ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

মাসুমের উপার্জনেই চলতো সংসার, তাকে হারিয়ে দিশেহারা পরিবার

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৪৩ ঘণ্টা, আগস্ট ৯, ২০২৪
মাসুমের উপার্জনেই চলতো সংসার, তাকে হারিয়ে দিশেহারা পরিবার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুলিতে নিহত মাসুম বিল্লাহ

নেত্রকোনা: গাজীপুরের মাওনা এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নিয়ে পুলিশের গুলিতে নিহত হন পড়েন নেত্রকোনার যুবক রাজমিস্ত্রী মাসুম বিল্লাহ (২৪)।

পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী ছেলেকে হারিয়ে দিশেহারা মাসুমের বাবা-মা।

ছেলে হারানোর দুঃখে মুখ ফুটে কথাই বলতে পারছিলেন না মাসুমের বাবা সাইদুর রহমান। বুকভরা কষ্ট নিয়ে শুধু বললেন,‘আমার অবলম্বন আর কিছুই রইলো না। ’

কান্নাজড়িত কণ্ঠে নিহত মাসুম বিল্লাহর মা মুর্শিদা আক্তার বলেন,‘আমার ছেলেরে মাইরালছে। আমি কেমনে বাঁচবাম,আমাদের মাথার ওপর থেকে যেন বটগাছটাই সরে গেল। এখন আর আমাদের দেখার মতো কেউ রইল না। ’

সরেজমিনে নিহতের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়,ছেলের মৃত্যুতে পাগলের মতো প্রলাপ করে কাঁদছেন মা। তার পাশে বসা স্ত্রী তবে স্বামী হারিয়ে শোকে যেন পাথর তিনি। বার বার কান্না আহাজারি করছেন বোনেরা। বাবা বার বার ছেলের কবরের আশপাশে ঘুরপাক খাচ্ছেন। এই সময় উপস্থিত স্বজনদের কান্নায় পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে।

নিহত মাসুম বিল্লাহর বাড়ি নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলার ২নং দুর্গাপুর ইউনিয়নের নলুয়াপাড়া গ্রামে। সেখানে বাবা-মা,দুই বোন ও স্ত্রী নিয়েই বসবাস ছিল তার। তবে মাসুম বিল্লাহ জীবিকার তাগিদে রাজমিস্ত্রীর কাজ করতেন মাওনা নয়নপুরে। বাবা সাইদুর রহমান দরিদ্র কৃষক। পাঁচ বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে মাসুম বিল্লাহ দ্বিতীয়।  

রাজমিস্ত্রী মাসুমের উপার্জনের টাকাতেই চলতো সংসার। বাবা-মা,বোন ও স্ত্রী নিয়েই ছিল ছোট্ট সংসার। আয় অল্প হলেও এতেই খুশি ছিল পরিবারের সবাই। সব মিলিয়ে ছোট্ট সংসারটি চলছিল অনেকটাই হাসি–খুশিতেই। কিন্তু দুটি গুলিতে এ পরিবারের সবকিছু এলোমেলো হয়ে যায়।

গত ০৫ আগস্ট সোমবার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অংশ নেন মাসুম বিল্লাহ। পথে গাজীপুরের মাওনা এলাকায় গুলিবিদ্ধ হলে এরপরই সেখানকার লোকজন থাকে ভালুকা হাসপাতালে নিয়ে যায়। হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। মৃত্যুর খবর পেয়ে স্বজনরা গিয়ে মরদেহ নিয়ে ওইদিন রাতেই গ্রামের বাড়ি ফেরে। পরদিন ০৬ আগস্ট মঙ্গলবার সকাল ১০টায় জানাজা শেষে স্থানীয় কবরস্থানে দাফন করা হয় তাকে।

পরিবার সূত্রে জানা গেছে, দরিদ্র পরিবার হওয়ায় মাদ্রাসায় ভর্তি হলেও পড়াশোনা করা হয়নি মাসুম বিল্লাহর। নিজেদের কৃষি জমি নেই তাই বাবা অন্যের জমিতে ধান চাষ করতেন। তাই সংসারের হাল ধরতে অল্প বয়সেই কাজে লেগে যান মাসুম। তার উপার্জনের টাকায় সংসার চালানোসহ তিন বোনকে বিয়ে দিয়ে ভালোই চলছিল তাদের সংসার। দুই বছর আগে নিজেও বিয়ে করেছেন। পরিবার নিয়ে স্বপ্ন ছিল অনেককিছু কিন্তু গুলিতে সবকিছুই শেষ। তাকে হারিয়ে পরিবারেরও সবকিছু এলোমেলো হয়ে যায়।  

নিহত মাসুম বিল্লাহ খালা সাবিনা আক্তার (মুর্শিদা আক্তারের ছোট বোন) জানান, মাসুম ছিল সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। তার অকালে চলে যাওয়ায় যেন পুরো পরিবারে কষ্ট নেমে এসেছে। পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর মতো কেউ আর নাই। পাঁচটা বোনের একমাত্র আদরের ভাই ছিল।  

তিনি আরও জানান,ঘটনার দিন অর্থাৎ গত সোমবার তিনটার দিকে মাসুম বিল্লাহর ফোন থেকে কল আসে এক ব্যক্তির। তিনি জানায় মাসুমের গুলিতে লেগেছে ভালুকা সরকারি হাসপাতালে আছে। তাড়াতাড়ি সেখানে যাওয়ার জন্য। এরপরই নিজস্ব লোকজন সেখান থেকে লাশ নিয়ে রাতে বাড়ি ফিরে।

প্রতিবেশীরা জানান, যে মানুষটির বাড়ি ফেরার অপেক্ষায় থাকতো পুরো পরিবার। ফেরার পথে তাদের জন্য পছন্দের জিনিস নিয়ে বাড়ি ফিরবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিতেন সেই মানুষটি পাড়ি জমিয়েছেন না ফেরার দেশে। এমন মৃত্যু কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না অন্যদিকে সংসার চালানোর এক মাত্র ব্যক্তি হারিয়ে দিশেহারা পরিবার।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৯ ঘণ্টা, আগস্ট ০৯, ২০২৪
এসএএইচ 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।