ঢাকা, বুধবার, ১২ ফাল্গুন ১৪৩১, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৬ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

মধুর ক্যান্টিনে বুধবার নতুন ছাত্রসংগঠনের সূচনা

ইউনিভার্সিটি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৫১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০২৫
মধুর ক্যান্টিনে বুধবার নতুন ছাত্রসংগঠনের সূচনা ফাইল ফটো

নানা জল্পনা-কল্পনা শেষে আগামীকাল বিকেল ৩টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমম্বয়কদের উদ্যোগে নতুন ছাত্র সংগঠনের আত্মপ্রকাশ ঘটছে।  

সংগঠনটির কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক হতে যাওয়া আবু বাকের মজুমদার ফেসবুকের এক পোস্টে এ তথ্য জানিয়েছেন।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় পেজ থেকেও বিষয়টি জানানো হয়েছে।

সংগঠনটির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক হতে যাওয়া আব্দুল কাদের বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের স্পিরিট এবং শিক্ষার্থীদের অধিকার ও তাদের দাবি-দাওয়াকে সামনে রেখে নতুন ছাত্রসংগঠন আত্মপ্রকাশ করছে। আমরা মনে করছি, শিক্ষার্থীদের দাবি-দাওয়া ও অধিকার আদায়ের বিষয় তাদের কনসার্নেই হতে হবে। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ছাত্ররা অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে। তাদের সঙ্গে নিয়ে আমরা ছাত্ররাজনীতির একটি কাঠামোগত পরিবর্তন আনতে চাই।

তিনি বলেন, বিদ্যমান ছাত্রসংগঠনগুলোর বিপরীতে আমাদের নতুন ধারার সংগঠন হাজির করতে যাচ্ছি। আমরা দেখেছি, বিদ্যমান ছাত্র সংগঠনগুলো তাদের মাতৃসংগঠনের আনুগত্য করে। ফলে তারা যৌক্তিক আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের পাশে থাকতে পারে না। তার অনন্য নজির নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগ। ফলে আমাদের সংগঠনে কোনো মাতৃসংগঠনের লেজুড়বৃত্তি থাকবে না।

এক্ষেত্রে তারা তিনটি বিষয় অনুসরণ করবেন বলে জানান আব্দুল কাদের। তিনি বলেন, প্রথমত, বিদ্যমান ছাত্র সংগঠনগুলোর মাতৃসংগঠন তাদের নেতা নির্বাচন করে। কিন্তু আমাদের সংগঠনে প্রতিবারের সাংগঠনিক কাউন্সিলে অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্র অনুসরণের মাধ্যমে নেতা নির্বাচন করা হবে।

দলের আর্থিক ব্যবস্থা সম্পর্কে তিনি বলেন, দ্বিতীয়ত, অন্য কারো থেকে টাকা নেওয়া হলে তাদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে হয়। তাই আমাদের সংগঠন সদস্যের ফি দ্বারা পরিচালিত হবে। যদি বড় কোনো প্রোগ্রাম নামানোর প্রয়োজন হয়, সেক্ষেত্রে যাদের সঙ্গে এই সংগঠনের আদর্শের সঙ্গে যায়, ওই সংগঠন, সংস্থা বা ব্যক্তি থেকে সেই অর্থ নেওয়া হবে। তবে তা হবে সাংগঠনিক অ্যাকাউন্টে।

সংগঠনের নেতাদের বয়সসীমা সম্পর্কে তিনি বলেন, তৃতীয়ত, ছাত্রসংগঠনগুলোতে অধিকাংশই অছাত্র থাকে। অনেকে ছাত্রত্ব ধরে রাখে, যেন সে মাতৃসংগঠনের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে পারে। সেকারণে আমরা একটি বয়সসীমা নির্ধারণ করেছি। কেন্দ্রের ক্ষেত্রে ২৮ বছর সর্বোচ্চ নির্ধারণ করেছি। এর বেশি বয়সের কেউ এই কমিটিতে থাকতে পারবে না। আর সব ইউনিটের ক্ষেত্রে ব্যক্তির বয়সসীমা হবে স্নাতকে ভর্তি থেকে ৭ বছর পর্যন্ত।

সংগঠনটির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সদস্য সচিবের পদে আসতে যাওয়া মহির আলম বলেন, নতুন ছাত্রসংগঠনের কোনো মাতৃসংগঠন থাকবে না। এটি স্বতন্ত্র ও লেজুড়বৃত্তিহীন হবে। কোনো কাজের জন্য জাতীয় কোনো দলের কাছে কৈফিয়ত দিতে হবে না।

