ঢাকা, সোমবার, ২৯ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ মে ২০২৪, ০৪ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

উচ্চতাপে সড়কের স্থায়িত্ব বাড়াতে পলিমার বিটুমিন ব্যবহারের তাগিদ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৫১ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৮, ২০২৪
উচ্চতাপে সড়কের স্থায়িত্ব বাড়াতে পলিমার বিটুমিন ব্যবহারের তাগিদ তাপদাহে গলে যাচ্ছে সড়কের পিচ

# ৬০-৭০ গ্রেডের পিচ ব্যবহার করা হয়, গলনাঙ্ক ৪৮-৫২ ডিগ্রি সেলসিয়াস
# সরকারি প্রতিষ্ঠান (ইআরএল) উৎপাদিত পিচের গলনাঙ্ক ৫২-৫৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস
# পলিমার মডিফায়েড বিটুমিনের (পিএমবি) গলনাঙ্ক ৭০ ডিগ্রির বেশি
# যেসব সড়কে পিএমবি ব্যবহার হয়েছে সেগুলো গলছে না
# সস্তা বিটুমিন ব্যবহারে সরকারের আর্থিক ক্ষতি বাড়ছে, সড়কের মান কমছে

শরীয়তপুর-চাঁদপুর সড়ক। তাপদাহে গলে যাচ্ছে বিটুমিন।

শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জের বালিবাড়ির মোড় থেকে নরসিংহপুর ফেরিঘাট পর্যন্ত ১৭ কিলোমিটার সড়কে অন্তত ১৫ জায়গায় এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।  

শুধু যে শরীয়তপুর বা চাঁদপুরে এমন ঘটনা ঘটছে তা কিন্তু নয়। যশোর, গাজীপুর, চুয়াডাঙ্গা-কালীগঞ্জ এবং চুয়াডাঙ্গা-ঝিনাইদহ সড়কে একই পরিস্থিতি দেখা গেছে। এছাড়া যশোর-নড়াইল মহাসড়কের নীলগঞ্জ, হামিদপুর, দায়তলা, ফতেপুর, তারাগঞ্জ এবং নড়াইল সদরের মাদ্রাসা বাজার, সুলতান ব্রিজ, সীতারামপুরসহ বিভিন্ন স্থানে গরমে বিটুমিন গলছে। কালিয়াকৈর-ফুলবাড়িয়া আঞ্চলিক সড়কের অন্তত ১০ জায়গার অবস্থাও প্রায় একই।  

ঢাকার বাইরের সড়কগুলোতে ৩৭ থেকে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার মধ্যে সড়কের পিচ গলে যাচ্ছে। কিন্তু এই তাপে বিটুমিন গলে যাওয়ার কথা নয়। সংশ্লিষ্টদের আশঙ্কা, ঢাকার বাইরের সড়কগুলোতে বিটুমিনের পরিবর্তে আলকাতরা ব্যবহার করা হচ্ছে।

সাধারণত সড়কে ৬০ থেকে ৭০ গ্রেডের পিচ ব্যবহার করা হয়। এর গলনাঙ্ক ৪৮ থেকে ৫২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অর্থাৎ ৪৮ ডিগ্রি তাপমাত্রায় এই মানের পিচ গলে যায়। আবার সরকারি প্রতিষ্ঠান ইস্টার্ন রিফাইনারির (ইআরএল) উৎপাদিত পিচের গলনাঙ্ক ৫২ থেকে ৫৮ ডিগ্রি।  

কিন্তু পলিমার মডিফাইড বিটুমিনের (পিএমবি) গলনাঙ্ক ৭০ ডিগ্রির বেশি। বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি), এলেঙ্গা-রংপুর মহাসড়কে পিএমবি ব্যবহার করা হয়েছে। এমনকি রাজধানীর শৈল্পিক সড়কের পরিচিতি পাওয়া শেখ হাসিনা সরণিও (৩০০ ফুট সড়ক) বিটুমিনে তৈরি হয়েছে। কিন্তু এসব সড়কে পিচ গলছে না।

