ঢাকা, রবিবার, ২৬ শ্রাবণ ১৪৩১, ১১ আগস্ট ২০২৪, ০৫ সফর ১৪৪৬

জাতীয়

গুজব ছড়িয়ে সীমান্তে জড়ো করা হয় হাজারো মানুষকে

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১২৮ ঘণ্টা, আগস্ট ১০, ২০২৪
গুজব ছড়িয়ে সীমান্তে জড়ো করা হয় হাজারো মানুষকে

লালমনিরহাট: সীমান্তের গেট খুলে দিয়েছে এমন গুজবে হাজার হাজার মানুষ দিনভর লালমনিরহাটের গোতামারী সীমান্তের শূন্যরেখায় জড়ো হন। তারা সবাই সনাতনী সম্প্রদায়ের।

শুক্রবার (৯ আগস্ট) দিনভর লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার গোতামারী সীমান্তের ৯০৯ নং পিলার এলাকায় জমায়েত হন তারা।

এদিন সকালে গোতামারী সীমান্তের ৯০৯ নং পিলার এলাকায় সনাতনী সম্প্রদায়ের জন্য ভারতীয় সীমান্ত খুলে দেওয়া হয়েছে - এমন গুজবে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত হিন্দু সম্প্রদায়ের হাজার হাজার লোক ওই সীমান্তের শূন্যরেখায় জমায়েত হন। তবে সীমান্তে প্রবেশ ঠেকাতে কঠোর অবস্থানে রয়েছে রতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) সদস্যরা। সীমান্ত পেরিয়ে কেউ ভারতে পাড়ি জমাতে পারেননি বলে জানা গেছে।

যদিও শূন্যরেখায় জড়ো হওয়া এসব মানুষের অনেকেই বলেছেন, তারা ভারতে যাওয়ার উদ্দেশ্যে সীমান্তে জড়ো হননি। সেটা হলে সঙ্গে পরিবার-পরিজন ও সাথে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে আসতেন। তারা কেবল 

সরেজমিনে গিয়েও দেখা গেছে, সীমান্তে ভিড় জমা মানুষরা কোনো ধরনের ব্যাগ বা আসবাবপত্র কিংবা পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে নেননি।

তবে কেন তারা সেখানে সমবেত হয়েছেন প্রশ্নে স্থানীয় সনাতনী সম্প্রদায়ের একটি দায়িত্বশীল সূত্র দাবি করেছে, বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা ও ভারতীয় নেতাদের বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। সেখানে বাংলাদেশের চলমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে সংখ্যালঘুদের বিষয়ে আলোচনা হওয়ার কথা ছিল। তাদের সেই সমাবেশ না হলেও ভারতীয় বিভিন্ন গণমাধ্যমে বিষয়টি দেশ ছাড়তে সংখ্যালঘুরা সীমান্তে ভিড় করছেন বলে প্রচার করছে।

ভারতীয় গণমাধ্যমের এমন খবরকে গুজব বলে দাবি করেছেন ওই সীমান্তের সনাতনী ধর্মাবলম্বী পরিবারগুলো।  

উল্লেখ্য, শেখ হাসিনার পতন ও তার দেশ ছেড়ে পালানোর পরই সারা দেশের মতো লালমনিরহাটেও আওয়ামী লীগ অফিস ও দলীয় নেতাকর্মীদের বাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এতে বাদ পড়েনি সনাতনী সম্প্রদায়ের আওয়ামী লীগ নেতাদের বাড়িও। তবে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী নন এমন সনাতনী পরিবারের ওপর হামলার খবর পাওয়া যায়নি। যারা হামলার শিকার হয়েছেন তারা রাজনৈতিকভাবে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জড়িত।

এদিকে বাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলার ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে সাধারণ সনাতনী সম্প্রদায়ের লোকজনের মাঝে। আতঙ্ক বা গুজবে কান না দিতে বিএনপি জামায়াত এবং বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেতাকর্মীরা পাড়ায় মহল্লায় পথসভাসহ পাহারা দিচ্ছেন।

