ঢাকা, শুক্রবার, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

‘ঈদের দিনে নাতিটাকে খুব মনে পড়বে’ বলে কাঁদলেন বৃদ্ধাশ্রমের রাবিয়া

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১১২ ঘণ্টা, এপ্রিল ১০, ২০২৪
‘ঈদের দিনে নাতিটাকে খুব মনে পড়বে’ বলে কাঁদলেন বৃদ্ধাশ্রমের রাবিয়া

নীলফামারী:  সন্তান বা আপনজনের কাছে ঠাঁই না মেলায় বৃদ্ধাশ্রমেই কাটছে ১০ বৃদ্ধার জীবন।  

নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার কামারপুকুর ইউনিয়নের ডাঙ্গাপাড়ায় অবস্থিত মহফুজ বৃদ্ধাশ্রমে তারা বসবাস করছেন।

 আর সবার মতো আনন্দময় ঈদ হবে তাদের। খুশির দিনে প্রিয়জনদের কাছে পাবেন না তারা, পাবেন না উপহার।  

তবে বৃদ্ধাশ্রমটির প্রতিষ্ঠাতা মাহফুজ আলমের দেওয়া নতুন শাড়ি, সালোয়ার কামিজ পরে যতটুকু খুশি হতে পারেন তারা। ঈদের দিন সেমাই, পোলাউয়ের মতো মজাদার খাবারের আয়োজন করা হয়েছে তাদের জন্য। সেই সঙ্গে কর্তৃপক্ষের দেওয়া ১ হাজার টাকায় বোনাসে পছন্দের জিনিসও কিনবেন তারা।

প্রায় তিন একর জমিতে গড়ে উঠেছে বৃদ্ধাশ্রমটি। শতাধিক আসনের ওই বৃদ্ধাশ্রমটিতে বসবাস করেন মাত্র ১০ জন বৃদ্ধা। তাদের দেখভাল করার জন্য সেখানে রয়েছেন ৫ জন কর্মচারী। এদের মধ্যে একজন পরিচালক। বৃদ্ধাশ্রমটিতে থাকা-খাওয়া সবই বিনামূল্যে।  

প্রতিষ্ঠাতা মাহফুজ আলম নিজেই এর অর্থায়ন করে থাকেন। গত ২০২২ সালে ঢাকার বিশিষ্ট শিল্পপতি মাহফুজ আলম ওই বৃদ্ধাশ্রমটি গড়ে তোলেন। তার হিমাগার ও অন্যান্য ব্যবসাও রয়েছে। এলাকায় তিনি দানবীর হিসাবে বেশি পরিচিত তিনি।

উপজেলার কাশিরাম বেলপুকুর ইউনিয়নের হাজারীহাট থেকে আসা রাবিয়া বেগম (৭২) কথা বলতে বলতে বেশ কয়েকবার শাড়ির আঁচলে চোখ মুছলেন।  

তিনি বলেন, আমার ছেলে অনেক বড় ব্যবসায়ী, বন্দরে তার বড় দোকান রয়েছে। আমাকে তার বাড়িতে অনেক অশান্তি হচ্ছিল। বউমা আমাকে বোঝা মনে করতো। তাই ছেলে আমাকে এখানে রেখে গেছে। এখন এই বৃদ্ধাশ্রমই আমার বাড়ি। ঈদের দিন কলেজে পড়া নাতিটাকে খুব মনে পড়বে। আমি ওদের মনে করতে চাই না। ওরা আমার কেউ না।  

এসব বলে বেশ খানিকক্ষণ কাঁদলেন এই বৃদ্ধা।

অলিমা বেগমের (৭৫) বাড়িও হাজারীহাটে। এক মেয়ে তিন ছেলে তার। নাতি-নাতনিও আছে। তবে তিনি কারো নাম মুখে নিলেন না।  

মৃদুস্বরে বললেন, সবার কাছে আমি মরে গেছি। এখন মাহফুজ বৃদ্ধাশ্রমই আমার বাড়ি। মাহফুজই আমার ছেলে, আমার মেয়ে।

বৃদ্ধাশ্রমের পরিচালক মাওলানা রাসেল আহমেদে বলেন, এখানে যারা রয়েছেন তারা সকলেই আমার মায়ের মতো। ভবিষ্যতে এই বৃদ্ধাশ্রমে পুরুষদেরও জায়গা হবে। সে অনুযায়ী কাজ চলছে। মাহফুজ স্যার বৃদ্ধাশ্রমের সকলের থাকা-খাওয়া ফ্রি করে দিয়েছেন। খালাদের তিনি মায়ের চোখে দেখেন।

তিনি আরও বলেন, বৃদ্ধাশ্রমের বৃদ্ধাদের বেশির ভাগ এখানে এসেছেন পরিবারের আপনজনের অবহেলার কারণে। এরমধ্যে বেশি রয়েছে ছেলের বউয়ের অত্যাচার সহ্য করতে না পারা বৃদ্ধা। তবে কারো জন্য তাদের অভিশাপ নেই। ভালো থাকুক ছেলে-মেয়ে আর আপনজন এটাই কামনা তাদের। ঈদ হোক তাদের আননন্দময় বৃদ্ধাশ্রমের খালাদের এটাই আকুতি।

বাংলাদেশ সময়: ২১০৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ১০, ২০২৪
এসএএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।