ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৯ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

সিলেটে পানিবন্দি মানুষের আকুতি

‘একটা নৌকা নাইনি বাছাইবার লাগি’

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০০৯ ঘণ্টা, মে ৩০, ২০২৪
‘একটা নৌকা নাইনি বাছাইবার লাগি’

সিলেট: ‘হায়রে ফেরী ঘাটের নৌকা, একটা নৌকা নাইনি বাছাইবার লাগি’—সিলেটের সীমান্তবর্তী জৈন্তাপুর উপজেলার ময়নারহা খেয়াঘাট এলাকার বাসিন্দা সাজিদুর রহমান সাজন নামে এক যুবক সাহায্যের আকুতি জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এমন পোস্ট করেছেন।

বুধবার (২৯ মে) দিবাগত রাত ১১টা ৯ মিনিটে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট দেন তিনি।

‘লাশ উদ্ধার অইমু হয়তো, জীবিত উদ্ধার অইতে পারতাম না, হয়তো এইটা শেষ পোস্ট’—এভাবেই বাঁচার আকুতি জানান সাজিদুর সাজন।

এর আগে রাত ১০টার দিকে ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে সাজিদুর রহমান সাজন লেখেন, ‘আমি দৌলা চেয়ারম্যান’র ভাতিজা দিলু মিয়ার পোয়া, বাড়ি ফেরিঘাট। আমরারে কেউ বাঁচাও, আমরার মরণ সামনে, কেউ বাঁচাও আমরারে, মা ভাই লইয়া আটকিগেছি’।

আকুতি জানিয়ে সাজিদুর রহমান আরও লেখেন, ‘অনেক স্রোতের কারণে কেউ উদ্ধারের জন্য আসতে পারছে না, সুন্দর এই ভুবনে বাঁচার অনেক ইচ্ছা। ’



সাজনের মতো জৈন্তাপুর উপজেলার আরও কয়েকটি জায়গা থেকে উজানের ঢলে আকস্মিক বন্যায় আটকে পড়া কয়েকজন নৌকা চেয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করেন।

জৈন্তাপুরের ময়নাহাটি খেয়াঘাট এলাকার আহমেদ নাইম রাত সাড়ে দশটায় ফেসবুকে লেখেন— ‘একটা ইঞ্জিন নৌকার দরকার, কেউ বাঁচাও আমরারে’।

এদিকে উদ্ধার কাজে সেনাবাহিনী চেয়ে জৈন্তাপুর উপজেলার বাসিন্দিা সাংবাদিক ফারুক আহমদ তার ফেসবুক আইডিতে লেখেন—‘উদ্ধারকাজে সেনাবাহিনী নিয়োজিত করা জরুরি। জৈন্তাপুর গোয়াইনঘাট, কানাইঘাটে সর্বকালের ভয়াবহ বন্যা। ’ তিনি এই পোস্টে ট্যাগ করেন সিলেটের জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে।

সরকারি মহিলা কলেজের সহকারী অধ্যাপক সাহেদ আহমদ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পানিবন্দি মানুষের জন্য সহযোগিতা চেয়ে লেখেন, ‘কেউ নিজপাট ময়নারহাটি, মাঝেরটুকে একটি নৌকা পাঠান, কিছু লোক আটকা পড়েছেন। ’

শেষ পর্যন্ত আটকে পড়া এসব মানুষজনকে উদ্ধার করা গেছে কিনা, কিংবা সাহায্য চাওয়া সাজিদুর রহমান সাজন ও আহমদ নাইমদের সর্বশেষ অবস্থা কী, কেউ তাদের উদ্ধার করেছেন কি না, তা জানা যায়নি।

জৈন্তাপুরে টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। উপজেলার সারি, বড় নয়াগং ও রাংপানি নদের পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন জৈন্তাপুর সদর, নিজপাট ও চারিকাটা ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলের বাসিন্দারা।

উপজেলার নিজপাট লামাপড়া, বন্দরহাটি, ময়নাহাটি, জাঙ্গালহাটি, বড়খেল, মেঘলী, তিলকৈপাড়া, ফুলবাড়ি, নয়াবাড়ি, হর্নি, বাইরাখেল, গোয়াবাড়ি, ডিবির হাওর, ঘিলাতৈল, মুক্তাপুর, বিরাইমারা হাওর, খারুবিল, লমানীগ্রাম, কাটাখাল, বাউরভাগ, চাতলারপাড়, ডুলটিরপাড়সহ বিভিন্ন এলাকার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। রাত বাড়ার সাথে সাথে বাড়ছে নদীর পানি। তাই পানিবন্দি মানুষের বাড়ছে আতংক।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ঘূর্ণঝড় রিমালের প্রভাবে ভারতের চেরাপুঞ্জিতেও প্রবল বৃষ্টি হয়েছে। আর উজানের ঢলে সিলেটের সব নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। ফলে সিলেটের সীমান্তবর্তী চার উপজেলা জৈন্তাপুর, কানাইঘাট, গোয়াইনঘাট ও কোম্পানীগঞ্জের নিম্নাঞ্চল ও রাস্তাঘাট প্লাবিত হয়ে গেছে। এতে করে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন হাজারো মানুষ। পাহাড়ি ঢলে খরস্রোতের কারণে অনেকে বাড়িঘরে আটকে পড়েছেন।

বাংলাদেশ সময়: ১০০৪ ঘণ্টা, মে ৩০, ২০২৪
এনইউ/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।