ঢাকা, শনিবার, ৯ ভাদ্র ১৪৩১, ২৪ আগস্ট ২০২৪, ১৮ সফর ১৪৪৬

জাতীয়

প্রতিষ্ঠান নয়, ব্যক্তির দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে: অধ্যাপক মোস্তাফিজুর

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট   | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৩৮ ঘণ্টা, আগস্ট ২৪, ২০২৪
প্রতিষ্ঠান নয়, ব্যক্তির দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে: অধ্যাপক মোস্তাফিজুর

ঢাকা: সিপিডির ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেছেন, প্রতিষ্ঠান নয়, ব্যক্তির দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ব্যাংকিং খাতের সংস্কার শুরু হওয়ায় আমানতকারীদের চিন্তিত হওয়ার কারণ নেই।

ব্যাংক পরিচালনায় পরিবারতন্ত্র কায়েম করা হয়েছিল।

শনিবার (২৪ আগস্ট) রাজধানীর তেজগাঁওয়ের এফডিসিতে আর্থিক খাতে সুশাসন নিশ্চিতকরণ নিয়ে আয়োজিত ছায়া সংসদে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।  

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ। প্রতিযোগিতা শুরুর আগে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নিহত ছাত্র-জনতার রুহের মাগফিরাত কামনা করে দাঁড়িয়ে ১ মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বিগত সময়ে যথেষ্ট আইনি ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশ ব্যাংক সঠিকভাবে কাজ করতে পারেনি। চাকরি হারানোর ভয়ে রাজনৈতিক প্রভাবকে মেনে নিয়ে কাজ করেছে কিছু কিছু কর্মকর্তা, যা কাঙ্ক্ষিত ছিল না। সমাজে আয় বৈষম্য ও বেকারত্ব মানুষকে বিক্ষুব্ধ করে তোলে। সাম্প্রতিক ছাত্র আন্দোলনের পেছনে বহুমাত্রিক বৈষম্য টাইম বোমা হিসেবে কাজ করেছে। কতিপয় বড় শিল্প মালিকদের হিসেবের তথ্য চাওয়ায় ব্যবসায়ীদের উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। প্রতিষ্ঠান নয়, ব্যক্তির দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ব্যাংকিং খাতের সংস্কার শুরু হওয়ায় আমানতকারীদের চিন্তিত হওয়ার কারণ নেই।

তিনি বলেন, ব্যাংক পরিচালনায় পরিবারতন্ত্র কায়েম করা হয়েছিল। বিগত সময়ে রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতায় ব্যাংক থেকে অর্থ পাচার হয়েছে। খেলাপি ঋণের পরিমাণ রেড়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার ব্যাংকিং খাতসহ অন্যান্য সেক্টরে যে সংস্কার করছে, তাকে টেকসই করতে হলে রাজনৈতিক সরকারকে দায়িত্ব নিতে হবে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সুফল পেতে ভবিষ্যতেও তরুণদের সচেতনভাবে দায়িত্ব পালন অব্যাহত রাখতে হবে।

সভাপতির বক্তব্যে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, আমরা দেখেছি গত দেড় দশকে বিগত সরকার দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে চরমভাবে ধ্বংস করে দিয়েছে। ব্যাংক থেকে নামে বেনামে ঋণ গ্রহণ করে ব্যাংকগুলোকে ফোকলা বানিয়েছে। ইসলামী ব্যাংকের মতো একটি স্বনামধন্য ব্যাংককে লুটপাট করে তছনছ করে দিয়েছিল। মেগা প্রজেক্টের নামে মেগা দুর্নীতির খবর এখন সবার মুখে মুখে। জ্বালানি খাতে বিশেষ ব্যক্তিদের অনৈতিক সুবিধা দিয়ে ক্যাপাসিটি চার্জের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করেছে। আর্থিক খাতে যে রক্তক্ষরণ হচ্ছে তা বন্ধ করতে হবে। ঋণ জালিয়াতকারী ও অর্থ পাচারকারীদের বিচারের আওতায় এনে দৃশ্যমান শাস্তির ব্যবস্থা করা উচিত। সরকার আর্থিক খাত নিয়ে যে শ্বেতপত্র প্রকাশ করতে যাচ্ছে আশা করি এতে সব আর্থিক অনিয়ম ও দুর্নীতির তথ্য প্রকাশিত হবে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংককে মেরুদণ্ড সোজা করে দাঁড়াতে দিতে হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বাধীন সত্তা ফিরিয়ে আনা উচিত। স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও সুশাসনের মাধ্যমে রাজনৈতিক সদিচ্ছাই আর্থিক খাতের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পারবে। আমরা খুবই আশাবাদী বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার আর্থিক খাতের শৃ্ঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে তাদের সর্বাত্মক চেষ্টা অব্যাহত রাখবে। এখন শুধু দরকার সব শ্রেণি পেশার মানুষকে অন্তর্বর্তী সরকারকে তাদের কাজে সহযোগিতা করা।

