নেত্রকোনা: এগার বছর আগে ফেলে চলে যান বাবা-মা, বৃদ্ধা দাদির আঁচলে ঠাঁই মেলে ফেরদৌস আহমেদের। তবে অপ্রাপ্ত বয়সেই রাজমিস্ত্রির কাজসহ মুদি দোকান চালিয়ে দাদা-দাদির সংসার চালিয়েছে যেতে হচ্ছে।
এভাবে শত বাধা-প্রতিকূলতা জয় করে পড়াশোনা করে ফেরদৌস এবার সুসঙ্গ আদর্শ বিদ্যানিকেতন স্কুল থেকে মানবিক বিভাগে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়। জিপিএ-৩ দশমিক ৬১ পেয়েছে সে। তবে কলেজ পড়া নিয়ে দুশ্চিন্তা দেখা দিয়েছে তার।
নেত্রকোনার দুর্গাপুর পৌর শহরের মুক্তারপাড়া এলাকার বাসিন্দা ফেরদৌস। দুই ভাই ও এক বোনের মাঝে সে দ্বিতীয়। মুক্তার পাড়া এলাকার আনোয়ার হোসেন ও রুবিনা খাতুন দম্পতির ছেলে হলেও বর্তমানে তার ঠিকানা ও আপনজন বলতে শুধু দাদি মিলিক জান বেগম।
জানা গেছে, বাবা-মায়ের আদর-সোহাগ বঞ্চিত ফেরদৌস দাদি ও প্রতিবেশীদের সহযোগিতায় প্রাথমিকের গণ্ডি পার করে। মাধ্যমিকে সুসঙ্গ আদর্শ বিদ্যানিকেতন স্কুলে ভর্তির সুযোগ মেলে তার। কিন্তু নাতির পড়াশোনা খরচ মেলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছিল দাদি মিলিক জান বেগমের। স্কুল থেকে পাওয়া উপবৃত্তির টাকা দিয়ে সবটুকু হচ্ছিল না। দাদির কষ্ট দেখে এক পর্যায়ে মুদি দোকান চালিয়ে ও রাজমিস্ত্রির কাজসহ বিভিন্ন দিন মজুরির কাজ করে সংসারে সহযোগিতা করতে থাকে ফেরদৌস। এরপর এসএসসি পরীক্ষার আগে দেড় মাস এক শিক্ষকের কাছে প্রাইভেট পড়ে পরীক্ষায় অংশ নেয় সে।
এতো কষ্ট ভোগ করে অভাব-অনটন জয় করে এসএসসি পাস করেও অনিশ্চয়তার মধ্যেই রয়ে গেছে ফেরদৌসের জীবন। দ্ররিদ্রতার কাছে হার মানতে হবে বলে শঙ্কায় ভুগছে সে। কারণ কলেজে পড়াশোনা চালাতে ভর্তি,বই কেনার সামর্থ্য নেই তার।
ফেরদৌস বলে, আমার বাবা-মা আমাকে ছেড়ে চলে যাওয়ার পর দাদির কাছেই বড় হয়েছি। দাদির সহযোগিতায় পড়াশোনাও করেছি। দাদি অসুস্থ হওয়ার পর থেকে আমি রাজমিস্ত্রির কাজ করেছি আর দোকানও চালিয়েছি। সবকিছুর সঙ্গে পড়াশোনাও করেছি। আমার কলেজে পড়ার অনেক ইচ্ছা কিন্তু খরচ জোগাতে পারবো কি না জানি না।
প্রতিবেশী রোজি আক্তার বলেন, ফেরদৌসকে আমি পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ফ্রিতে পড়িয়েছি। বর্তমানে সে এসএসসি পাস করেছে। তার পড়ালেখার ইচ্ছা আছে। আমরা এলাকাবাসী চাই তাকে যেন সরকারিভাবে সহযোগিতা করা হয়।
ফেরদৌসের দাদি মিলিক জান বলেন, ফেরদৌস যখন খুব ছোট তখন তার মা-বাবা দুজনেই চলে যায়। ওই সময় আমার ঘরে এক বেলা ভাত খাওয়ার মতো কিছু ছিল না। আমি গাছের শুকনা পাতা জমা করে বিক্রি করেছি, কাঁঠাল বিক্রি করে ও অন্যের বাসা থেকে ভাত চাইয়ে এনে আমার নাতিকে খাওয়াছি। নাতিটা স্কুলে যাইতে পারত না ড্রেসের জন্য, আমি প্রতিবেশীর ছেলের পুরাতন ড্রেস তাকে এনে দিছি। খুব কষ্ট করে আমি তাকে লেখাপড়া করিয়েছি। যখন সুসঙ্গ আদর্শ বিদ্যানিকেতনে ভর্তি হয়েছে তখন অভাব অনটনের কারণে প্রাইভেট পড়াতে পারেনি। যদি প্রাইভেট পড়াতে পারতাম তাহলে রেজাল্ট আরও ভালো করতো সে। বর্তমানে তাকে কলেজে ভর্তিসহ যাবতীয় খরচ বহন করা আমার পক্ষে সম্ভব না। সরকারি কোনো সাহায্য সহযোগিতা পেলে উপকার হতো।
সুসঙ্গ আদর্শ বিদ্যানিকেতন স্কুলের প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) মো. আব্দুস ছালাম বলেন, কাজ করার ফাঁকে ফাঁকে লেখাপড়া করেছে ছেলেটি এবং উত্তীর্ণ হয়েছে। এটাই সত্যিই অনেক আনন্দের। স্কুল থেকে কাগজপত্র তোলাসহ সব বিষয়ে ফেরদৌসকে সহায়তা করব আমরা। ব্যক্তিগতভাবেও সহযোগিতা থাকবে আমার।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এম রকিবুল হাসান জানান, ওই শিক্ষার্থী একটা আবেদন করলে আমরা সরকারিভাবে তাকে পড়াশোনা চালানোর জন্য সর্বোচ্চ সহযোগিতা করব।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৭ ঘণ্টা, মে ১৫, ২০২৪
এসএএইচ