ঢাকা: ঈদের আগে রাজধানীর পশুর হাটগুলোতে পর্যাপ্ত সংখ্যক গরু তুলেছেন বেপারিরা। দেশের নানা প্রান্তের বড় বড় খামার এবং গৃহস্থ বাড়িতে লালন-পালন করা গরু পশুর হাটগুলোতে আনা হয়েছে কোরবানির জন্য।
শনিবার (১৫ জুন) সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত রাজধানীর অস্থায়ী পশুর হাটগুলোর মধ্যে মেরাদিয়া বাজার পশুর হাট, শাজাহানপুর মৈত্রী সংঘ মাঠে গরু-ছাগলের হাট ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
মেরাদিয়া হাটের মসজিদ মার্কেটের পাশে গরু নিয়ে বসেছেন মানিকগঞ্জের বেপারি আবুল মিয়া। তিনি বলেন, প্রায় তিন দিন হলো এই হাটে আসা, ২৮টি গরুর মধ্যে মাত্র ৭টি গরু বিক্রি হয়েছে। গত বার এমন সময়ে আমার প্রায় সব গরুই বিক্রি হয়ে গিয়েছিল। তবে এবার ক্রেতারা আসেন, দাম শুনে চলে যান। গরুর দাম এক-দেড় লাখ টাকা চাইলে কাস্টমার সত্তর, আশি হাজার টাকা বলে চলে যায়। এত টাকা হাতে রেখে তো আমরা দাম চাই না। এ দামে বিক্রি করলে বাড়িঘর বেচা লাগবে। গরুর খাবারে যে পরিমাণ দাম বেড়েছে, আগে যেখানে গরুর খাবার ১২০০ টাকা বস্তা কিনতাম এখন সেই বস্তা ২৪০০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। প্রতিদিন একটি গরুকে কম করে হলেও ৪-৫ কেজি দানাদার খাবার দিতে হয়, কোনো কোনো গরুকে ৬-৭ কেজি দিতে হয়। এক থেকে দুই বছর যে গরুগুলো পাললাম সেই খরচই উঠছে না।
তবে ক্রেতারা বলছেন, গত বছরের চেয়ে বেপারিরা গরুর দাম বেশি চাচ্ছেন। গরুর দামের তুলনায় গরুর আকার আকৃতি পছন্দ হয় না। হাটে মাঝারি ও বড় গরুর তুলনায় ছোট গরুর দাম বেশি।
ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণের প্রায় ৮-১০টি হাট ঘুরে গরু দেখেছেন নাসিফ খান অনি। শাহজানপুর হাটে কথা হলে তিনি বলেন, ছোটবেলা থেকেই কোরবানির সময় আসলে বিভিন্ন হাটে যাওয়া হয় গরু যাচাই-বাছাই করার জন্য। এবার সবগুলো হাটেই গরু অনেক এসেছে। কিন্তু বেপারিরা দাম ছাড়ছে না। এই হাটে একটি গরু পছন্দ হয়েছে, দাম চাচ্ছে তিল লাখ। আমি এক লাখ আশি পর্যন্ত বলেছি। একই সাইজের এবং রঙের গরু এই দামে গত বার কিনেছি। প্রতিবার শেষ সময়ে গরু বিক্রি করতে না পারলে বেপারিরা দাম কমিয়ে দেয়। এখন সেই আশায় আছি। ভারতীয় গরু বাজারে এলে হয়তো দাম কিছুটা কমবে।
শাজাহানপুর হাটে একটি ছোট গরু দামা-দামি করছিলেন বাসাবোর বাসিন্দা সোলাইমান হোসেন। বিক্রেতা গরুর দাম চেয়েছেন ৯০ হাজার। এই ক্রেতা ৬৫ হাজার টাকা পর্যন্ত দাম বলে বিক্রেতাকে গরুটি দেবার জন্য অনুরোধ করেন। বিক্রেতা রাজি না হওয়ায় আক্ষেপের সুরে তিনি তার সঙ্গে আসা অন্য দুজনকে বলন, গরু না পেলে এই দামে কয়েকটা ছাগল কিনে নিয়ে যাব।
সোলাইমান হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, হাটের বেপারিরা অনেক বেশি কঠোর। এই গরু ৯০ হাজারের গরু না। কসাই রেটেও যদি এই গরু কেজি হিসেবে বিক্রি করে তাও ৫০ হাজার টাকার বেশি মাংস হবে না। কোরবানিতে তো আর এভাবে ওজন করে গরু কেনা ঠিক না। তাই ৬৫ পর্যন্ত বলেছি। এরপর আমার আর বাজেট নেই। এই দামে না পেলে বাধ্য হয়ে ছাগল কিনতে হবে।
শাহাজানপুর হাটে আমতলা মোড়ের হাসিল কাউন্টারে দায়িত্বে থাকা মো. রিয়ান বলেন, গত রাতে গরু বেচাকেনা ভালো হয়েছে। তবে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত গরু বিক্রি কিছুটা কম। তাই হাসিল ঘরে তেমন একটা চাপ নেই। সন্ধ্যার পর থেকে হয়তো বেচাবিক্রি বাড়বে।
এবার ঈদে ঢাকায় ২০টি কোরবানির পশুর হাট বসিয়েছে দুই সিটি করপোরেশন। স্থায়ী ও অস্থায়ী মিলিয়ে ১১টি হাট বসেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায়। পাশাপাশি উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকায় হাট বসেছে ৯টি।
বাংলাদেশ সময়: ১৬১৫ ঘণ্টা, জুন ১৫, ২০২৪
ইএসএস/এমজেএফ