ঢাকা, বুধবার, ২৪ আশ্বিন ১৪৩১, ০৯ অক্টোবর ২০২৪, ০৫ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

বাজেটে হিজড়া জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে বিশেষ বরাদ্দের দাবি

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৪২ ঘণ্টা, মে ৩০, ২০২৪
বাজেটে হিজড়া জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে বিশেষ বরাদ্দের দাবি

রাজশাহী: আবহমান কাল থেকে হিজড়া জনগোষ্ঠী সমাজে নানাভাবে বৈষম্যমূলক আচরণের শিকার। এ জনগোষ্ঠীর সদস্যদের পারিবারিক, আর্থসামাজিক, শিক্ষা ব্যবস্থা, বাসস্থান, স্বাস্থ্যগত উন্নয়ন, সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ এবং তাদের সমাজের মূল স্রোতধারায় ফিরিয়ে আনতে তাই আসন্ন বাজেটে তাদের জন্য বিশেষ বরাদ্দের দাবি জানানো হয়েছে।

দেশের হিজড়া জনগোষ্ঠীর পক্ষে এ দাবিতে বৃহস্পতিবার (৩০ মে) দুপুরে রাজশাহী মহানগরীর একটি রেস্তোরাঁয় সংবাদ সম্মেলন করেছে ‘দিনের আলো হিজড়া সংঘ’ নামে একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদে বাজেট অধিবেশন শুরু হতে যাছে আগামী ৫ জুন। আসন্ন এ বাজেটে হিজড়া ও লিঙ্গ বৈচিত্র্যময় মানুষদের বিশেষ বরাদ্দের দাবি জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন- দিনের আলো হিজড়া সংঘের সভাপতি জয়িতা মোহনা মুহিন, রাজশাহী সিটি করপোরেশনের ১৯, ২০ ও ২১ নম্বর ওয়ার্ডে সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর ও দিনের আলো হিজড়া সংঘের সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ সাগরিকা, সংঘের সহ-সাধারণ সম্পাদক জয়িতা মিস পলি, কোষাধ্যক্ষ মিস জুলি, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন প্রকল্পের প্রোগ্রাম সমন্বয়কারী মৌসুমী খাতুন, প্রোগ্রাম অফিসার রায়হানুল হক।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন মিস পলি। তিনি জানান, জনগোষ্ঠী হিসেবে হিজড়া দেশের মোট জনগোষ্ঠীর খুব ছোট অংশ। তবে তারা এখনও নানাভাবে পিছিয়ে ও অবহেলিত। সমাজে প্রতিনিয়ত তাদের নির্যাতনের শিকার হতে হয়। তারা পারিবারিক বন্ধন, আর্থসামাজিক, কর্মসংস্থান, শিক্ষা ব্যবস্থা, বাসস্থান, চিকিৎসাগত অধিকার থেকে বঞ্চিত। এ জনগোষ্ঠী অল্প হলেও সমাজে তাদের ভূমিকা অনেক। এ জনগোষ্ঠীকে ছাড়া টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়। সরকার সমাজসেবা অধিদপ্তরের মাধ্যমে জীবনমান উন্নয়ন প্রশিক্ষণ, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় কম। এমনকি বাংলাদেশে হিজড়াদের নিয়ে ভালোভাবে জরিপই হয়নি। তাদের মতে এ হিজড়া জনগোষ্ঠী এক লাখেরও বেশি। কিন্তু সমাজসেবা অধিদপ্তরের হিসাবে মাত্র ১০-১২ হাজার।

পলি জানান, সরকার হিজড়াদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিয়েছে ২০১৪ সালে। কিন্তু স্বীকৃতি পাওয়ার পরও নানা মৌলিক অধিকার থেকে তারা বঞ্চিত। শিক্ষা থেকে তো বঞ্চিতই, আবার শিক্ষার পর চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে রয়েছে জটিলতা। চিকিৎসা পেতেও জটিলতা রয়েছে। তারা অধিকার ও মানবাধিকার থেকে বঞ্চিত। তবে এত অবহেলার মধ্যেও অনেকেই নিজ উদ্যোগে উদ্যোক্তা হয়ে উঠছেন। কিন্তু সেখানেও তারা ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে পারছেন না। এজন্য আসন্ন বাজেটে তাদের জন্য বিশেষ বরাদ্দ প্রয়োজন। এতে করে এ জনগোষ্ঠী অগ্রসর হয়ে দেশের জন্য ভূমিকা রাখবে।

সংবাদ সম্মেলনে বরাদ্দের খাতগুলো উল্লেখ করা হয়। হিজড়াদের দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ পরবর্তী আত্মকর্মসংস্থানের জন্য ব্যাংক ঋণ প্রাপ্তিতে সহযোগিতা দেওয়া। আত্মকর্মসংস্থানের জন্য বিনা সুদে ন্যূনতম ৫০ হাজার টাকা আর্থিক অনুদান দেওয়া। আবাসনের জন্য বাজেটে বরাদ্দ রাখা। হিজড়াদের দ্বারা পরিচালিত এনজিও, সংস্থার জন্য জমি বরাদ্দ এবং অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য বাজেট বরাদ্দ। চাকরি যোগ্যতা শিথিল করে কোটা যুক্ত করা। চিকিৎসার ক্ষেত্রে বিশেষ বরাদ্দ দেওয়া শিক্ষায় বৃত্তি ও ভাতা বাড়ানো। হিজড়া জনগোষ্ঠীর আয়বৃদ্ধিমূলক কর্মকাণ্ডের জন্য বাজেট বরাদ্দ করা, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষায় এবং বৃত্তিমূলক শিক্ষা ব্যবস্থায় এ জনগোষ্ঠীকে অগ্রাধিকার দিয়ে অন্তর্ভুক্ত করা।

সংবাদ সম্মেলন থেকে জানানো হয়েছে, এটি সারা দেশের হিজড়া ও লিঙ্গ বৈচিত্র্যময় মানুষদের জন্য তাদের দাবি। ইতোমধ্যে তারা রাজশাহীতে দুজন সংসদ সদস্যকে তাদের দাবির বিষয়গুলো জানিয়েছেন। ধীরে ধীরে আরও জানানো হবে। যেন তারা সংসদে গিয়ে অন্তত এ জনগোষ্ঠীর কথা বলেন।

রাজশাহী সিটি করপোরেশনের ১৯, ২০ ও ২১ নম্বর ওয়ার্ডে সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর হিজড়া সুলতানা আহমেদ (সাগরিকা) বলেন, হিজড়ারা মাত্র ৬০০ টাকা ভাতা পান। এ টাকা দিয়ে কী কেনা যায়? অথচ অনেক খাতে অনেক টাকা ভাতা দেওয়া হচ্ছে। কোথাও কোথাও তা ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত। হিজড়াদের ভাতা বাড়ানোর দাবি করেন তিনি। এছাড়া তিনি জনপ্রতিনিধি হিসেবে আসন্ন রাজশাহী সিটি করপোরেশনের বাজেটে তাদের জনগোষ্ঠীর জন্য বিশেষ বরাদ্দ চাইবেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৪১ ঘণ্টা, মে ৩০, ২০২৪
এসএস/আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।