ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

মামলার ‘পাচারের শিকার’ নারীর সংবাদ সম্মেলন বাদীর বিরুদ্ধে 

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭০৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ৩, ২০২৪
মামলার ‘পাচারের শিকার’ নারীর সংবাদ সম্মেলন বাদীর বিরুদ্ধে 

বরিশাল: যাকে ‘ভারতে পাচার করে বাধ্যতামূলক যৌনতার জন্য বিক্রির’ অভিযোগ তুলে মানবপাচার আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে, সেই নারীই বাদীর বিপক্ষে বিভিন্ন অভিযোগ তুলে সংবাদ সম্মেলন করেছেন। একই সঙ্গে মানবপাচার আইনে দায়ের হওয়া ওই মামলার অভিযোগ মিথ্যে বলে দাবি করেছেন তিনি।


 
বুধবার (৩ এপ্রিল) বেলা ১১টায় শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত বরিশাল প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন নিপা বেগম নামের ওই নারী।

লিখিত বক্তব্যে তিনি জানান, বরিশাল মহানগরের বিমানবন্দর থানাধীন মাকরকাঠী এলাকার মিলন আকনের সঙ্গে নিপার ২০০৬ সালে বিয়ে হয়। দীর্ঘ সংসার জীবনে তাদের ইফাত নামে একটি ছেলে হয়, যার বয়স ১৬ বছর। বছর কয়েক পূর্বে নিপা জানতে পারেন মিলন আকন একজন পেশাদার মাদক কারবারি এবং তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় মামলা রয়েছে, বিভিন্ন সময়ে এ কারণে কারাভোগও করেছেন মিলন।

সংবাদ সম্মেলনে নিপা বলেন, আমি ধার্মিক হওয়ায় তাকে বাধা দিয়েও থামাতে পারিনি। বরং আমাকে বিভিন্ন সময়ে মাদকপাচারের জন্য চাপ দিত মিলন। আর না শুনলে শারীরিক ও মানসিকসহ বিভিন্ন নির্যাতন চালাতো। যা থেকে রক্ষা পেতে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সহায়তা কামনাসহ পারিবারিক আদালতেরও দ্বারস্থ হয়েছিলাম। কিন্তু মিলন আকন সেসব অভিযোগ আমলে না নিয়ে আমার ওপর নির্যাতনের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছিল। তার নির্যাতন থেকে বাঁচতে আমি ২০২২ সালের ২২ অক্টোবর বগুড়া রোড কাজী অফিস থেকে স্বেচ্ছায় মিলন আকনকে তালাক দেই। পরে পারিবারিকভাবে মীমাংসা করে সংসারে জোড়া লাগলেও মিলনের নির্যাতনের মাত্রা বেড়ে যায়। ২০২৪ সালের ২২ মার্চ মিলন আকনকে পুনরায় তালাক দেই।

তিনি বলেন, এদিকে বরিশাল নগরের রুপাতলী এলাকার বাসিন্দা আলমগীর হোসেনের সঙ্গে আমি নতুন করে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হই। শারীরিকভাবে অসুস্থতার কারণে ডাক্তার দেখাতে আমি ও আমার বর্তমান স্বামী আলমগীর হোসেন ভারতে যাওয়ার চিন্তা করি। এদিকে ছেলে ইফাতের এসএসসি পরীক্ষা শেষ হওয়ায় তাকেও নিয়ে যাওয়ার চিন্তা করি। পরে গত ২৪ মার্চ আমার ছেলে, বর্তমান স্বামীসহ আমি ভারতের কলকাতায় যাই এবং সেন্ট্রাল পয়েন্ট গেস্ট হাউজে উঠি।

নিপা বলেন, পরের দিন ২৫ মার্চ কয়েকজন যুবক সেই হোটেলে এসে আমার বর্তমান স্বামী আলমগীরকে লাঞ্ছিত করে। পাশাপাশি ইফাতকে অপহরণের অভিযোগ এনে আমার কাছ থেকে তাকে ছিনিয়ে নিয়ে বাবা মিলন আকনের কাছে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেয়, যে সংক্রান্ত প্রমাণ আমার কাছে রয়েছে।  স্থানীয় পুলিশও আমাদের ভারতে যাওয়ার কাগজপত্র যাচাই করে বৈধ পায়।  

