ঢাকা, শনিবার, ০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ১৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

র‍্যাব হেফাজতে নারীর মৃত্যুর ঘটনায় এবার এসআই প্রত্যাহার

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪১১ ঘণ্টা, মে ২০, ২০২৪
র‍্যাব হেফাজতে নারীর মৃত্যুর ঘটনায় এবার এসআই প্রত্যাহার

ময়মনসিংহ: র‍্যাব হেফাজতে নারী আসামি সুরাইয়া খাতুন (৫২) মৃত্যুর ঘটনায় ময়মনসিংহের নান্দাইল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) নাজমুল হাসানকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। গৃহবধূ রেখা হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন তিনি।

 

সোমবার (২০ মে) দুপুর দেড়টায় নান্দাইল মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আব্দুল মজিদ বাংলানিউজকে এই তথ‍্য নিশ্চিত করেছেন।

এর আগে ১৮ মে রাতে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এসআই নাজমুল হাসানকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করেন বলে জানান ওসি আব্দুল মজিদ।

ময়মনসিংহ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপস) মো. শামীম হোসেন বলেন, বিভিন্ন কারণে তাকে পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা মনে করেছেন কাজের প্রতি তার আরও দায়িত্বশীল হওয়া প্রয়োজন। তাই তাকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।

তবে সূত্র জানায়, গত ১৬ মে রাতে গৃহবধূ রেখা আক্তার হত্যা মামলায় আসামি শ্বশুর আজিজুল ইসলাম ও শাশুড়ি সুরাইয়া খাতুনকে নান্দাইল মডেল থানায় ডেকে নেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই নাজমুল। সেখানে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে সাদা কাগজে স্বাক্ষর রেখে কিছুক্ষণ পরে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়।  

এরপর থানার সামনে থেকে র‍্যাবের একটি দল আজিজুল ইসলামকে ছেড়ে দিয়ে সুরাইয়াকে আটক করে ভৈরব ক্যাম্পে নিয়ে যায়।  

এ ঘটনার একদিন পর গত ১৭ মে সকালে সুরাইয়া খাতুনকে র‍্যাব সদস্যরা অজ্ঞান অবস্থায় ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করে। মূলত ওই ঘটনায় দায়িত্ব অবহেলার অভিযোগে এসআই নাজমুল হাসানকে প্রত‍্যাহার করা হয়েছে বলে দাবি সংশ্লিষ্ট সূত্রের।  

জানা যায়, প্রায় দেড় বছর আগে নান্দাইল উপজেলার ভেড়ামারি গ্রামের কৃষক হাসিম উদ্দিনের মেয়ে রেখা আক্তারের সঙ্গে একই উপজেলার চন্ডিপাশা ইউনিয়নের বরুনাকান্দি গ্রামের আজিজুল ইসলামের ছেলে তাইজুল ইসলাম লিমনের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে তার স্বামী তাইজুল ইসলাম দুই লাখ টাকা যৌতুকের জন্য রেখাকে চাপ সৃষ্টি করেন।  

এরপর অটোরিকশা কিনতে রেখার পরিবার তার স্বামীকে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা দিলেও তিনি অটোরিকশা কেনেননি বলে রেখার পরিবারের অভিযোগ। পরে আরও একলাখ টাকা যৌতুক দাবি করলে টাকা দিতে অস্বীকার করেন স্ত্রী রেখা ও তার পরিবার।  

এরই মধ্যে রেখাকে অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় গত ২৬ এপ্রিল রাতে রেখাকে যৌতুকের তাকার জন্য তার স্বামী তাইজুল ইসলাম লিমন, শ্বশুর আজিজুল ইসলাম ও শাশুড়ি সুরাইয়া খাতুন নির্যাতন করেন। এতে তিনি  অসুস্থ হয়ে পড়লে ওই রাতেই তাকে পার্শ্ববর্তী ইশ্বরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসার জন্য নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।  

এ সময় তার স্বামী ও শাশুড়ি হাসপাতালে মরদেহ রেখে পালিয়ে গেলেও শ্বশুর আজিজুল ইসলামকে হাসপাতালের কর্মচারীরা আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেন। পরে শ্বশুরবাড়ির লোকজন গৃহবধূ রেখা ফাঁস নিয়ে আত্মহত্যা করেছে বলে জানায়।

 এ ঘটনায় নান্দাইল থানায় অপমৃত্যু মামলা দায়ের হলে গত ২ মে রেখার মা রমিছা বেগম ময়মনসিংহের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ ট্রাইব্যুনালে মৃত রেখার স্বামী, শাশুড়ি ও শ্বশুরকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন।  

পরে আদালতের বিচারক শুনানি শেষে নান্দাইল থানার ওসিকে মামলাটি এফআইআর করে তদন্তের নির্দেশ দিলে গত ১৩ মে নান্দাইল থানায় মামলাটি রেকর্ড করা হয়। ওই মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন নান্দাইল থানার এস.আই নাজমুল হাসান।

আরও পড়ুন>> র‌্যাব হেফাজতে নারীর মৃত্যু, ভৈরব ক্যাম্প কমান্ডার প্রত্যাহার

                        র‌্যাব হেফাজতে নারী আসামির মৃত্যু, ময়নাতদন্ত শেষে দাফন

বাংলাদেশ সময়: ১৪০৬ ঘণ্টা, মে ২০, ২০২৪
এসএএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।