লক্ষ্মীপুর: ঈদ আসলেই লক্ষ্মীপুরের মজুচৌধুরীর হাট নৌ-রুটে যাত্রীদের চাপ বেড়ে যায়। সারা বছরই এ রুট দিয়ে ভোলা-বরিশাল, পটুয়াখালীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে লোকজন যাতায়াত করেন।
তবে প্রতি বছরের ১৫ মার্চ থেকে ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত নৌ-রুটকে বিপজ্জনক হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। নদী উত্তাল থাকায় এই সময়টাতে ছোট আকারের যে কোনো ধরনের নৌ-যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়।
অন্যদিকে শুষ্ক মৌসুমে নদীতে পানির গভীরতা কম থাকে। ফলে মজুচৌধুরীর হাট থেকে মেঘনা নদী পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের রহমতখালী চ্যানেল প্রতিনিয়ত নাব্যতা সংকটে ভোগে। গভীরতা বাড়াতে ড্রেজিং প্রকল্প চলমান থাকলেও কোনো কাজেই আসছে না। ফলে এ চ্যানেলটিতে ভারি নৌ-যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটে।
তবে এলাকাবাসী, যাত্রী এবং নৌ-যান সংশ্লিষ্টদের দাবি, এ ঘাটকে মজুচৌধুরীর হাট পশ্চিমে মেঘনা নদীর মুখে স্থানান্তর করলে রহমতখালী চ্যানেলের প্রতিবন্ধকতা দূর হবে। বছরের পর বছর অর্থ ব্যয় করে ড্রেজিংয়ের প্রয়োজন পড়বে না।
স্থানীয়রা জানায়, ঈদ মৌসুমে এ ঘাটে উপচে পড়া যাত্রীদের দুর্ভোগের মধ্যে পড়তে হয়। আর তাদের এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে এক শ্রেণীর প্রভাবশালীরা বাণিজ্য শুরু করে দেয়। এ সময়টাতে ছোট নৌ-যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও লক্ষ্মীপুরের মজুচৌধুরীর হাটে এ নিষেধাজ্ঞা মানা হচ্ছে না।
আরও জানা যায়, এখন কালবৈশাখীর মৌসুম চলছে। যেকোনো মুহূর্তে নদী উত্তাল হয়ে পড়তে পারে। কিন্তু এমন ঝুঁকিপূর্ণ মুহূর্তেও মজুচৌধুরীর হাট থেকে স্পিডবোট, ট্রলার এবং কাঠের নৌকা দিয়ে যাত্রী পারাপার করছে প্রভাবশালী একটি চক্র। ফলে উত্তাল নদীতে যে কোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটতে পারে।
স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রহমতখালী চ্যানেলে পানির গভীরতা না থাকায় জোয়ার এবং ভাটার ওপর নির্ভর করে যাত্রীবাহী লঞ্চ, সি-ট্রাক এবং ফেরি চলাচল করে। ভাটার সময় বড় নৌ-যান বন্ধ থাকলে স্পিডবোট এবং ট্রলারে করে যাত্রী পারাপার করা হয়। জীবনের ঝুঁকি জেনেও দ্রুত বাড়ি বা কর্মস্থলে ফেরার আশায় যাত্রীরা অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে এসব ছোট নৌ-যান দিয়ে মেঘনা পাড়ি দিচ্ছেন।
স্থানীয়দের অভিযোগ, রহমতখালী চ্যানেলে নাব্যতা না থাকায় লঞ্চসহ বড় নৌ-যান সহজে চলাচল করতে পারছে না। এ সুযোগে প্রতি ঈদ মৌসুমে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে সংশ্লিষ্টদের ম্যানেজ করে ঘাট পরিচালনা করছে ইজারাদারসহ রাজনৈতিক নেতারা। প্রশাসনও তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
লক্ষ্মীপুরের মজুচৌধুরীর হাট থেকে নৌপথে পটুয়াখালীর যাত্রী মোশাররফ হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, আমি এ রুট দিয়ে যাতায়াত করি। প্রায় সময় নদীতে পানির গভীরতা কমে গেলে নৌ-যান আটকে যায়। তখন আমাদের দুর্ভোগে থাকতে হয়। এ জন্য অনেক যাত্রী স্পিডবোট বা সি-ট্রাকে করে নদী পাড়ি দেয়। এ সময়টাতে এটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ।
তিনি আরও বলেন, ঘাটটিকে আরও পশ্চিমে মেঘনা নদীর কাছাকাছি স্থানান্তরিত করা প্রয়োজন। তাতে নৌ-যানগুলোকে রহমাতখালী চ্যানেল পাড়ি দিতে হবে না।
মজুচৌধুরীর হাটের সি-ট্রাকের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা (চাটার) বশিরুল ইসলাম বলেন, রহমতখালী চ্যানেলে পানি থাকে না। ভাটার সময় বসে থাকতে হয়। এ সময়টা কাজে লাগায় নিষিদ্ধ স্পিডবোট এবং ট্রলার পরিচালকরা। তারা নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে যাত্রী পারাপার করে। ফলে আমরা যাত্রী পাচ্ছি না।
একই কথা জানিয়ে এমভি পারিজাত নামক লঞ্চের মাস্টার মো. নজরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, ভাটার সময় লঞ্চ বন্ধ রাখতে হয়। মাঝেমধ্যে ভাটা পড়লে রহমতখালী চ্যামেলের মাঝখানে লঞ্চ আটকে যায়। তখন জোয়ারের জন্য অপেক্ষা করতে হয়। এতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় ব্যয় হচ্ছে। এখন ঈদের মৌসুম। যাত্রীদের চাপ বাড়বে। কিন্তু তাদের সহজে পারাবার করা যাবে না। রহমতখালীর গভীরতা না বাড়লে লঞ্চ চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যেতে পারে। তাই ঘাটটিকে স্থানান্তরের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।
লক্ষ্মীপুর মজুচৌধুরীর হাটের নৌ-পুলিশের ইনচার্জ (উপপরিদর্শক) জাহাঙ্গীর বাংলানিউজকে বলেন, নদীতে ছোট নৌ-যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। যারা এগুলো পরিচালনা করে, তাদেরকে নিষেধ করেছি। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ছোট নৌ-যানে যাত্রী পারাপার করলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫০৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৫, ২০২৪
এসএম