তিনি বলেন, সাবেক স্বামী মিলনের ভয়ে আমি চিকিৎসা না করিয়ে পরের দিন বর্তমান স্বামী আলমগীরসহ ২৬ মার্চ আকাশপথে দেশে চলে আসি। তবে ওই সময়ের মধ্যে মিলন আমার বর্তমান স্বামীর পরিবারকে বিভিন্নভাবে জীবননাশের হুমকি-ধমকি দিয়ে আসছিল। তার হুমকি-ধমকি থেকে বাঁচতে গত ৩১ মার্চ আমি কোতোয়ালি মডেল থানায় মিলন আকনের বিরুদ্ধে একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করি। সেই জিডির খবরে পরের দিন ১ মার্চ মিলন আকন বাদী হয়ে মানবপাচার আইনে একটি মিথ্যে অভিযোগে মামলা করেন। যেখানে আমার বর্তমান স্বামী আলমগীর হোসেনসহ দুজনকে আসামি করা হয়েছে।

নিপা বলেন, মামলায় মিলন আকন উল্লেখ করেছেন, আমাকে ও আমার ছেলে ইফাতকে আমেরিকায় নেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে ভারতে পাচার করা হয়েছে, অথচ আমরা সবাই বৈধ পাসপোর্ট ও ভিসা নিয়ে ভারতে গিয়েছি। আবার বলা হয়েছে আমাকে নির্যাতন ও যৌনকর্ম করাতে বাধ্য করাচ্ছে আলমগীর হোসেন ও অন্য আসামিরা। কিন্তু ভারতে আমি, আমার স্বামী ও ছেলে ছাড়া অন্য কেউ যায়নি। মিলনের মামলায় বলা হয়েছে, ভারতের কলকাতায় আমাদের অজ্ঞাত স্থানে রাখা হয়েছে, তাহলে মিলনের লোকজন গিয়ে আমার স্বামীকে লাঞ্ছিত ও ছেলে জোরপূর্বক নিয়ে আসলো কীভাবে? আমার ছেলেক তারা নিয়ে এসেছে- তার ভিডিও প্রমাণ আমার কাছে থাকলেও মামলায় বলা হয়েছে, সে নাকি কৌশলে পালিয়ে বাংলাদেশ এসেছে।  

তিনি বলেন, কলকাতায় সেদিন মিলন ভিডিওকলেও ওই লোকদের সঙ্গে কথা বলেছে, যার প্রমাণও আমার কাছে রয়েছে। সর্বোপরি পাচার হলে তো ভারতে থাকার কথা। কিন্তু আমি কীভাবে বর্তমানে বরিশালে অবস্থান করছি এবং স্বামী আলমগীরের সঙ্গে সংসার করছি? আর আমার ছেলেও তো মিলনের কাছে রয়েছে।

তিনি বলেন, আমি ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই, সেই সঙ্গে আমার নাবালক ছেলের নিরাপত্তা চাই। কারণ ওকে নানানভাবে ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নিপার বর্তমান স্বামী আলমগীর হোসেন বলেন, ইফাত নিপার ছেলে, সে তার মায়ের সঙ্গে কোথাও গেলে আমি বাধা দেব কেন? ইফাতের যেমন তার মায়ের প্রতি অধিকার রয়েছে, তেমনি মায়েরও রয়েছে তার প্রতি। তবে নিপা বর্তমানে আমার স্ত্রী, তাই তার ভালোমন্দ দেখভাল করার কথা আমারই। তাকে বাংলাদেশের চিকিৎসকদের কথা অনুযায়ী উন্নত চিকিৎসার জন্য ভারতে নিয়েছিলাম, আর এটাই আমার জন্য কাল হয়েছে। এখন আমি ও আমার স্বজনরা মানবপাচার মামলার আসামি।  

এদিকে আদালতে দায়েরকৃত মামলাটির কাগজপত্র পাওয়ার পর পুরো ঘটনা তদন্তে নামবে পুলিশ। আর তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত না হলেও নির্দোষ কাউকে জড়ানোর সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশের কর্মকর্তারা।

বাংলাদেশ সময়: ১৭০১ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৩, ২০২৪
এমএস/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।