বিশেষজ্ঞদের মতে, বৈশ্বিক তাপমাত্রা বাড়ায় দেশের সড়কে পিএমবির বিটুমিন ব্যবহার করা প্রয়োজন। কিন্তু পিএমবির বড় সমস্যা হচ্ছে সময়। বেশি দিন মজুদ অবস্থায় পড়ে থাকলেও এর গুনাগুন নষ্ট হয়। তাই আমদানি করা নয়, দেশে উৎপাদিত পিএমবি ব্যবহার দরকার, যা উৎপাদনের পরপরই ব্যবহার করা যাবে।

সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের আওতায় বর্তমানে দেশে ২২ হাজার ৪৭৬ কিলোমিটার সড়ক রয়েছে। ২০২২-২৩ সালের সওজ অধিদপ্তরের বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ৩ হাজার ৯৯১ কিলোমিটার জাতীয় মহাসড়ক, ৪ হাজার ৮৯৭ কিলোমিটার আঞ্চলিক মহাসড়ক এবং ১৩ হাজার ৫৫৮ কিলোমিটার জেলা সড়ক।

অবকাঠামো বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক মো. হাদিউজ্জামান বলেন, পলিমার বিটুমিন আমদানি করতে গিয়ে দাম বেশি পড়ে যায়। কিন্তু এর মান ভালো। এর তাপ সহনশীলতা বেশি।  

নাম প্রকাশ না করা শর্তে সওজের উচ্চপদস্ত এক কর্মকর্তা জানান, সড়কের পিচ গলে যাওয়া নতুন কিছু না। আমাদের দিক থেকে মান যাচাই করেই নির্মাণ সামগ্রীর ব্যবহার করা হয়।  

এদিকে দীর্ঘস্থায়ী সড়ক অবকাঠামো নিশ্চিত করতে যুক্তরাষ্ট্র, এমনকি পাশের দেশ ভারতও পলিমার মডিফায়েড বিটুমিন (পিএমবি) ব্যবহার করছে।  

২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত বিশ্বে পদার্পণ করতে হলে টেকসই যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। তাই বাংলাদেশেও বিশেষ করে ভারী ও বেশি যানবাহন চলাচলকারী সড়ক-মহাসড়কে পলিমার মডিফায়েড বিটুমিন ব্যবহার করার তাগিদ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

দেশের সড়কগুলোতে বর্তমানে ১৮ টন ধারণক্ষমতার যানযাহন চলাচলের বিধান আছে। কিন্তু চলছে প্রায় ৪০ টন ওজনের যানবাহন। এতে রাস্তা দ্রুত নষ্ট হচ্ছে।  

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, পলিমার মডিফায়েড বিটুমিন ব্যবহার করলে এই সড়কেই ৫০ থেকে ৭০ টন পণ্যবোঝাই যানবাহন চলাচল করতে পারবে। একসঙ্গে বেশি পণ্য পরিবহন করতে পারলে পণ্য পরিবহনের গড় খরচও কমে আসবে।

বিটুমিন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাধারণত নিম্ন ও উচ্চ তাপমাত্রায় বিটুমিনের সংবেদনশীলতা কমে যাওয়ায় ১৯৮০ সাল থেকে পলিমার মডিফায়েড বিটুমিনের ব্যবহার হয়ে আসছে। 'স্টাইরিন বুটাডিন স্টাইরিন' (এসবিএস) নামক একটি বিশেষ ধরনের পলিমার বেইস বিটুমিনের সঙ্গে মিশিয়ে পলিমার মডিফায়েড বিটুমিন তৈরি করা হয়।

এই বিটুমিন আর্দ্রতা সংবেদনশীল, নিম্ন তাপমাত্রায় নমনীয় এবং উচ্চ তাপমাত্রায় শক্ত থাকে। এটি মহাসড়কের উপরিভাগকে সব ধরনের আবহাওয়াজনিত ক্ষতি, ফাটল বা খানাখন্দ তৈরি হওয়া থেকে রক্ষা করে।

বাংলাদেশ সময়: ২০৪৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৮, ২০২৪
নিউজ ডেস্ক

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।