তিনি বলেন, এই সংগঠনটি মধ্যপন্থা অবলম্বন করবে। ফলে এখানে সকল মত ও ধর্মের শিক্ষার্থীরা আসতে পারবেন। কেউ কাউকে বাধা দেবে না।

সংগঠনটি আত্মপ্রকাশের পর ডাকসুর বিষয়ে জোরেশোরেই আলোচনা তুলবে বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, ডাকসু সবার। আমরাও চাই ডাকসু দ্রুত হোক। নতুন সংগঠন আত্মপ্রকাশের পর আমরা এর আলাপ-আলোচনা তুলব।

নেতৃত্বে আসতে যাচ্ছেন যারা
সংগঠনটির শীর্ষ পদে আসতে যাচ্ছেন এমন একাধিক নেতা বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, সংগঠনটির আহ্বায়ক, সদস্যসচিব, মুখ্য সংগঠক ও মুখপাত্র নিয়ে শীর্ষ ৪টি পদ থাকবে। এছাড়াও জ্যৈষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক, জ্যৈষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব পদ থাকতে পারে। এর বাইরে যুগ্ম আহ্বায়ক ও যুগ্ম সদস্যসচিব পদে একাধিক সদস্য থাকবেন। সাধারণত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৮-১৯ বা তার থেকে জ্যৈষ্ঠ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা কেন্দ্রের কমিটিতে যাচ্ছেন। অন্যদিকে ২০২০-২১ বা ২০২১-২২ সহ তুলনামূলক নবীন ব্যাচের শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিটিতে থাকবেন।

তারা জানিয়েছেন, সংগঠনটির কেন্দ্রে আহ্বায়কের দায়িত্ব পাচ্ছেন আবু বাকের মজুমদার। তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সমম্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। যে ৬ জন সমম্বয়ককে ডিবি হেফাজতে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়, তারমধ্যে তিনি একজন ছিলেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আগে তিনি আখতার হোসেন ও নাহিদ ইসলামের নেতৃত্বে গঠিত গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সদস্যসচিব ছিলেন।

কেন্দ্রের সদস্যসচিব পদে আসছেন জাহিদ আহসান। তিনি বর্তমানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে দপ্তর সেলের সম্পাদক। জুলাই অভ্যুত্থানে তিনি সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন। এছাড়া আবরার ফাহাদের স্মরণে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে হামলার শিকার হন। পরে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের সঙ্গে তাকেও গ্রেপ্তার করা হয়।

সংগঠনটির মুখ্য সংগঠক পদে আসছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্বধর্ম ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষার্থী তাহমীদ আল মুদ্দাসসীর চৌধুরী। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিতর্ক সংসদের সহ-সভাপতি। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সমম্বয়ক হিসেবে ভূমিকা রাখেন। তিনি একতার বাংলাদেশ নামে একটি প্লাটফর্মের মুখপাত্র হিসেবেও কাজ করেন।

সংগঠনটির মুখপাত্র হিসেবে দায়িত্বে আসছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শামসুন্নাহার হলের শিক্ষার্থী আশরেফা খাতুন। তিনি আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ২০১৮-১৯ সেশনের শিক্ষার্থী। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে তিনিও সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

এছাড়াও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আহ্বায়ক পদে আসছেন সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের ২০১৮-১৯ সেশনের শিক্ষার্থী আব্দুল কাদের। আব্দুল কাদের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি গণঅভ্যুত্থানের ৯ দফা ঘোষণা করেন; যা আন্দোলনকে একদফার দিকে নিয়ে যায়। এর আগে তিনি গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তি ও ছাত্র অধিকার পরিষদের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সদস্যসচিব পদে আসছেন গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী মুহির আলম। তিনি জুলাই অভ্যুত্থানে সক্রিয় ছিলেন। এছাড়া মুখ্য সংগঠক পদে আসছেন হাসিব আল ইসলাম। তিনি সমম্বয়ক হিসেবে ভূমিকা রাখেন। এর আগে তিনি আখতার হোসেনের নেতৃত্বে গঠিত গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তির সক্রিয় সদস্য ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুখপাত্র হিসেবে আসছেন বাংলাদেশ কুয়েত-মৈত্রী হলের শিক্ষার্থী রাফিয়া রেহনুমা হৃদি। তিনিও সমম্বয়ক হিসেবে ভূমিকা রাখেন।  

বাংলাদেশ সময়: ০০৪২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০২৫
এফএইচ/আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।