ব্রাহ্মণবাড়িয়া: ভাগ্যের নির্মমতায় টয়লেটে ৯ মাস বন্দি ছিলেন সুজিত দাস নামের এক যুবক। দম বন্ধ হয়ে আসা ওই কক্ষটিতেই কাটত তার রাতদিন।
সুজিতের এই বন্দিদশার ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হলে নজরে আসে স্থানীয় থানা পুলিশের। গত ২৯ এপ্রিল (সোমবার) দুপুরে তাকে মুক্ত করে পুলিশ।
জানা গেছে, সুজিত ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার কাশিপাড়া এলাকার হরেন্দ্র দাস ও আরতি দাসের দ্বিতীয় ছেলে। ছোটবেলা থেকেই মানসিক ভারসাম্যহীন। গেল ৮ বছর আগে তাকে বিয়েও করানো হয়। তবে বিয়ের ছয় মাস পর তার স্ত্রী তাকে ছেড়ে চলে। এরপর তিনি আরও দিশেহারা হয়ে পড়েন। এমনকি তার আঘাতে প্রাণ হারায় আপন চাচাও। তার অস্বাভাবিক আচরণে অনিরাপদ হয়ে পড়ে এলাকার মানুষ।
এর পর থেকেই সুজিতকে টয়লেটে আটকে রাখা হয়।
এ ব্যাপারে সুজিতের মা আরুতি রানী দাস বলেন, মা হয়ে সন্তানকে এভাবে আটকে রাখা খুবই যন্ত্রণাদায়ক। তবুও সামাজিক ও পারিবারিক সদস্যদের নিরাপত্তার স্বার্থে ওকে প্রায় ৯ মাস আগে ঘরের পেছনের একটি টয়লেটে তালাবদ্ধ করে আটকে রাখা হয়েছিল। আমরা সুজিতের চিকিৎসার জন্য দীর্ঘদিন প্রচেষ্টা চালিয়েছি। কিন্তু সে ওষুধ গ্রহণের ব্যাপারে কোনোভাবেই আগ্রহী নয়। বরং সে বিভিন্ন সময় হিংস্র ও আক্রমণাত্মক হয়ে উঠত। তবে তাকে আটকে রাখাকালীন সময়ে তার খাবার ও পরিচর্যার ক্ষেত্রে আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি।
নাসিরনগর থানার উপ- পরিদর্শক (এসআই) রুপন নাথ বলেন, স্থানীয়দের মাধ্যমে বিষয়টি জানতে পেরে মানসিক ভারসাম্যহীন সুজিত দাসকে অমানবিক পরিস্থিতি থেকে উদ্ধার করা হয়। তাকে টয়লেটের বন্দিদশা থেকে মুক্ত করে চিকিৎসার জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শহরের একটি পুনবার্সন কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ৭ থেকে ৮ বছর আগে সুজিদের আঘাতে তার চাচার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় মামলা দায়েরের পর সুজিত জেল খাটে। জেল থেকে বের হয়ে আবার পাগলামি শুরু করে। এতে পরিবারের সদস্যরা নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে যে কাকে, কখন আবার আঘাত করে বসে।
তবে অমানবিক এই ঘটনাকে সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয় উল্লেখ করে নাসিরনগর সরকারি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আব্দুল হক বলেন, এ ধরনের অমানবিকতা মনুষ্যত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। যারা মানসিক ভারসাম্যহীন বা প্রতিবন্ধী তাদের নিরাপত্তা দিতে পরিবার ও সমাজ দায়বদ্ধ। সুজিতের বন্দিদশার ঘটনাটি অমানবিক।
বাংলাদেশ সময়: ১০৪০ ঘণ্টা, মে ০১, ২০২৪
এসএএইচ