সীমান্তে জড়ো হওয়া ও হামলা-ভাঙচুরের বিষয়ে ওই সীমান্তের বাসিন্দা বিউটি রানী বলেন, আমাদের গ্রামের কোনো ধরনের হামলা হয়নি। শুনেছি কোথাও কোথাও হয়েছে। তবে যাদের ওপর হামলা হয়েছে তারা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ছিলেন। সংখ্যালঘু হিসেবে নয়। আওয়ামী লীগ করায় তাদের ওপর হামলা হয়েছে। অনেক মুসলমান আওয়ামী লীগ নেতার বাড়িতেও হামলা করেছে দুর্বৃত্তরা।

নীলফামারীর ডিমলার বাসিন্দা সবিতা রানী বলেন, শুনেছি এ বর্ডার খুলে দেওয়া হয়েছে তাই এসেছি। যদি সুযোগ পাই তবে চলে যাব। আমার বাড়িতে হামলা না হলে প্রতিবেশী আওয়ামী লীগ নেতার বাড়িতে আগুন দেওয়া হয়েছে। এ ভয়ে আমরা আতঙ্কিত।

যোগেশ চন্দ্র নামে একজন বলেন, শুনেছি বর্ডার খুলে দিয়েছে, তাই দেখতে এসেছি। এখানে বেশিরভাগ মানুষ দেখতে এসেছে। ভারত গেলে তো ন্যূনতম এক ব্যাগ বা বস্তা সাথে থাকত কিংবা পরিবারের অন্যরাও থাকত।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নেতারা বলেন, আমরা ভারতে পাড়ি জমাতে চাই না। নিজের পৈত্রিক ভিটা কেন ছাড়ব? আমরা এসেছি, যাতে সবাই মিলে দুর্বৃত্তদের প্রতিহত করা যায়। এজন্য সব শ্রেণিপেশার মানুষের সহায়তা চাই। বিএনপি-জামায়াতের নেতারা আমাদের নিরাপত্তা দেবেন বলে আশ্বস্ত করেছেন। তাই আমরা ফিরে যাচ্ছি।

বিএসএফের বরাত দিয়ে এসব নেতারা আরও বলেন, বিএসএফ বলেছে ভারতে আসতে হলে সপরিবারে এবং আসবাবপত্র নিয়ে আসতে হবে। সেক্ষেত্রে সীমান্তের শূন্যরেখায় ন্যূনতম ৭২ ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হবে।

খবর পেয়ে ওই সীমান্তে চলে আসেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার হাসান রাজীব প্রধান।  

তিনি সাংবাদিকদের বলেন, এটি মূলত একটি গুজব। ভারতকে ক্ষেপিয়ে পাশে পেতে আওয়ামী লীগ এমনটা করছে। সীমান্তের শূন্যরেখায় যারা অবস্থান করছেন তারা কেউ একটি ব্যাগও সাথে নেননি। আমরা তাদেরকে শান্ত থাকতে বলেছি, নিরাপত্তার আশ্বাস দিলে তারা সীমান্ত থেকে ফিরে এসেছেন।

বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) লালমনিরহাট ১৫ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেনেন্ট কর্নেল মোফাজ্জল হোসেন আকন্দ বলেন, দিনভর আমি নিজেও এ সীমান্তে রয়েছি। যারা এসেছেন তাদের কোনো নেতা নেই, তারা কেন এসেছেন শূন্যরেখায় সেটাও তারা জানেন না। আমি স্থানীয় নেতাদের সাথে কথা বলেছি। তারাও কিছু জানেন না বলে দাবি করেছেন। এরা সীমান্ত পাড়ি দিলে নিরাপত্তার জন্য যা থাকা দরকার সেটুকুও নেই তাদের সাথে। সীমান্তে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। কেউ পাড়ি দিতে পারেনি বা পারবেও না। সংখ্যালঘু নেতাদের সঙ্গে এ বিষয়ে বৈঠক হবে।  

বাংলাদেশ সময়: ২১২৩ ঘণ্টা, আগস্ট ১০, ২০২৪
এসএএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।