সুনামগঞ্জ: বৃষ্টি নেই, ভারত থেকে আসা ঢলের পানি কমছে সুনামগঞ্জে। কিন্তু বন্যার রেখে যাওয়া ক্ষত নিয়ে চরম দুর্ভোগে রয়েছে জেলার বাসিন্দারা।
শুক্রবার (২১ জুন) ও শনিবার (২২ জুন) মেঘমুক্ত আকাশ ও প্রখর সূর্যালোকে সবার মনে স্বস্তি কিছুটা ফিরেছে। তবে দুভোর্গ কমেনি; বরং বেড়েছে। এখনও চলাচলের সড়কগুলো পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। স্বাভাবিক চলাফেরাও করা যাচ্ছে না। এই পরিস্থিতিতে পানিবন্দি মানুষ ও তাদের গবাদি পশুরা খাদ্য সংকটে পড়েছেন। এছাড়া এসব এলাকায় বিশুদ্ধ পানির অভাব দেখা দিয়েছে।
এদিকে, জেলা শহরের অনেক এলাকায় পানি কমেছে, আবার অনেক আবাসিক এলাকায় এখনও হাঁটু পানি থাকায় নৌকা দিয়ে চলাচল করছেন।
আর পানি সরে যাওয়া বাড়িগুলো পরিষ্কার আর মেরামত নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন অনেকেই।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার জানিয়েছেন,সুরমা নদীর পানি ষোলগড় পয়েন্ট দিয়ে ১০ সেন্টিমিটারের নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সুনামগঞ্জ ও ভারতের চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টি না হওয়ার নদ-নদীর পানি কমেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলায় বন্যায় ৮ লাখের বেশি মানুষ পানিবন্দি রয়েছেন। বন্যায় আক্রান্ত হয়ে বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেওয়া মানুষজন পানি কমতে থাকায় নিজ নিজ বাড়িতে ফিরে যাচ্ছেন। হাওর ও নদী দিয়ে পানি ধীর গতিতে ভাটির দিকে এগোচ্ছে। অন্যদিকে পানি বন্দি হাওরাঞ্চলের গ্রামগুলোতে রয়েছে বিশুদ্ধ পানি, খাবার ও এর পাশাপাশি গো-খাদ্যের চরম সংকট রয়েছে। সড়ক পানিতে ডুবে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় ঘর থেকে বের হতে পারছেন না অনেকেই।
জেলা বিশ্বম্ভরপুর,জামালগঞ্জ,তাহিরপুর, ধর্মপাশাসহ বিভিন্ন উপজেলার গ্রামের সড়ক,বসতবাড়ি,শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান,মসজিদ, মন্দির,শ্মশান ঘাট, হাট-বাজার থেকে পানি নামতে শুরু করেছে। কিন্তু জেলা শহরের সঙ্গে অনেক উপজেলার যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে।
জেলার জামালগঞ্জ উপজেলার তেলিয়া লামাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা শাহাব উদ্দিন জানান, আমাদের গ্রামের অবস্থা খুবই খারাপ। পাহাড়ি ঢলের পানি ভাটির দিকে কম গতিতে এগোচ্ছে। ঘর থেকে বের হতে পারছি না। কারণ চারদিকে পানি আর চলাচলের সড়ক পানিতে ডুবে গেছে।
জেলার ধর্মপাশা উপজেলা জয়শ্রী গ্রামের বাসিন্দা জামিল মিয়া জানান, বৃহস্পতিবার থেকে বৃষ্টি নেই,পাহাড় ঢলের পানি কমছে। পানিতে খড় (গরুর খাবার) নষ্ট হওয়ার এলাকায় গো-খাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে। গত ৭ দিন কর্মহীন হয়ে বাড়িতে অবস্থান করায় চরম দুর্ভোগে আছি।
বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার দক্ষিণ বাদাঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য কামাল হোসেন জানান,বন্যা আমাদের চরম দুর্ভোগে ফেলে দিয়েছে। সুনামগঞ্জ-বিশ্বম্ভরপুর-তাহিরপুর সড়কের কয়েকটি জায়গায় পানি থাকায় গত ৫ দিন ধরে যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। যে কারণে জেলার শহরে যেতে তাহিরপুর,মধ্যনগর,ধর্মপাশা ও বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার মানুষ নৌকায় চলাচল করছেন।
বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মফিজুর রহমান জানান,পানি অনেক কমছে। এ কারণে উপজেলায় আশ্রয়কেন্দ্রে আসা লোকজন নিজ নিজ বাড়িতে ফিরে যাচ্ছেন। বন্যায় আক্রান্তদের সহায়তা করা হচ্ছে। উপজেলার বন্যায় আক্রান্ত গ্রামগুলোর দিকে বিশেষ নজর রাখছি আমরা।
সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরী জানিয়েছেন,বন্যার পানি কমতে থাকায় জেলার বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে আসা মানুষজন নিজ নিজ বাড়িতে ফিরে যাচ্ছে। বন্যা আক্রান্তদের ত্রাণ সহায়তা অব্যাহত রয়েছে। আশা করছি বন্যা পরিস্থিতি আরও উন্নতি হবে মানুষের দুর্ভোগ কমবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬০৮ ঘণ্টা, জুন ২২, ২০২৪
এসএএইচ