বরগুনা: বরগুনা জেলায় গত তিন দিনে শতাধিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে লুটপাট, ভাঙচুর ও দখলের ঘটনা ঘটে। পরে জেলা প্রশাসন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারাসহ সুশীল সমাজের প্রতিনিধির সমন্বয়ে পরিবেশ কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ায় জনমনে স্বস্তি ফিরে এসেছে।
শেখ হাসিনার পতনের পরপরই আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে মাঠে নামে বিক্ষুব্ধ ছাত্রজনতা। পরে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর বাসভবনে হামলা চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়।
হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে তার ল’ চেম্বার, সহ-সভাপতি হুমায়ূন কবিরের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর কবীরের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, জেলা আওয়ামী লীগ নেতা মশিউর রহমান শিহাবের বাসভবন, মজিবুল হক কিসলুর ল' চেম্বার, জেলা আওয়ামী লীগের অফিস, আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট মাহবুবুল বারী আসলামের ল’ চেম্বার, বঙ্গবন্ধু নৌকা জাদুঘর, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরসহ বেশ কিছু স্থাপনায় হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে।
ফলে বরগুনা শহর জুড়ে তৈরি হয় অরাজকতা। এদিকে আমতলীতে উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও পৌর মেয়র মতিয়ার রহমানের বাসভবন, হলদিয়া ইউনিয়ন পরিষদ সাবেক চেয়ারম্যান শহীদুল ইসলাম মৃধার বাসভবনে আগুন, বরগুনা মহিলা এমপি ফারজানা সুমির কার্যালয়, আওয়ামী লীগ কার্যালয়, বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল, চাওড়া ইউপি চেয়ারম্যান মো. আখতারুজ্জামান বাদল খানের কার্যালয়, গুলিশাখালী ইউপি চেয়ারম্যান অ্যাড. এইচএম মনিরুল ইসলামের কার্যালয়, যুবলীগ অফিস, ও পৌরসভা কার্যালয় ভাঙচুর করে।
বরগুনা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শামীম মিঞা জানান, সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে গণউপদ্রব সৃষ্টি ও পুনরায় গণউপদ্রব অব্যাহত রাখায় একজনকে তিন মাসের কারাদণ্ড প্রদান করা হয়েছে। তিনি কোথাও কোনো দুর্বৃত্তায়নের ঘটনা ঘটলে বা সংবাদ থাকলে তার মোবাইল নম্বরে কল/মেসেজ/হোয়াটসঅ্যাপ করার জন্য অনুরোধ জানান।
তিনি আরও বলেন, পাড়ায় পাড়ায় ছাত্রজনতার পাহারা ও প্রশাসনের টহল অব্যাহত আছে। জনস্বার্থে প্রশাসনের অভিযান অব্যাহত থাকবে।
এদিকে বরগুনা সদরের ভাড়ানি খালের দুই পাশে, মাছ বাজারের পাশে, লাকুরতলা ব্রিজের উভয় পাশে এবং ডায়াবেটিস হাসপাতালের পাশে রাতের আঁধারে হঠাৎ গড়ে তোলা সব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে পরিষ্কার করা হয়েছে।
সকল প্রকার অরাজকতা, লুটপাট, ভাঙচুর ও দখল বন্ধে কঠোর পদক্ষেপের অংশ হিসেবে আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ আশরাফুল আলম মাইকিং করিয়েছেন। যারা এ সব অপরাধের সঙ্গে জড়িত হবেন তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কেন্দ্রীয় নেতা ও বরগুনা জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি মো. নজরুল ইসলাম মোল্লা বলেন, কোনো প্রকার অরাজকতা, হামলা, লুটপাট, ভাঙচুর ও দখলের ঘটনার সঙ্গে বিএনপি বা বিএনপির অঙ্গ সংগঠনগুলোর কোনো নেতাকর্মী সম্পৃক্ত নয়। আমাদের দলের মধ্য থেকে কেউ অপকর্মের সঙ্গে জড়িত থাকার প্রমাণ পেলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বরগুনার জেলা প্রশাসক মোহা. রফিকুল ইসলাম বলেন, সকল প্রকার অরাজকতা, লুটপাট, ভাঙচুর ও দখল বন্ধে কঠোর পদক্ষেপের অংশ হিসেবে বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছি। উপজেলা পর্যায়ে যাতে কোনো ধরনের অরাজকতার বিস্তার না ঘটে সেজন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দিয়েছি।
বাংলাদেশ সময়: ১৬০০ ঘণ্টা, আগস্ট ৯, ২০২৪
এসএম