ফরিদপুর: ফরিদপুর সদর উপজেলার ঈশান গোপালপুর ইউনিয়নের দুর্গাপুর গ্রামে অপহৃত হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠা সেই কিশোরী (১৬) সেফ হোম থেকে মুক্ত হয়েছে।
এর আগে কিশোরীর পরিবার তাকে (কিশোরীকে) খ্রিস্টান ধর্মে দীক্ষিত করার লক্ষ্যে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ তুলেছিলেন সংবাদকর্মীদের কাছে, যা তোলপাড় সৃষ্টি করেছিল এলাকায়।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, গত ০৪ এপ্রিল ওই কিশোরীকে তার বাড়ির সামনে থেকে মাইক্রোবাসে করে অপহরণ করে নিয়ে যাওয়া হয়। এ ঘটনায় ছয়জনকে আসামি করে ২৫ এপ্রিল নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আদালতে কিশোরীর মা রওশনারা বেগম বাদী হয়ে মামলা দয়ের করেন।
কিশোরীকে অপহরণ ও এ কাজে সহায়তা করার অভিযোগে তার (কিশোরীর) গৃহ শিক্ষক শরিফুল ইসলাম বাবু, মামি আম্বিয়া বেগম, স্কুল পড়ুয়া মামাতো ভাই সিয়াম ব্যাপারীসহ সহযোগী বিল্লাল, রুবেল এবং আলম মিয়াকে আসামি করা হয়। আদালতের নির্দেশে ২ মে মামলাটি কোতোয়ালি থানায় নথিভুক্ত করা হয়।
মামলার অভিযোগে শরিফুল ইসলাম বাবুকে প্রধান আসামি করা হয় এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাতায়াতের সময় গৃহ শিক্ষক শরিফুল ইসলাম বাবু তাকে কু-প্রস্তার দিতেন বলেও উল্লেখ করা হয়।
মামলা দায়েরের পর ১৮ মে ওই কিশোরী মামির সঙ্গে কোতোয়ালি থানায় হাজির হলে তাকে সেফ হোমে পাঠানো হয়। জবানবন্দিতে কিশোরী উল্লেখ করে তার মামির সঙ্গে ভালো সম্পর্ক থাকায় মা বকা দিতেন। এই বকার কারণেই স্বেচ্ছায় সে মামির কাছে চলে গিয়েছিল বলে উল্লেখ করে।
মামলার আইনজীবী গোলাম মনসুর নান্নু জানান, ১৮ মে আদালতে উপস্থাপনের পর বাবা মায়ের জিম্মায় দিতে চাইলে ওই কিশোরী যেতে অস্বীকৃতি জানায়। এসময় তার মা রওশনারা বেগম তাকে (কিশোরী) জোরপূর্বক বয়স্ক ব্যক্তির সঙ্গে বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন জানালে আদালত তাকে সেফ হোমে পাঠায়। পরে একাধিকবার আদালতের ধার্য তারিখে আদালত মায়ের জিম্মায় পাঠাতে চাইলে সে (কিশোরী) যেতে অস্বীকৃতি জানায়।
এদিকে ওই কিশোরীর পরিবারের পক্ষ থেকে গত ৩০ সেপ্টেম্বর ফরিদপুর প্রেসক্লাবে সাংবাদিক সম্মেলন করে শরিফুল ইসলাম বাবু ও তার সাথী সঙ্গীরা, তাকে (কিশোরী) ফুসলিয়ে খ্রিস্টান ধর্মে ধর্মান্তরিত করার লক্ষ্যে তুলে নিয়ে গিয়েছে দাবি করা হয়। এমনকি আরও অনেককে একইভাবে প্রলোভন দেখিয়ে খ্রিস্টান ধর্মে দীক্ষিত করার উদ্দেশ্যে নিয়ে যাওয়া হয়েছে উল্লেখ করে তাদের একটি ‘বিশেষ চক্র’ ট্যাগ দেওয়া হয়।
