ঢাকা, শনিবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

আম রপ্তানির জন্য অঞ্চলভিত্তিক প্যাকিং হাউস নির্মাণের দাবি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৩৬ ঘণ্টা, মে ২৮, ২০২৪
আম রপ্তানির জন্য অঞ্চলভিত্তিক প্যাকিং হাউস নির্মাণের দাবি

ঢাকা: বাংলাদেশের মত বড় কৃষি প্রধান দেশে সেন্ট্রাল প্যাকিং হাউস মাত্র একটি। যার ফলে আম কিংবা অন্যান্য কৃষিপণ্য রপ্তানি করা কঠিন।

তাই দেশের আম রপ্তানির পথ সুগম করতে অঞ্চলভিত্তিক প্যাকিং হাউস তৈরির তাগিদ দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। একইসঙ্গে এ খাতের সার্বিক উন্নয়নে ৮ দফা দাবি জানিয়েছে আম চাষি, ব্যবসায়ী ও রপ্তানিকারকরা।  

সোমবার (২৭ মে) জাতীয় প্রেসক্লাবের তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া মিলনায়তনে ‘বাংলাদেশের আম উৎপাদনের সমস্যা ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক জাতীয় আম সেমিনারে এসব কথা বলা হয়।

সেমিনারটির আয়োজন করে চাপাইনবয়াবগঞ্জ জার্নালিস্ট ফোরাম ঢাকা (সিজেএফডি)। সহযোগিতায় ছিল বাংলাদেশ অ্যাগ্রো কেমিক্যাল ম্যানুফেকচারাস অ্যাসোসিয়েশন।  

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ময়মনসিংহ বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় কৃষি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. গোলাম রাব্বানী।  

এসময় তিনি বলেন, আম হচ্ছে একটি মাল্টি পারপাস ফল। যত ফল আছে তার মধ্যে আমে ভিটামিন এ সব থেকে বেশি থাকে। যা অন্ধত্ব দূর করতে এবং হার্টের সমস্যা দূর করতে কাজ করে। তবে এদেশে মান সম্মত আম উৎপাদনের কোনো ব্যবস্থা নেই। আমের কোয়ালিটি কন্ট্রোল করার মত কোনো ব্যবস্থা নেই। পাশাপাশি আম আহরণের জন্য উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার পার্শ্ববর্তী দেশে থাকলেও আমাদের দেশে তেমন একটা নেই। একই সঙ্গে দেশে অপরিপক্ব আম বাজার জাত করার প্রবণতা দেখা যায়, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। তাই কোন আম কখন আহরণ করতে হবে সে বিষয়ে আম কেলেন্ডার করা উচিত। একই সঙ্গে আম পেকেজিং এর সঠিক উপায় আমরা এখনো ভাল করে জানিনা। ফলে বিদেশে আম রপ্তানিতে অনেক অংশে পিছিয়ে রয়েছি।  

সেমিনারে সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, বাংলাদেশের মত এত বড় কৃষি প্রধান দেশে সেন্ট্রাল প্যাকিং হাউস মাত্র একটি। এটি আন্তর্জাতিক মানেরতো দূরের কথা স্থানীয় মানেরও নয়। একটি মাত্র প্রতিষ্ঠান থেকে ছাড়পত্র চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ বা অন্য প্রান্তিক জেলায় উৎপাদিত আম কিংবা অন্যান্য কৃষিপণ্য রপ্তানি করা কঠিন। কিন্তু আশার কথা হচ্ছে ইতোমধ্যে বিভিন্ন এলাকায় আরও তিনটি এ ধরনের প্যাকিং হাউস স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ১০ কোটি টাকায় একেকটি প্যাকিং হাউস স্থাপন সম্ভব। তাই দ্রুত এই তিনটিসহ অন্যান্য অঞ্চলে আরও এ ধরনের প্যাকিং হাউস গড়ে তোলা দরকার।  

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি মু. জিয়াউর রহমান বলেন, আমাদের দেশের এখনো সনাতন পদ্ধতি আম চাষ হয়। বিশেষ করে আম গাছ থেকে নামানো ও সংরক্ষণের ক্ষেত্রে চাষিদের তেমন প্রশিক্ষণ নেই। আগামীতে আমের টেকসই উন্নয়নে এসব ক্ষেত্রে কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে।  

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের নির্বাহী চেয়াম্যান, ড. শেখ মোহাম্ম বখতিয়ার বলেন, জিএপি (গুড অ্যাগ্রিকালচারাল প্র্যাকটিসেস) স্ট্যান্ডার্ড অনুসরণ করে আম চাষের জন্য একটি গাইডলাইন করে দেবে সরকার। এ পদ্ধতিতে উৎপাদিত আম বিশ্ববাজারে নিরাপদ খাদ্য হিসেবে সহজেই রপ্তানি সম্ভব। আমের গুণমান আন্তর্জাতিক পর্যায়ে উন্নীত করতে নেদারল্যান্ডের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গেও কাজ করা হচ্ছে। এছাড়া আমের বিষয়ে উচ্চতর শিক্ষায় ছয়জনকে বিভিন্ন দেশে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জনের জন্য পাঠানো হচ্ছে। এদিকে দেশের সুমিষ্ট আম বিশ্বের কাছে তুলে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতদের চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচলের একটি বাগানে নিয়ে যাওয়া হবে বলেও জানান তিনি।  

বাংলাদেশ অ্যাগ্রো–কেমিক্যাল ম্যানুফাকচারাস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কে এস এম মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, রোগ–বালাই দূর করতে গিয়ে ক্ষতিকর বিষক্ত পদার্থসমৃদ্ধ মানহীন কীটনাশক ব্যবহার আমের জন্য মারাত্নক ক্ষতি বয়ে আনতে পারে। বাংলাদেশে এখনো অনেক মানহীন ক্ষতিকর কীটনাশক আমদানি ও ব্যবহারের অনুমোদন দেওয়া রয়েছে। এসব কীটনাশক ব্যবহারের ফলে আমসহ অন্যান্য কৃষি পণ্য কতটুকু বিষক্ত হচ্ছে তাও পরিমাপের কোনো উপায় নেই। তাই আন্তর্জাতিক বিশ্ব আমাদের আমকে নিরাপদ খাদ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেয় না। তাই এ কীটনাশক ব্যবস্থাপনায় সরকারের আরও মনোযোগী হওয়া প্রয়োজন।

মুখ্য আলোচকের বক্তব্যে আঞ্চালিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্র (সাবেক আম গবেষণা কেন্দ্র), চাঁপাইনবাবগঞ্জের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মুখলেসুর রহমান বলেন, বিশ্বে আম উৎপাদনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ নবম হলেও প্রধান দশটি রপ্তানি কারক দেশের তালিকায় এখনো স্থান পায়নি। তবে আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশি আমের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। সঠিক ব্যবস্থাপনায় আম রপ্তানি বাড়ানোর সম্ভবনা রয়েছে।  

সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ জার্নালিস্ট ফোরাম (সিজেএফডি) ঢাকার সভাপতি আবদুল্লাহ আল মামুন। সঞ্চালয়না করেন সিজেএফডির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আনোয়ার হক।

বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিদ্যুৎ জ্বালানি খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মু. জিয়াউর রহমান, সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো শাহরিয়ার আলম, সংসদ সদস্য মো আব্দুল ওদুদ, কৃষি সচিব ওয়াহিদা আক্তার প্রমুখ।  

বাংলাদেশ সময়: ০৮৩৬ ঘণ্টা, মে ২৮, ২০২৪
ইএসএস/এমএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।