ঢাকা: বাংলাদেশ-ভারত-নেপালের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় বিদ্যুৎ চুক্তি দ্রুত করার তাগিদ দিয়েছেন পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন। বুধবার (১৭ এপ্রিল) কাঠমান্ডুতে বাংলাদেশ ও নেপালের মধ্যে তৃতীয় ফরেন অফিস কনসালটেশনে (এফওসি) তিনি এ বিষয়ে তাগিদ দেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, কাঠমান্ডুতে বাংলাদেশ ও নেপালের মধ্যে তৃতীয় ফরেন অফিস কনসালটেশন (এফওসি) অনুষ্ঠিত হয়। এতে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্বে ছিলেন পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন। আর নেপালি প্রতিনিধিদলের নেতৃত্বে ছিলেন সেদেশের পররাষ্ট্রসচিব সেবা লামসাল। বৈঠকে উভয় দেশের রাষ্ট্রদূত এবং অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এফওসিতে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের বিভিন্ন দিক পর্যালোচনা করা হয়। উভয় পররাষ্ট্র সচিব বাংলাদেশ ও নেপালের মধ্যে বিদ্যমান চমৎকার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে সন্তোষ প্রকাশ করেন। তারা পারস্পরিক স্বার্থের সব প্রধান ইস্যু নিয়ে আলোচনা করেন। তারা সব ক্ষেত্রে বিশেষ করে ব্যবসা-বাণিজ্য, ট্রানজিট ও কানেক্টিভিটি, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত, পর্যটন, সংস্কৃতি ও শিক্ষাকে অন্তর্ভুক্ত করে সহযোগিতা বাড়াতে সম্মত হন।
উভয় পররাষ্ট্রসচিব শুধুমাত্র বাণিজ্য ও সংযোগ সম্প্রসারণের মাধ্যমেই নয় বরং যোগাযোগ জনগণের মধ্যে নিয়ে যাওয়ার আরও সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে দুই দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখার জন্য বিবিআইএন-এমভিএ কাঠামোর কার্যকরে জোর দেন।
পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন বাংলাদেশ-ভারত-নেপালের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় বিদ্যুৎ চুক্তি দ্রুত করার ওপর জোর দেন, যা বাংলাদেশকে নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আমদানিতে সহায়তা করবে।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রসচিব লুম্বিনিতে মঠ নির্মাণের লক্ষ্যে জমি বরাদ্দের জন্য নেপাল সরকারকে ধন্যবাদ জানান। তিনি আরও বলেন, এটি আমাদের সম্পর্কের মধ্যে একটি মাইলফলক হবে। আগামী দিনে বাংলাদেশ ও নেপালের জনগণের মধ্যে যোগাযোগ বাড়বে।
পররাষ্ট্রসচিব সেবা লামসাল অর্থনীতি, সংস্কৃতি ও শিক্ষাক্ষেত্রে অব্যবহৃত সম্ভাবনার অন্বেষণের ওপর জোর দেন এবং বেসরকারি খাতসহ অর্থপূর্ণ সহযোগিতামূলক অংশীদারত্ব প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব করেন।
তিনি উল্লেখ করেন, নেপাল বাংলাদেশের সঙ্গে আরও বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতা এগিয়ে নিতে চায়। তিনি জলবিদ্যুৎ সেক্টরসহ নেপালে বিনিয়োগের সুযোগ অন্বেষণের জন্য বাংলাদেশিদের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বাংলাদেশে রপ্তানি করা নেপালি পণ্যের ওপর আরোপিত বিদ্যমান অন্যান্য শুল্ক ও চার্জ (ওডিসি) বাদ দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকারকে অনুরোধ করেন।
নেপালের পররাষ্ট্রসচিব বিভিন্ন পর্যায়ে সফরের ওপর জোর দেন। উভয় পররাষ্ট্রসচিব পারস্পরিক স্বার্থের আঞ্চলিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। তারা আঞ্চলিক সহযোগিতা বাড়াতে সার্ককে পুনরুজ্জীবিত এবং বিমসটেককে শক্তিশালী করার প্রয়োজনীয়তার ওপরও জোর দেন।
উভয় পররাষ্ট্রসচিব বিভিন্ন বহুপাক্ষিক ফোরামে, বিশেষ করে জাতিসংঘে এলডিসি স্নাতক, দারিদ্র্য বিমোচন, জলবায়ু পরিবর্তন এবং অভিবাসী শ্রমিকদের নিরাপত্তা ও নিরাপত্তার ক্ষেত্রে অভিন্ন স্বার্থ অনুসরণে একে অপরকে সহযোগিতা করতে সম্মত হন।
বাংলাদেশের ফরেন সার্ভিস একাডেমি এবং নেপালের ফরেন সার্ভিস ইনস্টিটিউটের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারকেও দুই দেশের পররাষ্ট্রসচিব স্বাক্ষর করেন।
পরে পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন উপ-প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী নারায়ণ কাজী শ্রেষ্ঠের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। বৈঠকে নেপাল ও বাংলাদেশের মধ্যে পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়।
পরবর্তী এফওসি পারস্পরিক সুবিধাজনক সময়ে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯১৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৭, ২০২৪
টিআর/আরএইচ