ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

ছেলেকে সৎ ও যোগ্য করে গড়ে তোলার চেষ্টা করেছি: আসিফের বাবা

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৩৪ ঘণ্টা, আগস্ট ৯, ২০২৪
ছেলেকে সৎ ও যোগ্য করে গড়ে তোলার চেষ্টা করেছি: আসিফের বাবা

কুমিল্লা: ‘আন্দোলনের প্রথম দিকে তাকে বাধা দিয়েছিলাম, যেন বের না হয়। সে আমার কথা শোনেনি।

বললাম, এত কষ্ট করে পড়াশোনা করালাম, ভালো চাকরি করো, মানুষের মতো মানুষ হও। তুমি আন্দোলনে গিয়ে আমার স্বপ্ন শেষ করো না। সে আমাকে বলেছিল দোয়া করতে। কিছু করার ছিল না। আমি প্রতি ওয়াক্ত নামাজে তার জন্য দোয়া করতাম। তার মাও দোয়া করত, কান্নাকাটি করত। আল্লাহ যেন তাকে ভালো রাখেন। এখন আল্লাহ তার শ্রম ও সততার পুরস্কার দিয়েছেন। সে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা হয়েছে। ’ 

কথাগুলো বলছিলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পাওয়া এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার বাবা মো. বিল্লাল হোসেন।

আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার আকুবপুর গ্রামের বাসিন্দা। মো. বিল্লাল হোসেন ও রোকসানা আক্তার দম্পতির দ্বিতীয় সন্তান তিনি। আসিফের বাবা আকুবপুর ইয়াকুব আলী ভূঁইয়া পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক।  

আসিফ মাহমুদের বাবা মো. বিল্লাল হোসেন বলেন, ছেলেকে সৎ ও যোগ্য করে গড়ে তোলার চেষ্টা করেছি। কখনো দুর্নীতির শিক্ষা দিইনি। আমরা আজ গাড়ি ভাড়া করে এসেছি। আমি চাই আমার ছেলেও যখন উপদেষ্টা থাকবে না তখন যেন গর্ব করে বলতে পারে আমি দুর্নীতি করিনি। আজ যেমন পাঞ্জাবি, টি-শার্ট পরে বঙ্গভবনে গেছে, সে যেন এমনই সাধারণ থাকে। আমার ছেলের প্রতি আমার বিশ্বাস আছে। তাকে বাংলার ইতিহাস মনে রাখবে এটা আমার বিশ্বাস আছে। আর আমিও যেন গর্ব করে বলতে পারি, আসিফ আমার ছেলে, তার কোনো দুর্নীতি নেই।  

তিনি আরও বলেন, ছোটবেলা থেকে আসিফ মিশুক ও অধিকার সচেতন। তার নেতৃত্ব দেয়ার আলাদা গুণ লক্ষ্য করেছি। সে যেখানেই গেছে নেতৃত্ব দিয়েছে। সে কখনো কোনো দলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল না। আমার কড়া নির্দেশনা ছিল যেন রাজনীতিতে না জড়িত হয়। কারণ, আমার দাদা ছিলের এলাকার বিত্তশালী। ১০০ কানি ( কুমিল্লার উত্তরাঞ্চলে প্রতি কানি ৪০ শতক ধরা হয়) সম্পত্তির মালিক ছিলেন তিনি। এরপর আমার বাবাসহ তার ভাইয়েরা ৮৫ কানি সম্পত্তি পায়। আমার এখন ৩০ কানি সম্পত্তি আর ঢাকার মাতুয়াইলে ফ্ল্যাট আছে। আমাদের টাকা-পয়সার দরকার নেই। তাই বলেছি রাজনীতি আমাদের দরকার নেই।  

জানা গেছে, আসিফের বড় বোন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক সম্পন্ন করে স্বামীসহ জাপানে আছেন। তৃতীয় বোন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী। আর ছোট বোন রাজধানীর হলিক্রস কলেজে পড়াশোনা করছেন।  

আসিফ ২০১৩ সালে কুমিল্লার আকুবপুর ইয়াকুব আলী ভূঁইয়া পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ৮ম শ্রেণি পাস করেন। পরে ঢাকার তেজগাঁওয়ের নাখালপাড়া এলাকার হোসেন আলী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক পাস করেন। এরপর চলে যান ঢাকার আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজে। সেখানে উচ্চ মাধ্যমিকের গণ্ডি পার করেন তিনি। সব ক্লাসেই ভালো ফল পাওয়া আসিফ প্রথমবারেই চান্স পান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাবিজ্ঞান বিভাগে।  

এদিকে উপদেষ্টা পরিষদে আসিফের পদ পাওয়ার খবরে উপজেলাজুড়ে আনন্দের জোয়ার বইছে। মসজিদে মসজিদে তার জন্য দোয়া করা হয়েছে। মিষ্টি বিতরণ করছেন স্থানীয় জনতা। অনেকে আসছেন তার বাড়ি দেখতে।  

বাংলাদেশ সময়: ১৫২৮ ঘণ্টা, আগস্ট ০৯, ২০২৪
এসএএইচ 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।