ঢাকা, শনিবার, ২৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ০৭ জুন ২০২৫, ১০ জিলহজ ১৪৪৬

জাতীয়

স্বাদে সেরা খুলনার চুইঝাল, কদর দেশব্যাপী  

মাহবুবুর রহমান মুন্না, ব্যুরো এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭:৩৫, জুন ৬, ২০২৫
স্বাদে সেরা খুলনার চুইঝাল, কদর দেশব্যাপী   বেচাকেনায় ব্যস্ত চুইঝাল ব্যবসায়ী

চুইঝাল খুলনার ব্র্যান্ডেড কৃষিপণ্য। স্বাদে ও গুণে এ অঞ্চলের চুইঝাল সবচেয়ে বেশি উন্নতমানের।

এ কারণে দেশে ও বিদেশে এই মসলার ব্যাপক কদর রয়েছে।

রান্নায় যেকোনো মাছ ও মাংসের স্বাদ বাড়াতে চুইঝালের জুড়ি নেই। বিশেষ করে কোরবানির ঈদে চুই ঝালের চাহিদা বেড়ে যায় কয়েকগুণ। অনলাইন থেকেও কেনা যায় খুলনা অঞ্চলের চুইঝাল।

খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, নড়াইল ও যশোর জেলাতেও চুইঝালের আবাদ করা হয়। অপ্রচলিত ফসল হওয়ায় আগে কৃষকের মধ্যে চুইঝাল উৎপাদনের আগ্রহ কম ছিল। এখন বাজারে চাহিদা এবং দাম ভালো পাওয়ায় চুইঝালের বাণিজ্যিক চাষ বাড়ছে।

খুলনার বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, কোরবানির ঈদ উপলক্ষে চুইঝালের দোকানে ক্রেতাদের ভিড়। ভোজনরসিকরা অন্যান্য মসলার সঙ্গে প্রয়োজন মতো ভেষজগুণ সম্পন্ন চুইঝালও কিনছেন। তবে দাম এবার সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে বলে ক্রেতাদের মধ্যে স্বস্তি দেখা গেছে।

বড় বাজারে চুইঝাল কিনতে আসা লিপন লস্কর বাংলানিউজকে বলেন, চুই ছাড়া গরুর মাংস রান্নাই হয় না। যে কারণে কোরবানির গরু কেনার আগে চুইঝাল কিনতে এসেছি।

জিয়াউল হক মিলন নামের এক ক্রেতা বলেন, খুলনার চুইঝাল হলো বাংলাদেশের মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত। পাহাড়ি বা অন্যান্য অঞ্চলের চুইঝাল এর মতো স্বাদ হয় না। চুইঝাল ছাড়া কোনো মাংসের আসল স্বাদ হয় না। খুলনার বাইরে থাকা আত্মীয়-স্বজনদের কোরবানির ঈদের সময় এখান থেকে চুইঝাল পাঠাতে হয়।

বড় বাজারের চুইঝাল ব্যবসায়ী মো. শাহীন ব্যাপারী বাংলানিউজকে বলেন, খুলনা অঞ্চলের চুইঝাল খুবই ভালো। ৩০০ টাকা থেকে শুরু করে বর্তমানে ১২০০ টাকা পর্যন্ত কেজি দরে চুইঝাল বিক্রি হচ্ছে। আঙুলের মতো আকৃতির চুইঝাল ৩০০ টাকা, বৃদ্ধাঙ্গুল আকৃতির ৪০০ টাকা, বাঁশের মতো মোটা আকৃতির ৬০০ টাকা, সুপারি গাছের মতো আকৃতির চুইঝাল ১ হাজার টাকা আর নারিকেল গাছের অর্ধেকের মতো মোটা চুইঝাল ১২০০-১৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। খুলনার ভিক্ষুকরাও কোরবানিতে অনন্ত ২০ টাকার চুইঝাল কেনে। চুইঝাল ছাড়া খুলনার মানুষ গোস্ত খাওয়া বোঝে না।



