সাভার (ঢাকা): সাভারে মাদক ব্যবসায়ী গ্রেপ্তারে সহযোগিতা করায় হত্যার পর মাটিচাপা দেওয়া সীমা আক্তারের মরদেহ উদ্ধারের চার দিনের মাথায় আরও একটি মরদেহের সন্ধান পেয়েছে ঢাকা জেলা উত্তর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত উদ্ধার অভিযান চলছে।
সোমবার (১০ জুন) দুপুর থেকে সাভারের আনন্দপুর সিটিলেন এলাকার মাদক ব্যবসায়ী স্বপনের দুই তলা বাড়ির নিচ তলায় এ উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রায় ১৪ মাস আগে একই এলাকার তোফাজ্জল হোসেন ওরফে টোনো নামে এক যুবক নিখোঁজ হন। এরপর টোনোর খোঁজে ৩০ হাজার টাকা পুরস্কার ঘোষণা করে বিভিন্ন স্থানে পোস্টার, মাইকিং করে পরিবার। কিন্তু তার সন্ধান মেলে না।
এদিকে গত ১৩ মে স্থানীয় সীমা বেগমের সহযোগিতায় সাভারের মাদক ব্যবসায়ী স্বপনের বিরুলিয়ার বাড়িতে অভিযান পরিচালনা করে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এ সময় বিরুলিয়া ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি হামিদ মিয়াসহ স্বপনের স্ত্রী পপি আক্তারকে ২০০ পিস ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার করা হয়। এ ঘটনার পর গত ২ জুন নিখোঁজ হয় সীমা। এ ঘটনায় ৬ জুন স্বপনের সহযোগী সাইফুলকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার দেওয়া তথ্যমতে স্বপনের বিরুলিয়ার বাড়ির পাশে মাটি চাপা অবস্থায় সীমা বেগমের মরদেহ উদ্ধার করে ডিবি পুলিশ।
এ ঘটনার চার দিনের মাথায় স্বপনের সাভারের সিটিলেন এলাকার বাড়ির নিচতলায় আরেকটি মরদেহ উদ্ধারে অভিযান পরিচালনা করছে ডিবি। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত মরদেহ উদ্ধারে অভিযান চলছে। ধারণা করা হচ্ছে এ মরদেহটি ১৪ মাস আগে নিখোঁজ হওয়া তোফাজ্জল হোসেন ওরফে টোনোর। তোফাজ্জল হোসেন ওরফে টোনো ও সীমা আক্তার হত্যাকাণ্ডে যোগসূত্র রয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে গোয়েন্দা পুলিশ।
১৪ মাস আগে নিখোঁজ হওয়া তোফাজ্জল হোসেন ওরফে টোনো সাভার পৌরসভার ইমান্দিপুরের সেলামত মিয়ার ছেলে। গত বছরের ২১ এপ্রিল টোনোর বাবা সেলামত মিয়া বাদী হয়ে সাভার মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। এর আগে গত বছরের ১৯ এপ্রিল বাসার পাশ থেকে নিখোঁজ হন তোফাজ্জল।
মাদক ব্যবসায়ী স্বপন সাভার পৌরসভার ইমান্দিপুরের শাহজাহানের ছেলে। তার সাভারের বিভিন্ন এলাকায় কয়েকটি বাড়ি রয়েছে। তিনি সাভারে চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত।
স্থানীয় বাসিন্দা আমির হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, আমি এ এলাকায় সবার আগে বাড়ি নির্মাণ করে বসবাস করছি। তিন বছর আগেও স্বপন আড়াই হাজার টাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করতেন। বাসা ভাড়ার টাকা না দিতে পারায় এলাকায় সালিশ করে তাকে বের করে দেওয়া হয়েছিল ওই সময়। এরপর মাদক বিক্রি করে রাতারাতি অঢেল সম্পদের মালিক বনে যান তিনি। আনন্দপুরের পাঁচ শতাংশ জমির ওপর এই দুইতলা বাড়িটি বছর খানেক আগে নির্মাণ করেন তিনি। তবে এখানে তিনি থাকতেন না। মূলত এখানে তিনি মাদক ব্যবসা পরিচালনা করতেন। এ বাড়ি ছাড়াও স্বপনের বিরুলিয়া ও মজিদপুরসহ অন্য স্থানে আর চার-পাঁচটি বাড়ি রয়েছে বলে শুনেছি। আজ আনন্দপুর এলাকায় তার বাড়িতে সকাল থেকে ডিবি পুলিশ তল্লাশি শুরু করে। শুনেছি, এ বাড়ির ভেতরে একাধিক মানুষকে হত্যা করে মরদেহ গুম করেছেন স্বপন।
ডিবি পুলিশ জানান, গত বৃহস্পতিবার (৬ জুন) বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে সাভারের বিরুলিয়া ইউনিয়নের খনিজনগর এলাকার মাদক ব্যবসায়ী স্বপনের বাড়ির পাশ থেকে নিখোঁজ সীমার মরদেহ মাটিচাপা অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। সেই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকায় সাইফুলকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে আরও একজনকে হত্যার পর মাটিচাপা দেওয়ার কথা স্বীকার করেন তিনি।
ঢাকা জেলা (উত্তর) গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ বিপ্লব বলেন, আমরা গোপন সংবাদের ভিত্তিতে স্বপনের স্ত্রীসহ দুজনকে গ্রেপ্তার করি। সেই ক্ষোভ থেকে স্বপন ওই এলাকার সীমা বেগমকে অপহরণ করে হত্যার পর মাটিচাপা দেন। এ ঘটনায় সাইফুল ইসলাম নামে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার দেওয়া তথ্যে আরও একটি মরদেহের তথ্য পাওয়া যায়। সেই তথ্যের ভিত্তিতে স্বপনের নিজ বাড়ির মেঝে খুঁড়ে মরদেহ উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। এখনও উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। মরদেহের সন্ধান পেলে জানানো হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩১ ঘণ্টা, জুন ১০, ২০২৪
আরআইএস