লক্ষ্মীপুর: বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে লক্ষ্মীপুরে শিক্ষার্থী আফনান পাটওয়ারী ও সাব্বির আহমেদকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় পৃথক দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। দুটি মামলাতেই সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও যুবলীগের সাবেক সভাপতি একেএম সালাহ উদ্দিন টিপুকে প্রধান আসামি করা হয়।
বৃহস্পতিবার (১৫ আগস্ট) দুপুরে সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইয়াছিন ফারুক মজুমদার বাংলানিউজকে মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, আফনান ও সাব্বির হত্যা মামলায় পৃথক দুটি মামলা হয়েছে।
থানা সূত্র জানায়, আফনান হত্যার ঘটনায় ১৪ আগস্ট রাতে তার মা নাছিমা আক্তার বাদী হয়ে ৭৫ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতনামা ৫০০-৭০০ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেছেন। একদিন রাতে সাব্বির হত্যা মামলায় তার বাবা আমির হোসেন বাদী হয়ে ৯১ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতনামা ২০০ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেছেন। দুটি মামলাতেই চেয়ারম্যান টিপুকে প্রধান আসামি করা হয়েছে।
ঘটনা সূত্রে জানা গেছে, গত ৪ আগস্ট মাদাম ব্রিজ ও ঝুমুর এলাকায় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান একেএম সালাহ উদ্দিন টিপুর নেতৃত্বে সশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা করে। সেখানে অভিযুক্তদের গুলিতে গুলিবিদ্ধ হয়ে আফনান পাটওয়ারী নামে এক ছাত্র মারা যায়। এরপর আন্দোলনকারীরা বাজারের তমিজ মার্কেট এলাকায় এলে সাবেক পৌর মেয়র প্রয়াত আবু তাহেরের বাসার ছাদ থেকে চেয়ারম্যান টিপুর নেতৃত্বে প্রায় আড়াই ঘণ্টা গুলি বর্ষণ করা হয়। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে কাউছার আহমেদ বিজয়, ওসমান গণি ও সাব্বির আহমেদ নামে আরও তিনজন মারা যায়। এ সময় গুলিতে শতাধিক ছাত্র-জনতা গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়।
এক পর্যায়ে আন্দোলনকারীরা মেয়র তাহের ও টিপুর বাসভবন আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়। টিপুসহ তার সঙ্গে থাকা কয়েকজন পালিয়ে যায়। আন্দোলনকারীদের গণপিটুনিতে তমিজ মার্কেট এলাকায় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের আটজন মারা যায়। একইদিন গভীর রাতে আইন-শৃঙ্খলাবাহিনী মেয়র তাহেরের বাসা থেকে ২৫ জনকে উদ্ধার করে।
ঘটনার পর থেকে অভিযুক্ত একেএম সালাহ উদ্দিন টিপু পলাতক রয়েছেন। টিপু লক্ষ্মীপুর পৌরসভার আলোচিত সাবেক মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক প্রয়াত আবু তাহেরের মেজো ছেলে।
দুটি হত্যা মামলায় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, শ্রমিকলীগসহ বিভিন্ন ইউনিটের নেতাকর্মীদের আসামি করা হয়।
এদের মধ্যে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান টিপু ছাড়াও তার ভাই আফতাব উদ্দিন বিপ্লব, ভাইস চেয়ারম্যান ও শ্রমিকলীগের আহ্বায়ক ইউসুফ পাটওয়ারী, পৌর মেয়র মোজাম্মেল হায়দার মাসুম ভূঁইয়া, সদর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি হুমায়ুন কবির পাটওয়ারী, সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হাসান পলাশ, পৌর আওয়ামী লীগ সভাপতি সৈয়দ আহমদ পাটওয়ারী, সাবেক যুবলীগ নেতা বায়েজিদ ভূঁইয়া, কৃষকলীগ নেতা বেলাল হোসেন কারী, স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা মাহবুব ইমতিয়াজ, তানভীর হায়দার রিংকু, রায়পুর পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি কাজী জামশেদ কবির বাক্কি বিল্লাহ, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুল ইসলাম রকি, সাধারণ সম্পাদক শাহাদাত হোসেন ভূঁইয়া, সহ-সভাপতি শেবাব নেওয়াজ, চন্দ্রগঞ্জ থানা ছাত্রলীগের সভাপতি আবু তালেব, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা জাকির হোসেন ভূঁইয়া আজাদ, মাহমুদুন নবী সোহেল, রাকিব হোসেন লোটাস, শাহাদাত হোসেন রুবেল, জিয়াউল করিম নিশান, কাজী মামুনুর রশিদ বাবলু, লাহারকান্দি ইউপি চেয়ারম্যান আশরাফুল আলম, বাঙ্গাখাঁ ইউপি চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান, দিঘলী ইউপি চেয়ারম্যান সালাহউদ্দিন চৌধুরী জাবেদ, চররুহিতা সাবেক চেয়ারম্যান টিটু চৌধুরী, পৌর কাউন্সিলর আহসানুল করিম শিপনের নাম রয়েছে।
এদিকে ৪ আগস্ট দায়িত্বরত পুলিশের কাজে বাধাসহ হামলা চালিয়ে আট পুলিশকে আহতের ঘটনায় আরেকটি মামলা হয়। সোমবার (১২ আগস্ট) সদর থানার থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আনবিক চাকমা বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। এতে উপজেলা চেয়ারম্যান টিপুকে প্রধান করে পৌর মেয়র মোজাম্মেল হায়দার মাসুমসহ ১৮ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত ৭০০ জনকে আসামি করা হয়। এ মামলার আসামিরাও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী।
থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইয়াছিন ফারুক মজুমদার বাংলানিউজকে বলেন, মামলা যেহেতু হয়েছে, আসামিদের গ্রেপ্তারে আমরা অভিযান শুরু করবো।
নিহত শিক্ষার্থীদের ময়নাতদন্তের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আদালত নির্দেশনা দিলে ময়নাতদন্ত করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭০৮ ঘণ্টা, আগস্ট ১৫, ২০২৪
আরবি