ত অনেক জায়গায় তাকে দেওয়া চেষ্টা করেছি।

কিন্তু পরিবার আছে, তার নিজের ব্যবসা আছে, সে নিজে অনেক সামাজিক কর্মকাণ্ডে জড়িত। তাই বাইরে থেকে কারো কাছ থেকে সহায়তা চাইবো এমন পরিস্থিতিও ছিলোনা। একপর্যায়ে ওয়েসিসের কথা জানতে পারি। এখানে যোগাযোগ করার পর দায়িত্বরত পুলিশের এক কর্মকর্তা তাকে মারধর না করার বিষয়টি আশ্বস্ত করেছে, কেউ জানতে পারবেনা সেটিও নিশ্চিত করার কথা বলা হয়। পরে সিদ্ধান্ত নিয়ে ওয়েসিসে দিয়ে দেই। এখন আমার স্বামী একদমই সুস্থ্য। আর ওয়েসিসে যে মাপের সেবা দিয়েছে, যে মানের খাবার দিয়েছে সে অনুযায়ী টাকাও খুব সাামান্যই লেগেছে।

সুস্থ্য জীবনে ফেরা শামীম জানান, টানা ৭-৮ বছর ধরে তিনি নিয়মিত ফেন্সিডিল সেবন করতেন। বন্ধুদের প্ররোচনায় প্রথমে ফেন্সিডিল সেবন করেন। এরপর থেকে একসময় নিয়মিত সেবন করেন, শেষের দিকে দিনপ্রতি তার ৩-৫ হাজার টাকা মাসে লাখ টাকার ফেন্সিডিল লাগতো।

তিনি বলেন, প্রথমে ফেন্সিডিল সেবনের বিষয়টি কেউ জানতোনা। একপর্যায়ে সবসময় মেজাজ খারাপ থাকতো, তখন আমার স্ত্রী বিষয়টি জেনে যান। একমাত্র তার স্ত্রীর চেষ্টা আর ওয়েসিসের কারণে আমি স্বাভাবিক জীবনে আসতে পেরেছি। এখানে চার মাস ছিলাম কখনো কেউ খারাপ ব্যবহারও করেনি আমার সঙ্গে। এখন দ্বিতীয় বারের মতো ফলোআপে এসেছি। আসার পর ডোপ টেস্ট করেছে ফলাফল নেগেটিভ এসেছে। এখান থেকেই ফোন করে আমাকে ফলোআপে আসতে বলেছে। একা একা নেশা থেকে বের হতে যে কষ্টটা হতো, এখানে তা হয়নি। ওয়েসিস আসলে রিহ্যাব না, এটা একটা মেডিক্যাল সেন্টার।

২০১৯ সালে কলেজ জীবনেই ভয়াবহ নেশা ইয়াবায় আশক্ত হয়ে পড়েন রায়হান (ছদ্মনাম)। বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডায় একটু একটু করে ইয়াবার দিকে ঝুঁকে পড়েন এই তরুণ। হাতখরচের জন্য দেওয়া টাকা থেকে বন্ধুদের মাধ্যমেই ইয়াবা এনে নিয়মিত সেবন করতেন তিনি, মাঝেমধ্যে দিনপ্রতি দেড় থেকে দুই হাজার টাকার ইয়াবা গ্রহণ করতেন। টানা তিন বছর আসক্ত থাকার পর একপর্যায়ে নিজের ভুল বুুঝতে পেরে পরিবারকে জানান রায়হান। পরে পরিবারের সদস্যরা খোঁজখবর নিয়ে রায়হানকে ওয়েসিসে রেখে চিকিৎসা করান।

চার মাসের চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফেরার দিন রায়হান বাংলানিউজকে বলেন, ইয়াবা আসক্তির সময়ে পরিবারের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো যাচ্ছিলো না। পরে বিষয়টি বাবা-মাকে জানালে তারা আমাকে ওয়েসিসে ভর্তি করায়। ৪ মাসের চিকিৎসা শেষে আমি এখন পুরোপুরি সুস্থ্য, এখানকার সকলের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ।

