সিলেট: ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে সিলেটেও দিনভর গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি ও দমকা হাওয়া বইছে। এতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়েছে।
আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, অন্যান্য এলাকার ন্যায় সিলেটের ওপর দিয়েও বৃষ্টি/বজ্রবৃষ্টি এবং ঘণ্টায় ৬০ থেকে ৮০ মাইল বেগে অস্থায়ীভাবে দমকা বা ঝোড়ো হাওয়া বাইতে পারে। সেই সঙ্গে কোথাও কোথাও ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে। সোমবার রাত পর্যন্ত এ অবস্থা বিরাজমান থাকতে পারে।
সিলেট আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ মোহাম্মদ সজীব হোসাইন বলেন, ২৪ ঘণ্টায় (রোববার সকাল থেকে সোমবার সকাল পর্যন্ত) সিলেটে ১৬ দশমিক ২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। আর সোমবার সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত ২ মিলিমিটার, ৯টা থেকে ১২টা ৩ মিলিমিটার, ১২টা থেকে ৩টা পর্যন্ত ৮ দশমিক ২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। দুপুর ২টা থেকে বৃষ্টি ও বাতাসের পরিমাণ বেড়েছে।
এর আগে রোববার পর্যন্ত সিলেটে তাপপ্রবাহ বইছিল। তীব্র গরমে অতিষ্ঠ ছিল জনজীবন। বৃহস্পতিবার থেকে শনিবার পর্যন্ত টানা তিনদিনের তাপমাত্রায় একের পর এক রেকর্ড ভেঙেছে।
সর্বশেষ চলতি মৌসুমের গত শনিবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৩৮.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এমন তীব্র গরমে হাঁসফাঁস করছিলেন সিলেটের মানুষ। টানা গরমের পর বৃষ্টি ঝরায় সিলেটে স্বস্তি বিরাজ করে। তবে নিম্নচাপের প্রভাবে দিনভর বৃষ্টি মানুষের জীবনযাত্রায় প্রভাব ফেলে।
সোমবার সন্ধ্যা রাত পৌনে ৮টা পর্যন্ত রিমালের প্রভাবে সিলেটে বৃষ্টিপাত ও ঝোড়ো হাওয়া বইছে। এতে করে রাস্তাঘাটে মানুষের চলাচল কম রয়েছে। প্রয়োজন ছাড়া লোকজন বাসা থেকে বের হচ্ছেন না। তবে প্রয়োজনে ঘর থেকে বেরোনো লোকজনকে ছাতা ও রেইনকোট ব্যবহার করতে দেখা গেছে।
উল্লেখ্য, ঘূর্ণিঝড় রিমালের তাণ্ডবে এ পর্যন্ত ১০ জন মারা গেছেন জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. মহিববুর রহমান।
তিনি আরও জানান, ১৯ জেলায় ৩৭ লাখ ৫৮ হাজার ৯৬ জন মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। আর এক লাখ ৫০ হাজার ৪৭৫ ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত। ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য প্রত্যেক মন্ত্রণালয় থেকে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করে অতিদ্রুত তাদের সহায়তা দেওয়া হবে।
প্রতিমন্ত্রী জানান, এ পর্যন্ত মোট ১০ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে খুলনায় একজন, সাতক্ষীরায় একজন, বরিশালে তিনজন, পটুয়াখালীতে একজন, ভোলায় তিনজন, চট্টগ্রামে একজনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। ঘর, গাছ ও দেয়াল চাপা এবং পানিতে ডুবে এদের মৃত্যু হয়েছে। আর মোট ১৯টি জেলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জেলাগুলো- খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, বরিশাল, পটুয়াখালী, পিরোজপুর, বরগুনা, ভোলা, ফেনী, কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নড়াইল, গোপালগঞ্জ, শরীয়তপুর ও যশোর।
ক্ষতিগ্রস্ত উপজেলার সংখ্যা ১০৭ এবং ইউনিয়ন ও পৌরসভার সংখ্যা ৯১৪। ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা ৩৭ লাখ ৫৮ হাজার ৯৬ জন। সম্পূর্ণভাবে বিধ্বস্ত হয়েছে ৩৫ হাজার ৪৮৩টি ঘরবাড়ি এবং আংশিকভাবে বিধ্বস্ত হয়েছে এক লাখ ১৪ হাজার ৯৯২টি ঘরবাড়ি। ঘূর্ণিঝড় সতর্কবার্তার পরিপ্রেক্ষিতে উপকূলীয় এলাকাতে নয় হাজার ৪২৪টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এসব আশ্রয়কেন্দ্র ও স্থানীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আট লাখের বেশি লোক আশ্রয় নিয়েছে। গরু-মহিষ, ছাগল-ভেড়াসহ আশ্রিত পশুর সংখ্যা ৫২ হাজার ১৪৬টি। দুর্গত লোকজনকে চিকিৎসা সেবা দিতে মোট এক হাজার ৪৭১টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে, যার মধ্যে চালু আছে এক হাজার ৪০০ টিম।
প্রতিমন্ত্রী জানান, দুর্যোগকবলিত মানুষের সাহায্যে ইতোমধ্যে ছয় কোটি ৮৫ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ১৫টি জেলায় জিআর (ক্যাশ) তিন কোটি ৮৫ লাখ নগদ টাকা, পাঁচ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন চাল, পাঁচ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার, শিশু খাদ্য ক্রয়ের জন্য এক কোটি ৫০ লাখ, গো খাদ্য ক্রয়ের জন্য এক কোটি ৫০ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ২১৫২ ঘণ্টা, মে ২৭, ২০২৪
এনইউ/এএটি