গল্লামারী বাজারের চুইঝাল বিক্রেতা শঙ্কর বলেন, প্রকারভেদে চুইঝাল কেজি বিক্রি করছি ২০০ থেকে এক হাজার টাকা পর্যন্ত। সব চুইঝালই খুলনা অঞ্চলের।

অনলাইনে দেশব্যাপী চুইঝাল সরবরাহ করছে অনেক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান। কোরবানি উপলক্ষে তাদের বিক্রিও বেড়েছে বহুগুণ।

এ প্রসঙ্গে অনলাইনে চুইঝাল সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ‘উড়া’র স্বত্ত্বাধিকারী শরিফুল ইসলাম হিরণ বাংলানিউজকে বলেন, সারা দেশের ভোজনবিলাসীদের পছন্দের শীর্ষে এখন খুলনা অঞ্চলের চুইঝাল। আসন্ন কোরবানি উপলক্ষে চুইঝালের চাহিদা বহুগুণ বেড়ে গেছে। ইতোমধ্যে ঈদ উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে খুলনার চুইঝালের অর্ডার পেয়ে সরবরাহ করছি।

খুলনার মানুষ আগে শখের বশে বসতবাড়ির আশপাশে চুইঝালের চাষ করতেন। কিন্তু দিন দিন চাহিদা বাড়ায় এখন বাণিজ্যিকভাবে চুইঝালের চাষ হচ্ছে। অনেকে নার্সারির মাধ্যমে চুইঝালের চারা উৎপাদন করে বিক্রি করছেন। খুলনায় সবচেয়ে বেশি চুইঝাল উৎপাদন হয় সশ্যভান্ডার খ্যাত উপজেলা ডুমুরিয়ায়।

ডুমুরিয়ায় বাণিজ্যিকভাবে চুইঝাল চাষ করেন নিউটন মন্ডল। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, মাছের ঘেরের আইলে চুইঝাল চাষ করেছি। ভালো ফলন হয়েছে। কৃষি কর্মকর্তারা সার্বিক তত্ত্বাবধান করছেন। এই চুইগুলোকে ঝুটো চুইঝাল বলে। এর মধ্যে আশ খুব কম। পাহাড়ি চুইঝালের চেয়ে আমাদের চুইঝালের স্বাদ বেশি। কোরবানির সময় শত শত মণ চুইঝাল লাগে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ডিএই) খুলনা আঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, চুইঝাল খেতে যেমন সুস্বাদু, তেমনি এর রয়েছে নানা ভেষজ উপকারিতা। খুলনা বিভাগের খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা ও নড়াইল জেলায় চুইঝাল আবাদ করা হয়। ২০১৯-২০ অর্থবছরে এ জেলাগুলোতে ৮০ হেক্টর জমিতে চুইঝালের আবাদ হয়েছে। মোট উৎপাদন ছিল ২৭৩.৬ মেট্রিক টন। ২০২০-২১ অর্থবছরে এ জেলাগুলোতে ৮৯ হেক্টর জমিতে চুইঝালের আবাদ করা হয়। মোট উৎপাদন ছিল ৩০২.৫ মেট্রিক টন। ২০২১-২২ অর্থবছরে এ জেলাগুলোতে ৯৯.৭ হেক্টর জমিতে চুইঝালের আবাদ করা হয়। মোট উৎপাদন ছিল ৩৪৭ মেট্রিক টন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে এ জেলাগুলোতে ৮০ হেক্টর জমিতে চুইঝালের আবাদ করা হয়। মোট উৎপাদন ছিল ২৭৩.৬ মেট্রিক টন। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এ জেলাগুলোতে ১১৮ হেক্টর জমিতে চুইঝালের আবাদ করা হয়। মোট উৎপাদন ছিল ৪২১ মেট্রিক টন।

এমআরএম/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।