এই তরুণ বলেন, ইয়াবায় আসক্তির পর সারা শরীরে ব্যাথা অনুভব হতো। ঠিকঠাক ঘুম হতোনা, মেজাজ খিটখিটে থাকতো। তরুণদের অনুরোধ করবো, সাময়িক আনন্দের জন্য এমন নেশায় ঝুঁকে কেউ যেন জীবন ধ্বংস করে না দেয়। এজন্য খারাপ বন্ধুদের এড়িয়ে চলতে হবে।

যেভাবে চলে চিকিৎসা

ওয়েসিসে প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এখানে পূর্ণকালীন কাজ করছেন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মোর্তজা হাসান।

তিনি বলেন, এখানে কোনো মাদকসেবী এলে প্রথমে দেখা হয় তিনি কি ধরনের মাদক গ্রহণ করেন, বয়স কত এবং তার অন্য কোনো শারীরিক ও মানসিক সমস্যা আছে কি-না। এটা বিবেচনায় নিয়ে তার চিকিৎসা শুরু হয়। চিকিৎসার প্রথম ধাপ হচ্ছে ডিটক্সিফিকেশন। মাদক গ্রহণের ওপর একজন রোগীর চিকিৎসা ও মেডিসিন নির্ভর করে।

পাশাপাশি যদি অন্য কোনো সমস্যা- যেমন শারীরিক ও মানসিক সমস্যা থাকে সেটার ওপর নির্ভর করেও ওষুধ প্রয়োগ করতে হয়। এই ডিটক্সিফিকেশন সময়কালটা কারও এক মাস আবার কারও দুই মাস লেগে যায়। অনেকের আবার কম সময়ও লাগে।

ডা. মোর্তজা বলেন, এরপর চলে লাইফস্টাইল মটিভেশন প্রোগ্রাম। এটিতে মটিভিশন, সাইকোথেরাপি, সাইকো এডুকেশন প্রোগ্রামগুলো চলে। তার জীবন দর্শন, মাদক নিয়ে যে তার চিন্তা-ভাবনা, ব্যক্তিগত, পারিবারিক জীবন সবকিছু ওঠে আসে এবং মাদক থেকে পূর্ণাঙ্গ মুক্ত হওয়ার উপায় পান তিনি। এজন্য শুধু তাকে নয়, তার পরিবার ও স্বজনদেরও কাউন্সিলিংয়ের মাধ্যমে তার সুস্থ হওয়ার পথটা বের করা হয়।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বর্তমানে বেশ সংখ্যক নারীরাও মাদক সেবনে জড়িয়ে যাচ্ছেন। অনেক রোগী আমরা পাচ্ছি যেসব স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া নারী শিক্ষার্থী রয়েছে। তাদের সবচেয়ে বেশি সংখ্যক নারী রয়েছেন যারা ঘুমের ওষুধ বেশি সেবন করেন।

যা বলছেন ওয়েসিসের দায়িত্বরতরা

জানা গেছে, গত দুই বছরের পথ চলা তাদের প্রতিষ্ঠান থেকে ২৫০ এর বেশি নারী-পুরুষ চিকিৎসা নিয়ে পরিবারের কাছে ফিরে গেছেন। তারা কেউই এখন মাদক গ্রহণ করে না। উল্টো কেউ মাদক বিরোধী সচেতনা কার্যক্রমে জড়িত।

ওয়েসিসে বর্তমানে ৪৬ জন পুরুষ ও ১৪ জন নারী মিলিয়ে মোট ৬০ জনকে একসঙ্গে চিকিৎসা দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। বহিঃবিভাগে বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে ২৪ ঘণ্টা সেবা দেওয়া হয়।

এছাড়া, টেলিমেডিসিনের মাধ্যমেও ২৪ ঘণ্টা সেবা দেওয়া হচ্ছে। যে কেউ যে কোন সময় ফোন করেই সেবা-পরামর্শ নিতে পারছেন। সন্তান বা পরিবারের কোনো সদস্য মাদক সেবন করছে, এমন সন্দেহ থেকে অনেকে ফোন করে সেবা নিচ্ছেন। ওয়েসিসের বিশেষজ্ঞরাও বীনামূল্যে প্রতিমাসে দেড়শতাধিক ব্যক্তিকে ফোনে (০১৯৩০-৪০৪০৪০) বিভিন্ন পরামর্শ দিচ্ছেন।

