ঢাকা, বুধবার, ২০ কার্তিক ১৪৩১, ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

রাশেদের মৃত্যু: পুলিশ বলছে দেয়াল ধসে, চিকিৎসক বলছেন হত্যা

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৪৪ ঘণ্টা, মে ১৩, ২০২৪
রাশেদের মৃত্যু: পুলিশ বলছে দেয়াল ধসে, চিকিৎসক বলছেন হত্যা

ময়মনসিংহ: ময়মনসিংহের সদর উপজেলার হিরন পলাশিয়া গ্রামের শিশু রাশেদ মিয়া (১১) নিহত হওয়ার কারণ নিয়ে সৃষ্ট জটিলতায় মতো বিচার নিয়েও শঙ্কা দেখা দিয়েছে ভুক্তভোগী পরিবারে।  

এ অবস্থায় গত তিন মাস ধরে আদালত ও থানা পুলিশের দ্বারে দ্বারে ঘুরছে নিহতের বাবা-মা ও ভাই।

এতে ভুক্তভোগীদের মধ্যে ন্যায় বিচার নিয়ে হতাশা সৃষ্টি হয়েছে।  

তবে ঘটনার অনুসন্ধানে জানা যায়, গত ৫ ফেব্রুয়ারি আদালতে দায়ের হওয়া একটি পুলিশ প্রতিবেদনে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বলেছেন- ইটের গাঁথুনির দেয়াল ধসে রাশেদের মৃত্যু হয়েছে। তবে মৃত্যুর সঠিক কারণ জানতে ময়নাতদন্ত করা হয়েছে বলেও প্রতিবেদনে জানানো হয়। এরই মাঝে বিগত ১৬ মার্চ প্রকাশিত ময়নাতদন্ত রিপোর্টে শিশু রাশেদের মৃত্যুর ঘটনা ‘নরহত্যা’ বলে উল্লেখ করেছেন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. শোহাব নাহীয়ান।

এ ঘটনায় গত ২৪ এপ্রিল ময়মনসিংহের অতিরিক্ত চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ আব্দুল হাই বাদীর অভিযোগ তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে কোতোয়ালি মডেল থানার ওসিকে নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ১ নম্বর আমলী আদালতের বেঞ্চ সহকারী মো. মঞ্জুরুল হক।  

তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ভিকটিম রাশেদ মিয়ার সুরতহাল ও ময়নাতদন্ত রিপোর্ট এবং নথি পর্যালোচনা করে বাদীর নালিশী দরখাস্তের বিষয়ে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে কোতোয়ালি মডেল থানার ওসিকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

এর আগে চলতি বছরের ১৭ জানুয়ারি ক্রিকেট খেলা নিয়ে বিরোধের জেরে শিশু রাশেদ খুন হয় বলে আদালতে দায়ের হওয়া মামলার দরখাস্তে দাবি করেন বাদী ও নিহতের বাবা মো. আজিম উদ্দিন।    

বাদী আরও জানান, ১৭ জানুয়ারি আমার ছেলে খুন হওয়ার পর থানা পুলিশ অভিযুক্ত সাতজনকে আটক করে থানায় নিয়ে এসে পরদিন ১৮ জানুয়ারি সাধারণ ডায়েরি করে তাদের ছেড়ে দেয়। তখন আমি থানায় মামলা করতে গেলে দেয়াল ধসে ইটের আঘাতে আমার ছেলের মৃত্যু হয়েছে উল্লেখ করে মামলা নেয়নি পুলিশ। এ ঘটনার ছয়দিন পর ময়মনসিংহের ১ নম্বর আমলী আদালতে আটকের পর ছাড়া পাওয়া সাতজনকে আসামি করে আমি একটি হত্যা মামলা দায়ের করি। এই মামলার আসামিরা হল- মাইনুদ্দিন, আকাশ, মহিদুল, শরীফ, রিপন মিয়া, সবুজ এবং সাকিব।    

এরপর ১৬ মার্চ নিহত শিশু রাশেদের ময়নাতদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ হলে বিগত ২৪ এপ্রিল আদালত আমার দায়ের করা দরখাস্ত তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে কোতোয়ালি মডেল থানার ওসিকে নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত আমার মামলাটি থানায় এফআইআর হয়নি। ফলে আসামিরা আমার ছেলেকে খুন করে প্রকাশ্যে ঘোরাফেরা করছে।  

নিহত রাশেদের মা রাশিদা বেগম বাংলানিউজকে বলেন, পুলিশ আমার ছেলের খুনিদের ধরেছিল কিন্তু আমাদের চেয়ারম্যান ও মেম্বার ক্ষমতা খাটাইয়া তাদের ছাড়াইয়া নিছে। তারা কয়- একজন মরছে, অহন বাহিডিরে (বাকিদের) মাইরা লাভ কি।

শিশু রাশেদের বড় ভাই রাশিদুল হাসান বলেন, আমার ভাইরে ডেকে নিয়ে খুন করছে। কিন্তু পুলিশ কয় দেয়াল ভাইঙ্গা মরছে। অহন ময়নাতদন্তের রিপোর্টে আইছে, আমার ভাইরে মারা হইছে। আমি বিচার চাই, খুনিদের গ্রেপ্তার চাই।  

সে আরও জানায়, যারা আমার ভাইরে মারছে তারা বয়সে আমার ভাইয়ের চেয়ে বড়। তারা নেশাখোর, এলাকার সবাই তা জানে। কয়েকদিন আগে এরা এলাকার আরেকটা ছেলেরে মারধর করে আধমরা করছে। এইডাও স্থানীয়রা মীমাংসা কইরা দিছে।   
       
ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলার ৪ নম্বর পরানগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. আবু হানিফ বলেন, একশিশু মারা যাওয়ার খবর পেয়ে আমি ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। তখন পুলিশ এসে সাতজনকে ধরে থানায় নিয়ে এসেছিল। এর একদিন পর তাদের অভিভাবকদের জিম্মায় ছেড়ে দেওয়া হয়। এতে আমার কোনো প্রভাব নেই। এখন আইন যা করে তাই হবে। যে মারা গেছে সে শিশু, তার বাবা একজন অসহায় দিনমজুর। আর এ ঘটনায় যাদের আটক করে থানা নেওয়া হয়েছিল তারাও বয়সে ছোট-ছোট, বলেও যোগ করেন এই ইউপি চেয়ারম্যান।      

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও কোতোয়ালি মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, প্রাথমিকভাবে ঘটনাটি দেয়াল ধসে ইটের আঘাতে মৃত্যু বলে ধারণা করা হয়েছিল। এ নিয়ে আদালতে একটি প্রতিবেদনও দাখিল করা হয়েছে। তবে সম্প্রতি এ ঘটনার ময়নাতদন্ত রিপোর্ট আদালতে দাখিল হয়েছে। এখন আদালতের নির্দেশে তদন্ত চলছে, তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।    

এ বিষয়ে কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাঈন উদ্দিন বলেন, দেয়াল ধসে ইটের আঘাতে মৃত্যু বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হয়েছিল। এ নিয়ে তদন্ত চলছে। বিস্তারিত তদন্তে জানা যাবে।

বাংলাদেশ সময়: ১১৪২ ঘণ্টা, মে ১৩, ২০২৪
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।