টাঙ্গাইল: ধর্ষণের অভিযোগে মামলা হওয়ার পর শহর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি গোলাম কিবরিয়া বড় মনিকে তার দলীয় পদ থেকে সাময়িক অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এছাড়া তাকে চূড়ান্ত অব্যাহতির জন্য দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদকের কাছে সুপারিশ করেছে শহর আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ।
বড় মনির বিরুদ্ধে ঢাকার তুরাগ থানায় গত ২৯ মার্চ ধর্ষণের অভিযোগ এনে মামলা করেন এক নারী। এতে দলীয় ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়। যে কারণে তাকে অব্যাহতির সিদ্ধান্ত নেয় টাঙ্গাইল শহর আওয়ামী লীগ। এর আগেও তার বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ এনেছিলেন এক নারী। পরে ভুক্তভোগী আত্মহত্যা করেন।
জানা গেছে, টাঙ্গাইল শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও টাঙ্গাইল পৌরসভার মেয়র এসএম সিরাজুল হক এবং সাধারণ সম্পাদক এম এ রৌফ স্বাক্ষরিত একটি চিঠিতে বড় মনিকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। তা ছাড়া তার সই করা একটি চিঠি দলের ঢাকা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আযমের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের কাছে পাঠানো হয়েছে। গত ৭ এপ্রিল এ চিঠি পাঠানো হয় বলে নেতারা আজ জানিয়েছেন।
দলীয় সাধারণ সম্পাদককে দেওয়া চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘ধর্ষণের অভিযোগে মামলা দায়ের হওয়ার পর ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক্স ও প্রিন্ট মিডিয়ায় প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। গোলাম কিবরিয়ার এই অনৈতিক কর্মকাণ্ডে দলীয় ভাবমূর্তি মারাত্মকভাবে ক্ষুণ্ন হয়েছে এবং এ কারণে টাঙ্গাইলের সাধারণ জনগণ দলের প্রতি বিরূপ ধারণা পোষণ করছে। এমতাবস্থায় টাঙ্গাইল জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের পরামর্শ ও নির্দেশক্রমে দলের বৃহত্তর স্বার্থে এবং সুনাম ও ভাবমূর্তি বজায় রাখার নিমিত্তে গোলাম কিবরিয়া বড় মনিকে টাঙ্গাইল শহর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি পদ থেকে সাময়িক অব্যাহতি প্রদান করা হলো এবং চূড়ান্ত অব্যাহতি প্রদানের জন্য আপনার নিকট সুপারিশ করা হলো। ’
টাঙ্গাইল শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ রৌফ সোমবার বলেন, ঈদের আগে দলের সাধারণ সম্পাদকের কাছে গোলাম কিবরিয়াকে চূড়ান্ত অব্যাহতি প্রদানের জন্য সুপারিশ করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে সাধারণ সম্পাদকের কোনো সিদ্ধান্ত এখনো পাওয়া যায়নি।
গোলাম কিবরিয়া বড় মনি টাঙ্গাইল-২ (গোপালপুর-ভূঞাপুর) আসনের দলীয় সংসদ সদস্য তানভীর হাসান ছোট মনিরের ভাই। তার বিরুদ্ধে নতুন করে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে চলতি বছরের মার্চে। গত ২৯ মার্চ মধ্যরাতে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বরে কল দিয়ে ধর্ষণের অভিযোগ করেন এক কলেজ ছাত্রী। এর পর তাকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। পরে রাতভর নানা নাটকীয়তা শেষে আসামিকে অজ্ঞাত উল্লেখ করে অভিযোগ নেয় তুরাগ থানা পুলিশ।
গণমাধ্যমকে ভুক্তভোগী বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সূত্র ধরে গত দুই মাস আগে বড় মনির সঙ্গে পরিচয় হয় তার। গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর উত্তরার জমজম টাওয়ারে তাদের প্রথম দেখা হয়। এদিন রাতে আবারও রেস্টুরেন্টে দেখা করার কথা বলে ভুক্তভোগীকে তুরাগ থানাধীন প্রিয়াঙ্কা সিটিতে নিজের ফ্ল্যাটে নিয়ে যান বড় মনি। সেখানেই তাকে অস্ত্রের মুখে ধর্ষণ করা হয়।
ভুক্তভোগী গণমাধ্যমকে বলেন, উনি (বড় মনি) আমাকে অস্ত্র দেখিয়ে ধর্ষণ করেছে। আমি বারবার উনার কাছে মাফ চেয়েছি, যাতে আমার কোনো ভুল থাকলে আমাকে মাফ করে দেয়। তবু রেহাই মেলেনি।
৯৯৯ কল পেয়ে পুলিশ ভুক্তভোগীকে উদ্ধার ও যে ভবনে ঘটনা, সেটির সিসিটিভি ক্যামেরাও জব্দ করে। তবে, ধর্ষণ মামলা দায়েরের পরদিন থেকেই আত্মগোপনে রয়েছেন বড় মনি।
এর আগে ২০২২ সালেও ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছিল টাঙ্গাইলের বড় মনির বিরুদ্ধে। ভুক্তভোগীর অভিযোগ ছিল, গোলাম কিবরিয়া ওরফে বড় মনি ২০২২ সালের ১৭ ডিসেম্বর তাকে ডেকে নিয়ে ধর্ষণ করেন। এতে তিনি অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন। পরে ২০২৩ সালের ৫ এপ্রিল টাঙ্গাইল সদর থানায় বাদী হয়ে মামলা করেন ভুক্তভোগী।
পরে ওই নারী একটি ছেলে সন্তান জন্ম দেন। আদালতের নির্দেশে ওই সন্তানের ডিএন এ পরীক্ষা করা হয়। এতে বলা হয়, ওই সন্তানের জৈবিক পিতা গোলাম কিবরিয়া বড় মনি নন। এর কয়েক মাস পর ওই নারী আত্মহত্যা করেন। আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগ এনে ওই নারীর বড় বোন লুনা মির্জা তার ভাই জনি মির্জা ও সৌরভ পাল নামে এক যুবকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।
একই বছরের ১৮ নভেম্বর বিকালে টাঙ্গাইল শহরের বোয়ালী এলাকা থেকে বড় মনিরের বিরুদ্ধে করা ধর্ষণ মামলার ওই বাদীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
বাংলাদেশ সময়: ২০৫৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৫, ২০২৪
এমজে