এ খবর ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয় এলাকাবাসীর মধ্যে। এমনকি জনরোষ তৈরি হলে গা ঢাকা দেন শরিফুল ইসলাম বাবু।
এরই মধ্যে গত ০৬ অক্টোবর ওই কিশোরীকে বাবার জিম্মায় সেফ হোম থেকে মুক্তি দেওয়া হয়। তার মুক্তির খবর পেয়ে স্থানীয় সংবাদকর্মীসহ উৎসুকরা প্রকৃত ঘটনা অনুসন্ধানে ওই কিশোরীর বাড়িতে গেলেও অজ্ঞাত কারণে তাকে সামনে আনা হয়নি, এমনকি কোনো ধরনের কথাও বলতে দেওয়া হয়নি। এসময় পরে বিস্তারিত জানানো হবে বলে জানান বাবা আয়ূব আলী ও মা রওশনারা বেগম। এসময় তারা বারবার বলেন, মেয়ে পেয়ে গেছি আমাদের আর কোনো অভিযোগ নেই।
এ মামলার এক নম্বর আসামি শরিফুল ইসলাম বাবু জানান, ওই কিশোরীর মা ও বাবার অপপ্রচারের কারণে তিনি নিজ এলাকায় থাকতে পারছেন না। প্রাণ সংশয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। যেকোনো সময় তার ওপর হামলা হতে পারে বলে জানান তিনি। বাবু এ ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করেন।
আর কিশোরীর মামি আম্বিয়া বেগম জানান, মামলার বাদী ও কিশোরীর মা রওশনারা বেগম খুবই দুর্ধর্র্ষ প্রকৃতির মানুষ, তিনি তার আপন ননদ। বিয়ের কিছুদিন পর থেকেই তিনি একই উপজেলার আনন্দবাজার এলাকায় শ্বশুরবাড়ির লোকজনের সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় জামাইকে নিয়ে বাবার বাড়িতে বসবাস করছেন।
তিনি দাবি করেন, তার (রওশনারা) অত্যাচারে বাড়ি-ঘর ফেলে তারা ঢাকাতে চলে যান। তিনি বলেন, ভিকটিম মেয়েটিকে ছোটো বেলা থেকেই কোলেপিঠে করে মানুষ করায় তার সঙ্গে সখ্য বেশি। আর মা রওশনারা তার মেয়েটির সঙ্গে বকাবাজি এবং অসদাচারণসহ ইচ্ছার বিপরীতে নানা ধরনের কাজ করানোর চেষ্টা করায় মেয়েটি আগে থেকেই ক্ষুব্ধ ছিল মায়ের ওপর। ওই দিনও বকা দেওয়ায় সে রাগান্বিত হয়ে আমার কাছে ঢাকায় চলে যায়। মামলা হওয়ার পর তিনি নিজেই সঙ্গে করে থানায় কিশোরীকে উপস্থাপন করেন।
তিনি আরও বলেন, নিজের স্বার্থ সিদ্ধির জন্যে রওশনারা (কিশোরীর মা) আমাদের সবাইকে খ্রিস্টান ট্যাগ দিয়েছেন। এতে আমরা সমাজের চোখে ঘৃণিত হচ্ছি এবং বর্তমানে প্রাণ সংশয়ে আছি। এ ঘটনায় তিনি সুষ্ঠু প্রতিকার দাবি করেন।
ফরিদপুরের পুলিশ সুপার আব্দুল জলিল জানান, খ্রিস্টান ধর্মে দীক্ষিত করার কোনো অভিযোগ কেউ করেনি পুলিশের কাছে। তবে অপহরণ মামলা হয়েছিল। ওই কিশোরীকে সেফ হোম থেকে বাবার জিম্মায় দেওয়া হয়েছে, তার (কিশোরীর) সঙ্গে কথা বলে ব্যতিক্রম কিছু থাকলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৯, ২০২৪
আরএ