ঝিনাইদহ: কলকাতার নিউটাউন এলাকার আবাসন সঞ্জীবা গার্ডেন থেকে ঝিনাইদহ-৪ কালীগঞ্জ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনারের মরদেহ উদ্ধার করেছে সে দেশের পুলিশ।
বুধবার (২২ মে) সকালে এমন খবর পাওয়ার পর ঝিনাইদহ কালীগঞ্জ শহরে তার বাড়ির সামনে ও দলীয় কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে শত শত মানুষ কান্নায় ভেঙে পড়েন।
আত্মীয়-স্বজন, দলীয় নেতাকর্মীরা বলছে কীভাবে তিনি চলে গেলেন। তিনি তো কারো ক্ষতি করেননি। তাকে কেন মেরে ফেলা হলো। আমরা এর বিচার চাই।
ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনারের মরদেহ উদ্ধার করেছে ভারতের পুলিশ। ভারত যাওয়ার ১০ দিন পর বুধবার (২২ মে) সকালে কলকাতার নিউটাউন এলাকার আবাসন সঞ্জীবা গার্ডেন থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে সেদেশের পুলিশ। তার ব্যক্তিগত সহকারী (পিএস) আব্দুর রউফ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
রোববার (১২ মে) দুপুরে সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার চিকিৎসার জন্য দর্শনার গেদে বন্দর দিয়ে ভারতের কলকাতায় যান। আনার ভারতীয় সীমান্ত এলাকা ঝিনাইদহ-৪ আসনের টানা তিনবারের সংসদ সদস্য (এমপি) ও কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। এমপি আনার জেলার কালীগঞ্জ শহরের ভূষণ রোডস্থ বাড়িতে বসবাস করতেন। তার দুই মেয়ে ও স্ত্রী রয়েছে।
কালীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান শিবলী নোমানী জানান, আমি কোনোভাবেই তার মৃত্যু মেনে নিতে পারছি না। সংবাদ শুনেই রাজনৈতিক কার্যালয়ের সামনে এসেছি। তার মরদেহ ভারতের একটি ভবন থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। তবে কীভাবে তার মৃত্যু হয়েছে তা বলতে পারছি না। এমপির সঙ্গে কারো কোনো বিরোধ ছিল না। যা ছিল তা খুবই সামান্য কিন্তু তার জনপ্রিয়তা ছিল অনেক। রাষ্ট্রীয়ভাবে এমপির মরদেহ দেশে আনা হবে।
কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আইয়ুব হোসেন জানান, আমরা একজন অভিভাবক হারিয়েছি। এমপি আনারের মতো একজন রাজনীতিবিদকে হারিয়ে কালীগঞ্জ বাসীর অপূরণীয় ক্ষতি হলো।
উল্লেখ্য, পশ্চিমবঙ্গে বরাহনগর থানার অন্তর্গত মণ্ডলপাড়া লেনে গোপাল বিশ্বাস নামে পরিচিত এক ব্যক্তির বাড়িতে ওঠেন। পরের দিন ১৩ মে ডাক্তার দেখানোর জন্য বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান। ১৫ মে বরাহনগরের বাসিন্দা গোপাল বিশ্বাসের হোয়াটস অ্যাপে ম্যাসেজ করে জানান তিনি দিল্লি যাচ্ছেন। ১৬ মে এমপির ব্যক্তিগত গাড়িচালক তরিকুল ইসলামের ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনেও একটি ম্যাসেজ পাঠিয়ে জানান দিল্লি যাওয়ার কথা। এরপর থেকে রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হয়ে যান আনোয়ারুল আজিম আনার। এরপর থেকে পরিবার ও রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। তাকে ফোনে বা কোনো মাধ্যমে না পেয়ে বিষয়টি সরকারের ঊর্ধ্বতন পর্যায়ে জানান উদ্বিগ্ন এমপি পরিবার। এমপি আনোয়ারুল আজিম আনারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পেরে ১৮ মে থানায় একটি মিসিং ডাইরি করেন এমপির পরিচিত ভারতের বরাহনগরের বাসিন্দা গোপাল বিশ্বাস।
আনোয়ারুল আজীম আনার ঝিনাইদহ-৪ আসনের সরকার দলীয় সংসদ সদস্য। তিনি ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালে টানা ৩ বার আওয়ামী লীগ থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি দীর্ঘ ১০ বছর এলাকার উন্নয়নে কাজ করছেন। সংসদ সদস্য হিসেবে বিভিন্ন সেবামূলক কাজের জন্য তার বেশ সুনাম রয়েছে। সব থেকে আলোচিত বিষয় তার নির্বাচনী এলাকায় যেকোনো ব্যক্তি মারা গেলে তার বাড়িতে যান এবং শোকার্ত পরিবারকে সান্ত্বনা দেন। এমনও হয়েছে তিনি একদিনে ১০ জন মৃত ব্যক্তির বাড়িতে গিয়ে পরিবারের সঙ্গে দেখা করেছেন। এ পর্যন্ত প্রায় ৬ হাজার মৃত ব্যক্তির জানাজায় অংশগ্রহণ করেছেন। যা দেশের একজন জনপ্রতিনিধি হিসেবে বিরল।
সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার পার-শ্রীরামপুর গ্রামের ইয়াকুব আলীর ৪ ছেলের মধ্যে ছোট। তিনি ছাত্র জীবন থেকেই খেলাধুলা আর ব্যবসার সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। ১৯৮৬ সালে ব্যবসা আর ৮৮ সালে রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন। সেই সময়কার বিএনপি নেতা ও পরবর্তীকালে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য আব্দুল মান্নানের সঙ্গে থেকে রাজনীতি করতে থাকেন। ১৯৯২ সালে কালীগঞ্জ পৌরসভা গঠিত হলে তিনি প্রথম পৌর কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। ১৯৯৫ সালে আব্দুল মান্নান বিএনপি ছেড়ে আওয়ামী লীগে যোগ দিলে আনোয়ারুল আজিমও আওয়ামী লীগের সক্রিয় কর্মী হন। পরে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে তারা দুজনই এলাকায় আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন।
২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায় এলে তিনি ভারতে চলে যান। সেখানে দীর্ঘদিন অবস্থানকালে ২০০৪ সালে কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। এরপর তিনি দেশে ফিরে আসেন। ২০০৯ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে আব্দুল মান্নান আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে এমপি আর দলের সমর্থনে আনোয়ারুল আজীম কালীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান থাকা অবস্থায় আব্দুল মান্নানের সঙ্গে রাজনৈতিক বিরোধ তৈরি হয়। ২০১৪ সালে তিনি দলীয় মনোনয়ন নিয়ে ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
বাংলাদেশ সময়: ২১৪৮ ঘণ্টা, মে ২২, ২০২৪
আরএ