নারায়ণগঞ্জ: ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম বলেছেন, যে মৌলিক স্লোগানের ওপর দেশ স্বাধীন হয়েছিল সে কথা আমরা ভুলে গেছি। সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায় বিচার।
শুক্রবার (১৬ আগস্ট) বিকেলে ডিআইটি চত্বরে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান পরবর্তী রাষ্ট্র সংস্কারে পীর সাহেব চরমোনাই ঘোষিত নয়দফা প্রস্তাবনা বাস্তবায়নে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগরের যৌথ উদ্যোগে গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
মুফতি ফয়জুল করীম বলেন, আগামী নির্বাচন পিআর (সংখ্যানুপাতিক হারে) পদ্ধতিতে দিতে হবে। সেখানে দলীয় কোনো ব্যক্তিকে ভোট দেবে না। নির্বাচন হবে শুধু প্রতীকে। জনগণ তার পছন্দের দলীয় প্রতীকে ভোট দেবে। যে দল যত পারসেন্ট ভোট পাবে সে দল নির্ধারণ করবে তাদের মধ্য থেকে কারা কারা সংসদে যাবে। এ রকম হলে দুর্নীতিবাজ বা কোনো খারাপ লোক যদি সংসদে যায় তাহলে পরে জনগণ সেই প্রতীকে আর ভোট দেবে না। সুতরাং দলীয় কোনো প্রভাব থাকবে না।
তিনি আরও বলেন, যারা রেমিট্যান্স যোদ্ধা তাদের যথাযথ সম্মান দিতে হবে। এয়ারপোর্টে তাদের সঙ্গে সুন্দর ব্যাবহার ও সম্মানজনক শব্দ ব্যবহার করতে হবে। স্যার বলে সম্বোধন করতে হবে। তারা দেশের অর্থনীতিকে চাঙা করার জন্য যুদ্ধ করছে। তাদের সব মর্যাদা দিতে হবে। ছাত্রদের রাষ্ট্রীয় খরচে পড়াশোনা করার অধিকার দিতে হবে। স্বৈরাচার পতন আন্দোলনে যারা শহীদ হয়েছেন, বিভিন্ন হত্যাকাণ্ডে যারা জড়িত, অন্যায়ভাবে যারা মানুষকে কারাবন্দি করে আয়না ঘরে নির্যাতন করেছে তাদের বিচার করতে হবে। আগামীতে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করতে হবে।
নয় দফা প্রস্তাবনা
১. অনতিবিলম্বে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় এমন সব রাজনৈতিক দল, পেশাজীবী ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে পরামর্শক্রমে অনুর্ধ্ব ১৫ সদস্য বিশিষ্ট অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করতে হবে। যার মেয়াদ ৬ মাসের বেশি হতে পারবে না।
২. অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কেউ পরবর্তী নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না।
৩. গ্রহণযোগ্য তদন্ত কমিশন ও স্বতন্ত্র ট্রাইব্যুনাল গঠন করে গণহত্যাকাণ্ডের বিচার করতে হবে। একই সঙ্গে গত ১৬ বছরে সংগঠিত সব রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক হত্যাযজ্ঞ, গণহত্যা, গুম ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিচার করতে হবে। তদন্ত সাপেক্ষে আহত-নিহত পরিবারকে ক্ষতিপূরণসহ পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। এক্ষেত্রে যে সব ব্যক্তি বা সংগঠন দোষী সাব্যস্ত হবে, তাদের রাজনীতি ও নির্বাচন থেকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধ করতে হবে।
৪. তদন্ত সাপেক্ষে গত ১৬ বছরে সব দুর্নীতিবাজ ও বিদেশে অর্থ পাচারকারীদের সব সম্পত্তি ক্রোক করে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা করতে হবে এবং বিদেশে পাচারকৃত টাকা ফেরত আনবার উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। বিগত ১৬ বছরে যারা ক্ষমতায় ছিলেন তাদের সম্পদের হিসাব দিতে হবে। সব দুর্নীতি ও টাকা পাচারের শ্বেতপত্র প্রকাশ করতে হবে।
৫. আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, প্রশাসন, বিচার বিভাগসহ প্রজাতন্ত্রের যে সব কর্মচারী আইন, সংবিধান, শপথ লঙ্ঘন করে অপেশাদার আচরণ করেছেন তাদের বিচারের মুখোমুখি করতে হবে।
৬. দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠীর চিন্তা-চেতনা ও অনুভূতির বিরুদ্ধে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে না।
৭. নির্বাচন কমিশনকে পুনর্গঠন করতে হবে এবং অবাধ, সুষ্ঠ গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন পদ্ধতি (চ.জ) চালু করতে হবে।
৮. আওয়ামী দুঃশাসনের বিগত ১৬ বছরে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এদেশের সাধারণ শিক্ষাখাতের মান ও নৈতিকতা। এ ক্ষতি দ্রুত সময়ের মধ্যে কাটিয়ে ওঠার লক্ষ্যে দেশপ্রেমিক শিক্ষাবিদ ও উলামায়ে কেরামের সমন্বয়ে একটি জাতীয় শিক্ষা কমিশন গঠন করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
৯. উলামায়ে কেরাম জাতির ধর্মীয় নেতৃত্ব প্রদান করেন। তারা উম্মাহর ইমাম-আমল রক্ষায় কাজ করেন। সেজন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে উলামায়ে কেরামদের মধ্যে থেকে প্রতিনিধি অবশ্যই থাকতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ০০১৩ ঘণ্টা, আগস্ট ১৭, ২০২৪
এমআরপি/আরবি