কিরণ বলেন, আমরা ভুলে যাইনি সোনালী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, বেসিক ব্যাংক, ফার্মারস ব্যাংক লুটের কথা। পিপলস লিজিং, হলমার্ক, বিসমিল্লাহ গ্রুপের ঋণ জালিয়াতির ঘটনা। ভুলে যাইনি শেয়ার বাজারে কারসাজির মাধ্যমে কিভাবে লক্ষ লক্ষ মানুষকে পথের ভিখারী করা হয়েছে। আমাদের মনে আছে শেয়ার বাজারে সব হারিয়ে রাজধানীর গোপীবাগে লিয়াকত আলী, আমিনুল ইসলাম স্বপন, চট্টগ্রামের দিলদার হোসেনসহ বহু ক্ষুদ্র ও মাঝারি বিনিয়োগকারীর আত্মহত্যার কথা। আমি মনে করি এগুলো শুধু আত্মহত্যা ছিল না, এগুলো হত্যার শামিল। যাদের কারণে এসব মানুষ আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছিল তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করার এখনি উপযুক্ত সময়।  

বিগত সরকারের ২০১৫ থেকে ২০২৩ এ নয় বছর ব্যাংকগুলো সিএসআর হিসেবে ৭ হাজার ৯৯ কোটি টাকা খরচ করেছে। এর মধ্যে ৩ হাজার কোটি টাকাই প্রদান করেছে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে। সিএসআর এর এ ৩ হাজার কোটি টাকা প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে দিতে বাধ্য করেছিলেন ব্যাংক মালিকদের সংগঠন বিএবি’র সভাপতি নজরুল ইসলাম মজুমদার। যা চেক বা পে অর্ডারের মাধ্যমে দেওয়া হলেও কোথায় ক্যাশ হতো তা কেউ জানতো না। সিএসআর এর অর্থ বঙ্গবন্ধুর ওপর চলচ্চিত্র, শেখ রাসেল—শেখ কামালের নামে ফুটবল টুর্নামেন্ট, মুজিববর্ষ উদযাপন, শেখ মুজিব ম্যারাথন, জাতীয় শোক দিবস, বেগম ফজিলাতুন্নেসা হাসপাতালসহ শেখ পরিবারের বিভিন্ন কার্যক্রমে ব্যবহার করা হতো বলে অভিযোগ রয়েছে। রানাপ্লাজার মর্মান্তিক দুর্ঘটনার পর দেশি বিদেশি অনেক সংস্থা প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ তহবিলে অর্থ প্রদান করে। রানাপ্লাজার এ তহবিলে কত টাকা জমা হয়েছিল এবং তা কোথায় খরচ হয়েছে তা কেউ জানে না। এসব বিষয়ে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত হওয়া প্রয়োজন।

ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির আয়োজনে ‘রাজনৈতিক সদিচ্ছাই আর্থিক খাতে সুশাসন নিশ্চিত করতে পারে’ শীর্ষক ছায়া সংসদে বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন অ্যান্ড টেকনোলজির বিতার্কিকদের পরাজিত করে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটির বিতার্কিকরা বিজয়ী হয়।

প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন অধ্যাপক আবু মুহাম্মদ রইস, ড. এস এম মোর্শেদ, প্রফেশনাল অ্যাকাউন্টেন্ট মো. আব্দুস সাত্তার সরকার, সাংবাদিক দৌলত আক্তার মালা, সাংবাদিক ইকবাল আহসান।  

প্রতিযোগিতা শেষে চ্যাম্পিয়ন দলকে ট্রফি, ক্রেস্ট ও সনদপত্র প্রদান করা হয়।  

বাংলাদেশ সময়: ১৭৩৮ ঘণ্টা, আগস্ট ২৪, ২০২৪
এমএমআই/জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।