ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

ঝুপড়ি ঘরে থাকছেন ইউপি মেম্বার, বৃষ্টি হলে ভিজছে বিছানা!

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১০২ ঘণ্টা, মে ২৮, ২০২৪
ঝুপড়ি ঘরে থাকছেন ইউপি মেম্বার, বৃষ্টি হলে ভিজছে বিছানা! ঝুপড়ি ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে জাকারিয়া হোসেন

ফরিদপুর: জনপ্রতিনিধি হয়ে করতেন মানুষের সেবা। আর সেই জনপ্রতিনিধি আজ অসহায়ের মতো বসবাস করছেন একটি ঝুপড়ি ঘরে।

একটু বৃষ্টি হলেই পলিথিনের ছাউনি বেয়ে পানিতে ভিজে যায় থাকার বিছানাও। তবে কখনও তিনি অসহায়ত্বের কথা কাউকে বলেননি। সম্প্রতি স্ট্রোকজনিত কারণে দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে তার জীবন। অসহায়ত্বের কাছে হেরে গিয়ে সাহায্যের আকুতি করছেন, আবদার করেছেন একটি সরকারি ঘরেরও।  

এমনই দুর্বিষহ গল্প নেমে এসেছে ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার ফুলসূতি ইউনিয়নের পোড়াদিয়া গ্রামের বাসিন্দা জাকারিয়া হোসেনের (৬০) জীবনে।

তিনি ২০১৭ সালে প্রথমবারের মতো ওই ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ড থেকে ইউপি মেম্বার হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন।  

সরেজমিনে দেখা গেছে, একটি ঝুপড়ি ঘরে পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন জাকারিয়া হোসেন। ঘরটি পলিথিনের ছাউনি আর পাটখড়ির বেড়া দিয়ে তৈরি। ভেতরে তেমন কোনও আসবাবপত্র নেই। শুধু একটি রাত্রিযাপন করার জন্য কাঠের খাট রয়েছে।  জায়গা-জমি বলতে তেমন কিছু নেই বললেই চলে। মাত্র ৪ শতাংশ জায়গা রয়েছে তার। এই জায়গার ওপরেই ঝুপড়ি ঘর করে পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন তিনি।  

দীর্ঘ পাঁচ বছর মানুষের সেবা করেছেন এই জাকারিয়া হোসেন। কিন্তু কখনও অর্থের লোভ তাকে তাড়না করেনি। মাছ বিক্রি করেই চালাতেন তার সংসার। এভাবেই তিন মেয়ের মধ্যে দুজনকে বিয়ে দিয়েছেন। বর্তমানে এক মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়েই একটি ঝুপড়ি ঘরে বসবাস করছেন জাকারিয়া হোসেন। তার নেই কোনো ছেলে সন্তান। ছোট মেয়ে নগরকান্দা সরকারি কলেজে পড়াশোনা করছেন। তবে, এই পড়াশোনার খরচ চালাতে গিয়েও হিমশিম খাচ্ছেন তিনি। এমন পরিস্থিতিতে মেয়েকে বিয়ে দেওয়ার জন্য একটি সরকারি ঘরের আকুতি জানিয়েছেন জাকারিয়া মেম্বার।  

জাকারিয়া হোসেন বলেন, ‘আমি ইউপি সদস্য ছিলাম। কখনও অর্থের প্রলোভনে পড়িনি। আজ আমি অসহায় হয়ে পড়েছি। পরিবার নিয়ে বেঁচে থাকা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহারের সরকারি একটি ঘর পেলে পরিবার নিয়ে বেঁচে থাকতে পারতাম, দিতে পারতাম মেয়ের বিয়ে।  

তিনি বলেন, ‘মাছ বিক্রি করে আমার সংসার চলতো। কিন্তু স্ট্রোক করে আমি অচল হয়ে পড়েছি। আমার পরিবারকে এখন কে দেখবে? আমার কোনো ছেলে সন্তান নেই. তিন মেয়ে আছে। দুই মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি।  ছোট মেয়ে কলেজে পড়াশোনা করছে। বিয়ের যোগ্য ছোট মেয়েটাকে কীভাবে বিয়ে দেব; তার লেখাপড়ার খরচই জোগাতে হয় মানুষের কাছে সাহায্যে চেয়ে। সবকিছু মিলে আজ আমি অসহায় হয়ে পড়েছি। ’ 

স্থানীয়রা জানান, ইউপি সদস্য থাকাকালীন কারও সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেননি জাকারিয়া হোসেন। একজন সহজ, সরল ও নিরীহ মানুষ ছিলেন তিনি। খুব কষ্ট করেই তার সংসার চালিয়েছেন।  

ফুলসূতি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. আরিফ হোসেন বলেন, জাকারিয়া মেম্বার ভালো মানুষ। এক সময়ে তিনিতো মোটামুটি ভালো অবস্থায় ছিলেন, কিন্তু কেন আজ তার এমন পরিস্থিতি বুঝতে পারছি না। তার বিষয়ে আমি শুনেছি, তিনি মানবেতর জীবনযাপন করছেন। খুব শিগগিরই তার জন্য ভালো একটা ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে এবং ইউপির পক্ষ থেকে সব সময় তার পাশে থাকার চেষ্টা করব।  

এদিকে জাকারিয়া হোসেনকে সরকারিভাবে ঘর করে দেওয়ার কথা জানিয়েছেন নগরকান্দা কর্মকর্তা কাফি বিন কবির।  

এই কর্মকর্তা বলেন, তার বিষয়ে আমরা জানতে পেরেছি। উপজেলা নির্বাচন থাকাকালীন খোঁজখবর নিতে পারিনি। শিগগিরই তার বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া হবে। তবে, তার বিষয়ে সরকারিভাবে ‘জায়গা আছে, ঘর নেই’ আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে একটি ঘর করে দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। ইতোমধ্যে সমাজসেবা অধিদপ্তরের সঙ্গে আমরা কথা বলেছি। দ্রুত সময়ের মধ্যে চেষ্টা করব যেন, জাকারিয়া হোসেন ঘরটা পান।

বাংলাদেশ সময়: ২১০০ ঘণ্টা, মে ২৮, ২০২৪
এসআরএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।