মাদারীপুর: ‘বাবার কাছে সাইকেল চেয়েছিলাম, বাবা আমাকে কিনে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু এখন আর সাইকেল চাই না।
কাঁদতে কাঁদতে এ কথাগুলো বলছিলো মাদারীপুর সদর উপজেলার মোস্তফাপুর ইউনিয়নের পশ্চিম খৈয়ার ভাঙ্গা গ্রামের সৌদি আরব প্রবাসী মিলন মাতুব্বরের (৩৫) ৯ বছর বয়সী ছেলে আবির মাতুব্বর।
মিলন মাতুব্বর সৌদি আরবে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিটি গত ১৮ জুন রাতে ব্রেনস্ট্রোক করে অসুস্থ হয়ে পড়েন। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রোববার (২৩ জুন) দুপুরে তার মৃত্যু হয়। তার মৃত্যুর খবরে শোকের মাতম শুরু হয় পরিবারে। এ সময় ছেলে আবিরের আহাজারিতে বাতাস ভারী হয়ে উঠে।
ছোট্ট আবির কোরবানির ঈদের দিন সকালে বাবার সঙ্গে ফোনে কথা বলে একটি সাইকেল চেয়েছিল। বাবাও বেতন পেয়ে সাইকেল কিনে দেবে বলে জানায়। বাবার মৃত্যুর খবর শুনে আহাজারি করতে করতে ছেলে আবির বলছে, ‘আমার সাইকেল চাই না, আমার বাবাকে দেখতে চাই। বাবার লাশটা এনে দেন!’
বাবাকে একনজর দেখার আকুতি জানিয়ে শিশু আবির আরও বলে, ‘আমি বড়। আমার ছোট দুই ভাই ও মা আছে। আমি মাদরাসায় পড়ি। আমার বাবা সৌদিতে মারা গেছেন। এখন আমার মাদরাসার খরচ কে দেবে? আমাদের দেখার মতো কেউ নাই। আপনারা আমার বাবাকে একটা নজর দেখার ব্যবস্থা করে দিন!’
জানা গেছে, পরিবারের আর্থিক সচ্ছলতার জন্য পাঁচ বছর আগে সৌদি আরবে যান মাদারীপুর সদর উপজেলার মস্তফাপুর ইউনিয়নের পশ্চিম খৈয়ারভাঙ্গা গ্রামের সিরাজুল হক মাতুব্বরের ছেলে মিলন মাতুব্বর। চার ভাই ও তিন বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন মেঝ। সৌদি আরবের রিয়াদ শহরের হালুজারায় থেকে কাজ করে আসছিলেন তিনি। কিন্তু আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হতে পারেনি মিলন। সৌদির আকামাসহ নিজ খরচ শেষে কোনো রকম টানাটানি করে সংসারের খরচ চালাতেন তিনি।
গত ১৮ জুন রাতে সৌদি আরবে বাসায় ব্রেইন স্ট্রোক করে অসুস্থ হয়ে পড়েন মিলন। পরে সঙ্গে থাকা বাংলাদেশি প্রবাসীরা সৌদি আরবের রিয়াদ শহরের একটি হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করেন। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় রোববার মারা যান তিনি। পরে দুপুরে সৌদি থেকে তার পরিবারের কাছে মৃত্যুর খবর জানালে স্বজনদের মধ্যে আহাজারি শুরু হয়।
নিহত মিলনের প্রতিবেশী রুহুল আমিন ও কেরামত আলীসহ একাধিক ব্যক্তি জানান, মিলনের কয়েক লাখ টাকার দেনা রয়েছে। তবে তিনি খুব ভালো মানুষ ছিলেন। আমরা চাই সরকার যেন মিলনের লাশটি দেশে আনার ব্যবস্থা করে দেন। আমরা যেন অন্তত তাকে দাফন করতে পারি।
নিহত মিলনের স্ত্রী জানান, আমাদের দেখার মতো কেউ রইলো না। আমাদের তিন শিশু সন্তানকে এখন কে দেখবে? আমরা প্রায় ২০ লাখ টাকার দেনা। এই দেনা কীভাবে শোধ করবো। আমার স্বামীর লাশটা দেখতে চাই। কিন্তু সৌদি থেকে টাকা খরচ করে লাশ দেশে আনার সামর্থ্য আমাদের নাই। সরকারের কাছে দাবি আমার স্বামীর লাশটা যেন দেশে আনার ব্যবস্থা করে দেন।
শেষ বারের মতো সন্তানের লাশ দেখতে একইভাবে সকলের কাছে আকুতি জানান মিলনের মা ও বাবা।
এ বিষয়ে মাদারীপুর জেলা প্রশাসক মারুফুর রশিদ খান বলেন, আমাদের কাছে আবেদন করলে আমরা ঢাকায় যোগাযোগ করে লাশটি দেশে আনার চেষ্টা করবো। আবেদন করলে স্থানীয়ভাবে তাদের সহযোগিতা করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৯ ঘণ্টা, জুন ২৪, ২০২৪
এসএম