প্রতিষ্ঠানটির প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও পুলিশ পরিদর্শক সুশান্ত নারায়ণ বলেন, মাদকাসক্ত সব রোগীই এখানে চিকিৎসা নিতে পারেন। যারা চিকিৎসা নিতে আসেন তাদের সব সময় কাউন্সিলিং করা হয়। তাকে যেসব ওষুধ দেওয়া হচ্ছে সব ঠিক মতো কাজ করছে কি না এসব বিষয় খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখা হয়।

নির্ধারিত চার মাস চিকিৎসা শেষে কেউ ফিরে গেলেই ওয়েসিসের কাজ শেষ হয়ে যায় না। একজন সিনিয়র কর্মকর্তা প্রতিনিয়ত রোগী ও তার স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন এবং তারা ওয়েসিসে এলে বিনামূল্যে ফলোআপ চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয়। ফলোআপে যদি আমাদের সন্দেহ হয় তাহলে ডোপটেস্ট করা হয়। এইজন্য কেউ পুনরায় মাদকে জড়াতে পারেন না।

তিনি বলেন, সব ধরনের গোপনীয়তা বজায় রেখে রোগী আনা ও সেবা দেওয়া হয়। পরিবারের নির্দিষ্ট একজন ব্যক্তি ছাড়া রোগীর বিষয়ে অন্যকেউ জানতে পারেনা। চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফেরার পর ওই রোগীর যে কাউন্সিলিং প্রয়োজন হয় সেটি যতদিন দরকার তাকে আমরা ফ্রি দিয়ে থাকি। রোগীকে স্থায়ীকে ভাল করতে যা যা উদ্যোগ নেওয়া দরকার হয় আমরা তার সবটাই করি।

আমাদের এখানে বাইরের খাবারের অনুমোদন নেই। টাটকা খাবার এখানেই প্রতিদিন রোগী ও স্টাফ মিলে প্রায় ৭০ জনের রান্না করা হয় বলেও জানান পুলিশ পরিদর্শক সুশান্ত।

ওয়েসিস সম্পর্কে জানতে চাইলে ডিএমপি কমিশনার ও ওয়েসিস চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, সামাজিক ও মানবিক দায়বদ্ধতা থেকে পুলিশ কল্যাণ ট্রাস্ট এই অলাভজনক প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা করছে। আন্তর্জাতিক মানদণ্ডানুযায়ী সকল নিয়ম মেনে ওয়েসিস পরিচালিত হচ্ছে। এখানে মাদকাসক্তদের অপরাধী হিসেবে নয়, রোগী হিসেবে চিকিৎসা দিয়ে তাদেরকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা হয়।

ওয়েসিসে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা ২৪ ঘণ্টা চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। যে কেউ চাইলেই ফোনে সম্পূর্ণ বীনামূল্যে সার্বক্ষণিক সেবা নিতে পারছেন।

ওয়েসিসের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, মানিকগঞ্জে একটি বড় পরিসরে রিসোর্টের মতো অন্তত ৫০০ শয্যার একটি নিরাময় কেন্দ্র গড়ে তোলা হবে। যেখানে খেলার মাঠ, উমুক্ত জায়গা থাকবে, পাশের কালিগঙ্গা নদীতে নৌকা ভ্রমণের ব্যবস্থাও থাকবে।

অনেক ব্যস্ততার মধ্যেও সার্বক্ষণিক প্রতিষ্ঠানটির বিষয়ে খোঁজখবর রাখেন বলে জানান ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান। তার চেষ্টা, প্রতিষ্ঠানটিতে সর্বোচ্চ সেবার মান বজায় রাখা।

বাংলাদেশ সময়: ১০৫২ ঘণ্টা, মার্চ ৩১, ২০২৪
পিএম/এমএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।