ঢাকা: দরজায় কড়া নাড়ছে বৈশাখ। পুরোনোকে বিদায় করে আসছে বাংলা নববর্ষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ।
প্রতি বছরের মতোই রাজধানীর রমনা বটমূলে গান, কবিতা ও নানা আয়োজনে নববর্ষকে বরণ করবে ছায়ানট। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের উদ্যোগে মঙ্গল শোভাযাত্রা বের হবে। থাকবে শিল্পকলা একাডেমিসহ বিভিন্ন সংগঠনের নানা আয়োজন।
ছায়ানটের এবারের বর্ষবরণের প্রতিপাদ্য ‘স্বাভাবিকতা ও পরস্পরের প্রতি সম্প্রীতির সাধনা’। এই অনুষ্ঠান ঘিরে এখন চলছে মঞ্চ তৈরিসহ চূড়ান্ত প্রস্তুতি। রমনা পার্ক প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠানস্থলের সীমারেখা টানা হচ্ছে।
আগামী শুক্রবারের মধ্যে মূল মঞ্চ তৈরি সম্পন্ন হবে। বৈশাখের আয়োজন ঘিরে সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা দিতে গোটা এলাকা ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার (সিসি ক্যামেরা) আনছে গণপূর্ত অধিদপ্তর। অন্যদিকে ধানমন্ডির ছায়ানট ভবনে প্রায় দেড়শ শিল্পীকে নিয়ে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের চূড়ান্ত মহড়া চলছে।
ছায়ানটের সাধারণ সম্পাদক লাইসা আহমদ লিসা জানান, ‘পহেলা বৈশাখের আগের দিন মঞ্চে শিল্পীরা চূড়ান্ত মহড়ার অংশ নেবেন। অনুষ্ঠানের নিরাপত্তার জন্য সব ব্যবস্থা নেবে ডিএমপি। ’
পহেলা বৈশাখ সকাল ৯টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ থেকে মঙ্গল শোভাযাত্রা শুরু হবে। সেখানে চলছে শেষ সময়ের প্রস্তুতি। বর্তমান বা সাবেক শিক্ষার্থীরা যে যখন সময় পাচ্ছেন, প্রাণের টানে ছুটে আসছেন মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রস্তুতিতে।
চারুকলার সাবেক শিক্ষার্থী তানজিম আহমেদ বলেন, ‘যখন শিক্ষার্থী ছিলাম খুব আগ্রহ নিয়ে কাজ করেছি। তখন দেখতাম মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রস্তুতি উপলক্ষে সাবেক শিক্ষার্থীরা এসে কাজ করতেন। এই মিলনমেলায় সবার সঙ্গে সবার দেখা হয়। এক আনন্দঘন পরিবেশে কাজ করি সবাই। ’
চারুকলার ২৫তম ব্যাচের মঙ্গল শোভাযাত্রার আহ্বায়ক সাদিত সাদমান রাহাত জানান, কাঠামোর পাশাপাশি এবার মুখোশ, বড় মুখোশ, গাজীর পটের দুটি চিত্র বাঙালি সংস্কৃতির অংশ হিসেবে থাকবে। এবারের শোভাযাত্রায় বৈচিত্র্য আনা হয়েছে মোটিফ ও কালারের মাধ্যমে।
মঙ্গল শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণের জন্য সংস্কৃতি কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট। এ ছাড়া বিকেলে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জোটের পক্ষ থেকে আয়োজন করা হচ্ছে বর্ষবরণ অনুষ্ঠান। এটি উদ্বোধন করবেন সাংস্কৃতিকব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার।
সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ বাংলানিউজকে বলেন, ‘শহীদ মিনারের অনুষ্ঠানে নৃত্যশিল্পী মুনমুন আহমেদের দল, স্পন্দনের অনিকের দল নৃত্য পরিবেশন করবে। আসমা আখতার লিজার নির্দেশনায় পথনাটক পরিবেশন করবে নট্টনন্দন। থাকবে বাউল গানের আসর। বাউল মমতাজ হাসি, দেলোয়ার বাউল, ভাওয়াইয়া শিল্পী রথীন্দ্রনাথ রায়, রহিমা, একক সংগীত-আবৃত্তি, দলীয় সংগীত-আবৃত্তি, শিশু সংগঠনের বর্ষবরণে অংশ নেওয়া দল ও শিল্পীদের চূড়ান্ত করা হয়েছে। ’
এদিকে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী জেলায় জেলায় বর্ষবরণের প্রস্তুতি নিয়েছে। এবার তাদের পহেলা বৈশাখের সর্ববৃহৎ অনুষ্ঠানটি হবে যশোরে। এ ছাড়া খুলনা, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম, চাঁদপুর, নেত্রকোনা, বরিশালে নববর্ষ পালনের প্রস্তুতি চলছে পুরোদমে।
উদীচীর সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দে বলেন, ‘ছায়ানটের বর্ষবরণ সফল করতে আমরাও সহযোগিতা করছি। বর্ষবরণে উদীচী কার্যালয়ে ঘরোয়াভাবে আনন্দ আয়োজনের ব্যবস্থা রয়েছে। ’
জাতীয় প্রেস ক্লাবে বর্ষবরণ উদযাপনের আয়োজন চলছে। পহেলা বৈশাখে সকাল ৯টা থেকে শুরু হবে বর্ষবরণের অনুষ্ঠান। সদস্যরা সপরিবারে খেজুরের গুড়ের পায়েস, মুড়ি-মুড়কি, বাতাসা দিয়ে মিষ্টি মুখ করবেন। বাচ্চাদের জন্য নাগরদোলা, বায়োস্কোপসহ নানা ব্যবস্থা রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন এ উদযাপনের আহ্বায়ক শাহনাজ সিদ্দিকী সোমা।
নববর্ষ আয়োজনের নিরাপত্তা সম্পর্কে পুলিশ সদর দপ্তরের মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের পুলিশ সুপার ইনামুল হক সাগর জানান, ‘পহেলা বৈশাখ বাঙালির ঐতিহ্য। বর্ষবরণ প্রস্তুতির শুরু থেকেই এবার সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। পহেলা বৈশাখের সব আয়োজনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। ছায়ানটের অনুষ্ঠানকে নির্বিঘ্ন করতে সব রকম ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। রমনা পার্কে সিসি ক্যামেরা লাগানো হচ্ছে। এ ছাড়া আশপাশের ভবনের সিসি ক্যামেরাগুলোও আমরা মনিটরিং করব। ’
বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ১২, ২০২৪
এইচএমএস/এসএএইচ