ঢাকা, শুক্রবার, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

লাঠিটিলা বন যেন ‘মৃত্যুফাঁদ’, বিদ্যুৎস্পৃষ্টে মরছে বন্যপ্রাণী

ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫২৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৬, ২০২৪
লাঠিটিলা বন যেন ‘মৃত্যুফাঁদ’, বিদ্যুৎস্পৃষ্টে মরছে বন্যপ্রাণী

মৌলভীবাজার: মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার লাঠিটিলা সংরক্ষিত বন এলাকায় স্থাপিত বৈদ্যুতিক তার যেন প্রাণীকূলের জন্য ‘মৃত্যুফাঁদ’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ওই বৈদ্যুতিক তারে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে প্রায়ই মরছে বন্যপ্রাণী।

সম্প্রতি ওই ফাঁদে প্রাণ গেছে বিপন্ন প্রজাতির একটি লজ্জাবতী বানরের।

বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) এ বিষয়ে বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ জানিয়েছে এ ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য স্থানীয় পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিকে অবহিত করা হয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দা মাসুক মিয়া বলেন, বুধবার (২৪ এপ্রিল) সকাল ৮টার দিকে বানরটি মৃত অবস্থায় বিদ্যুতের তারে ঝুলে থাকতে দেখা যায়। তারপর দুপুর ১২টার দিকে বানরটি মাটিতে পড়ে যায়। এর পর সন্ধ্যা ৭টার দিকে স্থানীয় কয়েকজন মিলে বানরটি মাটিচাপা দেন।

জুড়ী উপজেলার লাঠিটিলা সংরক্ষিত বন এলাকায় মঙ্গলবার রাতে ঘটনাটি ঘটে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ২০২৩ সালের ১০ ডিসেম্বর ডোমাবাড়ী এলাকায় জামাল মিয়ার বসতবাড়ির পাশে আরেকটি লজ্জাবতী বানর বিদ্যুতিক তারে স্পৃষ্ট হয়ে মারা যায়। পরে স্থানীয় লোকজন মৃত বানরটিকে মাটিচাপা দেন। বিগত বছরে আরও বেশ কয়েকটি চশমাপরা হনুমান ওই এলাকায় একইভাবে মারা যায়।  

স্থানীয়রা আরও জানান, উপজেলার গোয়ালবাড়ী ইউনিয়নে অবস্থিত লাঠিটিলা সংরক্ষিত বনের লালছড়া, রুপাছড়া, জড়িছড়া, দিলখুশা, কমলছড়া ও ডোমাবাড়ী এসব এলাকায় বনের ভেতর দিয়ে মৌলভীবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি (মৌপবিস) খোলা (প্লাস্টিক কাভারবিহীন) তার টেনেছে। বনের ভেতর দিয়ে বিদ্যুতিক লাইন টানানো হলে বাধ্যতামূলক প্লাস্টিক কাভার মোড়ানো তার লাগানোর কথা থাকলেও মানছে না মৌপবিস কর্তৃপক্ষ। বন্যপ্রাণী বিচরণকৃত এলাকা হওয়ায় এতে প্রায় সময় বানর, হনুমান, বাদুড়সহ বিভিন্ন বিপন্ন প্রজাতির প্রাণীর প্রতিনিয়ত মৃত্যু ঘটে।

পরিবেশকর্মীরা অভিযোগ করেন, ওই এলাকায় আগেও বেশ কয়েকবার বিভিন্ন বিপন্ন প্রজাতির বন্যপ্রাণী মারা গেছে। এ নিয়ে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিকে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ বিভাগের পক্ষ থেকে চিঠির মাধ্যমে সংরক্ষিত বন এলাকায় ইনসুলেটেড (প্রলেপযুক্ত) তারের ব্যবস্থার জন্য অনুরোধ করা হলে ২ কিলোমিটার লাইন কাভার করা হয়েছে। তবে, বনের গুরুত্বপূর্ণ বেশ কিছু ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এভাবে চলতে থাকলে শিগগিরই লাঠিটিলা বন বন্যপ্রাণী শূন্য হয়ে পড়বে।

লজ্জাবতী বানর গবেষণা ও সংরক্ষণ প্রকল্পের মুখ্য গবেষক সাবিত হাসান বলেন, যেসব কারণে বাংলাদেশে লজ্জাবতী বানর আজ হুমকির মুখে তাদের মধ্যে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা যাওয়া অন্যতম। শুধু লজ্জাবতী বানরই নয়, এভাবে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে মারা পড়ছে অন্যান্য বানর প্রজাতিও। ২০২৩ সালের পর থেকে এখন পর্যন্ত লাঠিটিলায় চার বা তারও অধিক বানরের বিদ্যুৎস্পৃষ্টে মারা যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে, যা লজ্জাবতী বানরের অস্তিত্বের জন্য খুবই ভীতিজনক। বনের ভেতর দিয়ে বিদ্যুতের তার নেওয়ার ব্যাপারে যে সতর্কতা অবলম্বন করতে বলা হয়েছে, সে ব্যাপারে উদাসীনতা করলে চলবে না। এছাড়াও বনের মধ্যে দিয়ে রাস্তা নেওয়ায় গাড়িচাপা পড়ে মারা যাচ্ছে অনেক বন্যপ্রাণী, চলছে লজ্জাবতী বানরসহ অন্যান্য বন্যপ্রাণী পাচার, উজাড় হচ্ছে বন ও বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল।

মৌলভীবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি (মৌপবিস) বড়লেখার অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা রাজনগরের ডিজিএম গোলাম সারোয়ার মোর্শেদ বলেন, বিভিন্ন সংরক্ষিত বনে খোলা তারের পরিবর্তে সেগুলোতে এরই মধ্যে কভার তার (ইনসুলেইটেড) লাগানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ এলাকায়ও কভার তারের জন্য  প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ, সিলেট এর বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) ড. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, এ বিষয়ে আমরা পল্লিবিদ্যুতকে কয়েকবার চিঠি দিয়ে জানিয়েছি। বিদ্যুতের খোলা ক্যাবলগুলো কভার করার কথা। কেন করেনি আমরা খোঁজ নিয়ে দেখবো। কভার তার যাতে দ্রুত স্থাপন করা হয়েছে সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবো।

বাংলাদেশ সময়: ১৫২৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৫, ২০২৪
বিবিবি/জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।