ঢাকা: ঘূর্ণিঝড় রিমালের কারণে সব মন্ত্রণালয়, বিভাগ এবং অধীন দপ্তর-সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মহিববুর রহমান।
রোববার (২৬ মে) দুপুরে সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সম্মেলনকক্ষে ঘূর্ণিঝড় বিষয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা জানান।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, আবহাওয়ার পূর্বাভাস পাওয়ার পর থেকেই আমরা প্রস্তুতি শুরু করেছি। গতকাল আমরা দুটি মিটিং করেছি। আমরা বলেছিলাম আজ ভোর থেকে আবহাওয়া দুযোগাগপূর্ণ হতে পারে। কিন্তু ঝড়ের গতিটা একটু কম ছিল বলে আজ ভোরে আসেনি। গতকাল গতি ছিল ১৬-১৭ কিলোমিটার। কিন্তু রাতে গতি কমে ১০ এর নিচে আসে এবং পরে ৬ কিলোমিটারে আসে। যার জন্য এটা সময় মতো পৌঁছায়নি।
তিনি আরও বলেন, আমরা পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, যেহেতু মহাবিপৎসংকেতে পরিণত হয়েছে, এটা আজ সন্ধ্যা নাগাদ প্রথম ভাগ বাংলাদেশে অতিক্রম শুরু হবে এবং মধ্য রাতে মূল ঝড় বাংলাদেশ অতিক্রম করবে। যেখানে ঝড় সৃষ্টি হয়েছে সেখানে বাতাসের গতিবেগ ৯০-১২০ কিলোমিটার। এটা যখন উপকূলে আসবে তখন এটার গতিবেগ ১১০-১৩০ কিলোমিটার পর্যন্ত হবে। ঝড়ের কারণে উপকূলে ১০-১২ ফুট পর্যন্ত প্লাবিত হবে। জোয়ার থাকলে এটা আরও বাড়ার সম্ভাবনা থাকে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, সাতক্ষীরা থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত পুরো এলাকাটাই কম-বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা আছে। এজন্য আমরা সবাইকে নিয়ে সভা করেছি। আমরা প্রস্তুতি নিয়েছি।
তিনি আরও বলেন, ঝড়ের আরেকটা দিক হলো এখানে প্রচুর বৃষ্টিপাত হবে। এটা যখন শুরু হবে তখন থেকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ৩০০ মিলিমিটার বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। যার জন্য আমরা মনে করি সমস্ত বাংলাদেশে বৃষ্টিপাতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এজন্য আমাদের পাহাড়ি এলাকাগুলোতে ব্যাপকভাবে ল্যান্ড স্লাইড হওয়ার সম্ভাবনা আছে। আমাদের শহর, গ্রাম, সিটি করপোরেশন, পৌরসভাগুলোতে জলাবদ্ধতা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ট্রাফিক জটের সৃষ্টি হতে পারে। এজন্য স্বাভাবিক চলাচলে বিঘ্ন ঘটতে পারে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, এজন্য আমরা ইতোমধ্যে সিদ্ধান্ত নিয়েছি এখন থেকে সমস্ত মন্ত্রণালয়ের সব কর্মচারীদের ঝড় শেষ না হওয়া পর্যন্ত ছুটি বাতিল করা হয়েছে। লঞ্চ-স্টিমার চলাচল বন্ধ থাকবে।
ছুটি কী শুধু এ মন্ত্রণালয়ের বাতিল না সবার- প্রশ্নে তিনি বলেন, সব মন্ত্রণালয়ের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। পৌরসভা, সিটি করপোরেশন ও সব মন্ত্রণালয়ের সবার ছুটি বাতিল করা হয়েছে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, চট্টগ্রামে বঙ্গবন্ধু টানেল আজ সন্ধ্যা থেকে আগামীকাল সকাল পর্যন্ত বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
তিনি আরও বলেন, অভিজ্ঞতার আলোকে মোকাবিলার জন্য সার্বিকভাবে প্রস্তুতি নিয়েছি। মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে আসার কাজ চলছে। আশা করি, সবাইকে নিয়ে আসতে পারবো। পরে রেসকিউ করার জন্য মেডিকেল টিম প্রস্তুত রয়েছে। সেনাবাহিনী দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রস্তুত রয়েছে। বিশেষ করে পাহাড়ি এলাকায় ফায়ার সার্ভিস ও সেনাবাহিনী প্রস্তুত হয়েছে। আমরা সক্ষমতা অনুযায়ী মোকাবিলা করতে প্রস্তুত আছি।
আমরা কাল বিলম্ব না করে এখনই সবাইকে নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করছি। সেখানে ৮-৯ হাজার আশ্রয়কেন্দ্র তৈরি করে রেখেছি। পর্যাপ্ত শুকনো খাবার, বিস্কুট এবং পানিসহ চিকিৎসা সামগ্রী সেখানে পৌঁছে গেছে।
এছাড়া সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে আমরা আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে তৈরি রেখেছি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে যারা জড়িত তারা যেন কাছাকাছি থেকে। আশ্রয়ের যেন সমস্যা না হয়।
আমাদের কাছে যে তথ্য, এ পর্যন্ত প্রায় আট লাখের বেশি মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। মহাবিপৎসংকেত যেহেতু ঘোষণা করা হয়েছে সে কারণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বলেছি দ্রুত আনার জন্য।
বাংলাদেশ সময়: ১৪১১ ঘণ্টা, মে ২৬, ২০২৪
এমআইএইচ/আরবি